Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

2kখােলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৭: সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু কেন খুন হয়েছেন তা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে জানতে চেয়েছেন মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন ও মা শাহেদা মোশাররফ। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ‘পরকীয়া’র কোনো ঘটনা আছে কিনা তাও খুঁজে বের করার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।
তদন্ত কর্মকর্তার ডাকে সাড়া দিয়ে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর ডিবি কার্যালয়ে এসে উল্টো তদন্ত কর্মকর্তার কাছেই মেয়ে হত্যার কোনো কারণ খুঁজে পেয়েছেন কিনা তা জানতে চান তারা। তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানও মিতুর বাবা-মার কাছে জানতে চান তারা মেয়ে হত্যায় কাউকে সন্দেহ করেন কিনা।
চার ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মিতুর বাবা-মার কাছ থেকে সন্তোষজনক উত্তর পেয়েছেন তিনি। এসব উত্তর মামলার তদন্ত কাজে সহায়ক হবে।

এদিকে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম না আসায় বাবুল আক্তারের ওপর খানিকটা ক্ষুব্ধ হয়েছেন তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। এছাড়া মিতু হত্যার মামলা সম্পর্কেও কোনো ধরনের কথা না বলায় বাবুল আক্তারের শ্বশুর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় মিতু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামানের কক্ষে প্রবেশ করেন। এরপর টানা চার ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিতুর বাবা-মাকে।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মিতুর মা শাহেদা মোশাররফ বলেন, মামলা সম্পর্কে তদন্ত কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। আমার মেয়ের স্বভাব-চরিত্র কেমন ছিল তা তদন্তকারী কর্মকর্তা জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, মেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো, পর্দা করতো। বর্তমানে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা, নাতি-নাতনীদের সঙ্গে যোগাযোগ হয় কিনা তা জানতে চেয়েছেন। আমি বলেছি, একজন মেয়ে মানুষকে কারা মারল? কেন মারল? কে মারল? আমরা জানতে চাই। মিতু একজন নিরীহ মেয়ে ছিল। সংসার আর ছেলে-মেয়ে নিয়ে সে ব্যস্ত থাকত। মিতু চাপা স্বভাবের ছিল। অনেক বিষয় আমাকেও বলত না।
তিনি আরও বলেন, মিতুর মোবাইল ফোনটি (যে সিমটি মিতু হত্যার পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি) এখনও সচল থাকার বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। মোবাইল ফোন যার কাছে আছে তার সঙ্গে আমি কয়েকবার কথা বলেছি। সর্বশেষ বুধবারও তাকে আমি মামা ডেকে কথা বলেছি। অপর প্রান্ত থেকে বলেছেন, তিনি একজন সিএনজি চালক, এই নম্বরটি হাতির ঝিলে কুড়িয়ে পেয়েছেন। তিনি মগবাজার আমবাগানের বাসিন্দা বলেও জানিয়েছেন।
মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন বলেন, মিতুকে খুন করার মধ্যে দিয়ে দুই বাচ্চা মা-হারা হয়েছে। আমরা হয়েছি সন্তান হারা। আমরা চাই খুনের মোটিভটা বের হোক। এখানে যেই সম্পৃক্ত থাকুক তাকে খুঁজে বের করা হোক। কার আদেশে এ কাজটা (খুন) হয়েছে তা আমরা জানতে চাই। এটা জানাতে তদন্ত কর্মকর্তার যত সময় লাগে দেব।
তিনি আরো বলেন, মিতু হত্যায় বাবুল আক্তার, বাবুল আক্তারের বংশধর, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য যে কেউ জড়িত থাকুক বা যাদেরই সম্পৃক্ততা থাকুক না কেন তা পুলিশ তদন্ত করুক। মামলার তদন্তের ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট। একটা মেয়ে মানুষ কেন মার্ডার হবে? এব্যাপারে বিভিন্ন মিডিয়ার লোক ছাড়া বিদেশী সংস্থার লোকজন আমার বাসায় এসেছেন। তাদের প্রশ্নও ছিল একটাই। আমাদের প্রশ্নও এটা। তাকে মারবে কেন? তার তো কোনো প্রপার্টি নেই, অ্যাসেট নেই, ব্যাংক ব্যালেন্সও নেই।
তিনি আরো বলেন, এ খুনের নেপথ্যে যদি আমি হই, বাবুল আক্তার হয়, বাবুল আক্তারের বাপ-মা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব হয় কিংবা পরকীয়া প্রেম থাকে সব কিছুই বের করা পুলিশের দায়িত্ব। আর বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারেরও দায়িত্ব আছে। বাবুল আক্তার বলুক তার বউ ভাল ছিল না খারাপ ছিল। আমরা আজকে চট্টগ্রামে আসছি বাবুল আক্তারের উচিত ছিল আমাদের সঙ্গে আসা। বাবুল আক্তারের কাছে আমরা অনেক বার প্রশ্ন করেছি খুনি কে? তোমাকে (বাবুল আক্তার) বের করতে হবে মিতুর খুনীকে। এজন্য আমরা চেয়েছিলাম তার চাকরিটা থাক। সেই এটা বের করুক। এজন্য আমি অনেক জোর তদবির করেছি। কিন্তু রক্ষা করতে পারিনি।
তিনি আরো বলেন, বাবা-মা ভাই-বোন এবং দুই ছেলেকে নিয়ে বাবুল এখন মগবাজারের বাসায় থাকছে। বাবুলের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন সময়ে কথা হয়। কিন্তু মামলার ব্যাপারে তিনি কথা বলেন না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. কামরুজ্জামান বলেন, মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে মিতুর বাবা-মা দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা হয়েছে। মেয়ে (মিতু) কেমন ছিল, তার স্বভাব-চরিত্র কেমন ছিল এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। ‘পরকীয়া’ সম্পর্কের কারনে মিতু খুন হয়েছে কিনা তা আগে থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। মিতুর হারানো মোবাইল সেট উদ্ধারে একটি টিম কাজ করছে। বাকী দুই আসামি মুসা ও কালুকে গ্রেফতারে পুলিশ কাজ করছে। ইতিমধ্যে বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তবে গ্রেফতার করা যায়নি। আমাদের জানা মতে তারা (মুসা-কালু) এখনও দেশে আছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর বাবুল আক্তার, ২২ ডিসেম্বর শ্বশুর মোশাররফ হোসেন, ১ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের মা-বাবাকে, ৮ জানুয়ারি বাবুল আক্তারের খালাত ভাই মফিজকে, ২২ জানুয়ারি সফিউদ্দিন নামে বাবুল আক্তারের অপর খালাত ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান।
গত বছরের ৫ জুন নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয় মিতুকে। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় তিনজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।