খােলা বাজার২৪, শনিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭: ‘সন্তুষ্ট’ শব্দটা উচ্চারণ করলেন বেশ কবারই। তবু বোঝা গেল, পুরো সন্তুষ্ট তিনি নন। ‘প্রাপ্তির আছে অনেক কিছু’ বলেও বোঝালেন, আরও কিছু পেতে চেয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরটা মিশ্র এক অনুভূতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে। প্রথম পরীক্ষাতে ‘ফেল’ হলেও বাংলাদেশ কোচকে তাই তাকাতে হচ্ছে সামনের দিকে। সামনে যে আরও ব্যস্ত ক্রিকেট সূচি!
এ বছর বাংলাদেশ দল যেন ‘এসএসসি পরীক্ষার্থী’। এক পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই দুয়ারে আরেকটি। এ বছর যে একের পর এক বিদেশ সফর আছে। বাংলাদেশ কী করে নিউজিল্যান্ড সফরে ভেঙে যাওয়া আত্মবিশ্বাস জোড়া লাগাবে? কোচ হিসেবে উপায় খোঁজার দায়িত্ব তাঁরই। তবে হাথুরুসিংহে প্রথমেই একটা শর্ত বেঁধে দিলেন—দলে বড় পরিবর্তন আনা যাবে না।
এবারের সফরে যাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের সবাইকেই ছাঁটাইয়ের পক্ষে নন হাথুরু, ‘আমি ওদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট। এটা চূড়ান্ত রকমের বাজে কিছু নয় যে যার থেকে উন্নতি করা সম্ভব না। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক ইতিবাচক দিকই আছে।
যা হয়েছে, তার জন্য সোজা একেবারে ওদের বাদ করে দিতে পারেন না পরের বিদেশ সফরগুলোতে। এই সফরের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাহায্য করবে। এই খেলোয়াড়দের ভবিষ্যতে আরও ভালো করতেও সাহায্য করবে।’
বাংলাদেশ এই সফরের ভুলগুলো থেকে শিখে নিজেকে শুধরে নেওয়ার সময় পাচ্ছে খুব কমই। দেশে ফিরেই মাত্র দিন কয়েকের ছুটি। এরপর ভারতে যেতে হবে টেস্ট খেলতে। মার্চ-এপ্রিলেই শ্রীলঙ্কা সফর।
এরপর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রস্তুতি নিতে আয়ারল্যান্ড। ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। দক্ষিণ আফ্রিকায় কঠিন এক সফর আছে অক্টোবরে। এর মধ্যে আবার অস্ট্রেলিয়ারও দেশে আসার কথা আছে।
এত খেলা, দলে কিছু পরিবর্তন আসবেই। হাথুরুকে যে সব ভেবেই ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে হচ্ছে, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আগ পর্যন্ত ওদের যথাসম্ভব বিশ্রাম দিয়ে রাখতে হবে। কোন খেলোয়াড়দের ওপর চাপ বেশি যাচ্ছে, কাদের বেশি বিশ্রাম দরকার, তাদের কিছু কিছু ম্যাচ থেকে আমরা সরিয়ে রাখব।
আবার কারও কারও আরও বেশি ম্যাচ অনুশীলনের দরকার। তাদের বিসিএলে পাঠানো হবে।’
এই আন্তর্জাতিক ব্যস্ততার মধ্যেই আবার সামনে পিএসএল আর আইপিএল। পাকিস্তান ও ভারতের এই দুই টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলার কথা বাংলাদেশের মূল কজন তারকার।
বিষয়টি আছে হাথুরুর ভাবনাতেও, ‘এটা শরীরের ওপর অনেক ধকল ফেলবে। এই চাপগুলো ওদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সামলাতে হবে। তবে এটা আমরা খেলোয়াড়দের ওপরই ছেড়ে দেব ও কীভাবে সব ঠিক রেখে সব ম্যাচের জন্য নিজেদের ফিট রাখতে পারে।
কোচ মনে করেন, নিউজিল্যান্ড সফরে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি দায়িত্ব নিতে শেখা, ‘অধিনায়ক (তামিম ইকবাল) ওর পারফরম্যান্সের দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়েছে। আমি মনে করি, এর মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া শুরু হলো। খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করাটা অন্যায়। তবে কেবল দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে নিলেই চলবে না, ভুল সংশোধনের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
সেই ভুলগুলোর শীর্ষে আছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস। এই টেস্টের দুই ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসের ভরাডুবি আরও ডুবিয়েছে। অতীতেও দেখা গেছে, দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ যেন গড়বড় করার জন্যই নামে। তাতে নষ্ট হয়ে যায় প্রথম ইনিংসের সব ভিত্তি।
হাথুরুর নোটবইয়েও তা টোকা আছে, ‘কেবল ক্রাইস্টচার্চেই নয়, ওয়েলিংটনের দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটসম্যানরা খারাপ করেছে। এটার নানা কারণ হতে পারে। হতে পারে, ওরা এখনো মানসিকভাবে পুরোপুরি শক্ত নয়। হতে পারে, এটি তাদের শারীরিক ব্যাপার।
হয়তো এমনও হতে পারে, পাঁচ দিন ধরে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলার পুরো সামর্থ্য ওদের নেই। আবার এটি মানসিক ও শারীরিক ব্যাপার না হয়ে অন্য কিছুও হতে পারে।’
সফরে অনেক সুযোগ পেলেও সেগুলো কাজে লাগাতে না পারার হতাশাও আছে কোচের, ‘একটি ম্যাচ বাদে আমরা প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই লড়াই করেছি, জয়ের সুযোগ তৈরি করেছি। সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। এটি খুবই হতাশার। তবে যে কন্ডিশনে খুব বেশি খেলার সুযোগ আমাদের হয় না, সেখানে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করাটাও ইতিবাচক।
হাথুরুকে বেশি পোড়াচ্ছে নিজের সামর্থ্য খেলোয়াড়েরা পারফরম্যান্সে অনুবাদ করতে পারেননি বলে, ‘যদি তাদের ভালো করার সামর্থ্য ও প্রতিভা না থাকত, তাহলে হয়তো এতটা চিন্তিত হতাম না। কিন্তু খেলোয়াড়দের ভালো করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ভালো খেলতে না পারাটা সত্যিই খুব হতাশার।’
তাহলে কি ভালো করতে না পারার কারণটা পুরোপুরিই মানসিক? হাথুরু উড়িয়ে দেননি এই ধারণা, ‘মানসিক ব্যাপার একটা কারণ। তবে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে বসতে চাই। দুর্বলতাগুলোকে খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াই এখনকার লক্ষ্য।