Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

9kখােলা বাজার২৪, বুধবার, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: মাসব্যাপি ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭’ শুরু হচ্ছে আজ বুধবার থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিকাল ৩টায় বাংলা একাডেমি চত্বরে মেলার উদ্বোধন করবেন। একই সময় তিনি ৪ দিনব্যাপী ‘আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭’র উদ্বোধন এবং ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করবেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মীর মশাররফ হোসেনের অমর সৃষ্টি ‘বিষাদ সিন্ধু’র অনুবাদ ‘ওসেন অব সরো’ (Ocean of Sorrow) এবং জার্মানি থেকে প্রকাশিত ‘হানড্রেড পোয়েমস ফ্রম বাংলাদেশ’ গ্রন্থ দু’টি তুলে দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে সম্মানিত বিদেশী অতিথি থাকবেন চীনের প্রখ্যাত গবেষক ও রবীন্দ্র অনুবাদক ডং ইউ চেন, অস্ট্রিয়ার মেনফ্রেড কোবো, পুয়ের্তোরিকোর লুস মারিয়া লোপেজ ও ভারতের চিন্ময় গুহ। ডং ইউ চেন বাংলায় তার বক্তৃতা প্রদান করবেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান গতকাল মঙ্গলবার এসব তথ্য জানান। বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির মূলচত্বর ও একাডেমি সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় ৪ লাখ স্কয়ার ফুট জায়গা নিয়ে গ্রন্থমেলার আযোজন করা হয়েছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, পুরো মেলা প্রাঙ্গণে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গ্রন্থমেলার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশকে ১২টি চত্বরে সজ্জিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, এবার একাডেমি চত্বরে ৮০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৪টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩২৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৪৯টি ইউনিটসহ মোট ৪০৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৬৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলা একাডেমিসহ ১৪টি প্রকাশনা সংস্থাকে মোট ৬ হাজার বর্গফুট আয়তনের ১৫টি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে একাডেমির ২টি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। এ ছাড়া ১শ’ লিটল ম্যাগাজিনকে বর্ধমান হাউসের দক্ষিণ পাশে লিটল ম্যাগাজিন কর্নারে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু কর্ণারকে এবারও বেশ আকর্ষণীয় করে সাজানো হয়েছে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ৬০ ইউনিট নিয়ে গড়া পুরো চত্বরটি নানা রঙ বেরঙের লাইটিংয়ে সাজানো হয়েছে। থাকবে শিশুদের জন্য খেলার সামগ্রী। মাসব্যাপী গ্রন্থমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার থাকবে ‘শিশু প্রহর’। গ্রন্থমেলার বই বিক্রি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি প্রকাশিত বই ৩০% এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যারা বই প্রকাশ করছেন, তাঁদের বই বিক্রি/প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে। মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি স¤প্রচার করবে উল্লেখ করে শামসুজ্জামান খান জানান, মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি স¤প্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে বলেও তিনি জানান। গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দুটো মূল প্রবেশ পথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাহিরের আটটি পথ থাকবে উল্লেখ করে তিনি জানান, এবারই প্রথম সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের সুবিধার্থে একটি নতুন সুপ্রশস্ত গেট নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রন্থমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থারসমূহের নিরাপত্তাকর্মীবৃন্দ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে আড়াইশত ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলায় এবার বেশ কিছু নতুন সংযোজনের কথা উল্লেখ করে শামসুজ্জামান খান বলেন, টিএসসি ও দোয়েল চত্বরের মূল প্রবেশ পথে এলইডি মনিটর স্থাপন করা হয়েছে। এ থেকে মেলা সংক্রান্ত তথ্য জানা যাবে। শারীরীক প্রতিবন্ধী ও বয়স্ক মানুষের চলাচলের জন্য ২০টি হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এবারই প্রথম পাঠক-দর্শনার্থীদের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যোন ও বাংলা একাডেমি উভয় চত্বরে পর্যটনের দু’টি খাবারের স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া শিশু কর্নারে মাতৃদুগ্ধ সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চের সেমিনারের অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সেখানে শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষার জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা হবে। গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে বলে মহাপরিচালক জানান। এবারের বইমেলার প্রথম দিন থেকে আগামী প্রকাশনী নিয়ে আসছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবন্ধ সংকলন ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’। মেলা উদ্বোধনের পরপরই খোলা হবে বইটির মোড়ক, সন্ধ্যা থেকেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য তা পাওয়া যাবে। বইয়ের প্রকাশক ওসমান গনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচিত প্রবন্ধ গ্রন্থটি বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের চিন্তা-চেতনা, মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় বহন করে। যে কারণেই এর গুরুত্ব অপরিসীম। এটি সব মানুষের জন্যই একটি আদর্শ বই; যা রাজনীতি ও সমাজ চিন্তা-ভাবনার জায়গাকে আরও বিস্তৃত করবে। বিগত তিন দশকে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় শেখ হাসিনার বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। যারই এক মলাট রূপ এই বই; যাতে মোট ১৩টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন এমিরেটাস অধ্যাপক, নজরুল গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম। প্রচ্ছদ করেছেন আনওয়ার ফারুক। বইটির গায়ের মূল্য ৩৫০ টাকা। এছাড়া এবার মেলায় স্মৃতিকথামূলক আত্মজৈবনিক রচনা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইয়ের পঞ্চম মুদ্রণ নিয়ে আসছে আগামী। শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কিংবা সরকার প্রধান নন, নিয়মিতভাবে লেখালেখি করে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা পাঠক মহলেও সমান। মেলায় যেকোনো বারই শীর্ষ বিক্রি তালিকায় থাকে প্রধানমন্ত্রীর বই। বিগত সময়ে তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে, সাদা কালো, ওরা টোকাই কেন, দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তাভাবনা, সহে না মানবতার অবমাননা, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা, লিভিং ইন টিয়ারস, পিপল অ্যান্ড ডেমোক্রেসি, আমরা জনগণের কথা বলতে এসেছি (জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণ) এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (বেবি মওদুদের সাথে যৌথ সম্পাদনা)। এদিকে, মেলায় যেকোন ধরনের নাশকতা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবারের বইমেলায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল মঙ্গলবার বাংলা একাডেমি ও বইমেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করে সাংবাদিকদের একথা জানান ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। ডিএমপি কমিশনার বলেন, বইমেলা বাঙালিদের বড় উৎসব। গত বছরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য লেখক, প্রকাশক ও দর্শনার্থী মহল থেকে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ২৪ ঘণ্টা তিনটি স্থানে নিরাপত্তা কর্মীরা কঠোর অবস্থানে থাকবে। বইমেলা, দোয়েল চত্বর, শহীদ মিনার, টিএসসি, শাহবাগ এবং নীলক্ষেত কেন্দ্রিক নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। সেখান থেকেই মূলত তল্লাশি শুরু হবে। সাদা পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, ডগ স্কোয়াড, গোয়েন্দা ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) এবং সোয়াত স্ট্যান্ডবাই থাকবে। আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ২টি প্রবেশ গেট, ১টি বাইরে যাওয়ার গেট; সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৩টি প্রবেশ গেট ও ৩টি বাইরে যাওয়ার গেটসহ পুরো মেলা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে, যা ৩টি কন্ট্রোল রুম থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বাহিনীগুলোকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। এসময় উপস্থিত ছিলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের প্রধান সমন্বয়ক মনিরুল ইসলামসহ পুলিশ কর্মকর্তারা।