খােলা বাজার২৪, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা বাড়ছে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে। পাঁচ বছর ধরে টানা ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে নগদ লভ্যাংশ দেয়া সিকিউরিটিজের সংখ্যা। ২০১৬ সালে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ সিকিউরিটিজ থেকে নগদ লভ্যাংশ পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। ২০১২ সালে ৩৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ড নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। এ সময়ে কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশের হারও বেড়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালে তালিকাভুক্ত ৩৫২টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও বন্ডের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ১৯২টি, আগের বছর যা ছিল ১৭৬। সর্বশেষ বছরে স্টক লভ্যাংশ দেয়া সিকিউরিটিজের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৫, আগের বছর যা ছিল ১৪৬টি। বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেছে ২৮৪টি কোম্পানি, আগের বছর যা ছিল ২৭৮টি। ডিএসইর তথ্যমতে, ২০১২ সালে সিংহভাগ কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের স্টক লভ্যাংশ দেয়। ওই বছর ২৯৮টি তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেয় ১১৬টি ও স্টক লভ্যাংশ দেয় ১৬৫টি কোম্পানি। আর লভ্যাংশ দেয়নি ১৭টি প্রতিষ্ঠান। ওই বছর এজিএম করে ২৪০টি সিকিউরিটিজ। ২০১৩ সালে ৩০২টি সিকিউরিটিজের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেয় ১২৮টি, স্টক লভ্যাংশ দেয় ১৫২টি ও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ২২টি। ওই বছর এজিএম করে ২৫২টি কোম্পানি। ২০১৪ সালে ৩৩২টি সিকিউরিটিজের মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দেয় ১৫৯টি, স্টক লভ্যাংশ ১৪৪টি ও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি ২৯টি কোম্পানি। ওই বছর এজিএম করে ২৬৯টি প্রতিষ্ঠান। আর ২০১৫ সালে এজিএম করা ২৭৮টি কোম্পানির মধ্যে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে ১৭৬টি, স্টক ১৪৬টি। আর লভ্যাংশ দিতে পারেনি ২৩টি কোম্পানি। এদিকে নগদ লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রদত্ত লভ্যাংশের শতকরা হারও বেড়েছে। ২০১৬ সালে এজিএম করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১০০ শতাংশের বেশি নগদ লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২টিতে, আগের বছরে যা ছিল ১০। এ তালিকার অধিকাংশই বহুজাতিক ও সরকারি কোম্পানি। গত বছর ১০০ শতাংশ বা তার বেশি লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে যমুনা অয়েল, পদ্মা অয়েল, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, বাটা সু, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীণফোন, বার্জার পেইন্টস ও গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালে ৫০-৯৯ শতাংশের মধ্যে লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় একটি বেড়েছে। সর্বশেষ বছরে ৫০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেয় আটটি কোম্পানি, আগের বছর যা ছিল সাতটি। এর আগের বছরগুলোতে সংখ্যাটি ছিল যথাক্রমে ৭, ৩ ও ৪। সর্বশেষ বছরে ৩০-৪৯ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ছয়টি বেড়ে ১৪-এ উন্নীত হয়েছে। ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল ৮, ২০১৪ সালে ৯, ২০১৩ সালে ১৬ ও ২০১২ সালে ছিল ১৩। অন্যদিকে ২০-২৯ শতাংশ পর্যন্ত লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা চারটি বেড়ে সর্বশেষ বছরে ২১টিতে উন্নীত হয়েছে। আর ১০-২০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা দুটি বেড়ে ১০১টি থেকে ১০৩টি এবং ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা ৩৩টি থেকে ৩৪টিতে উন্নীত হয়েছে। এদিকে, কোনো লভ্যাংশ না দেয়া কোম্পানির সংখ্যাও আগের বছরে তুলনায় বেড়েছে ডিএসইতে। সর্বশেষ বছরে লভ্যাংশ দেয়নি ৩৫টি কোম্পানি, আগের বছর যা ছিল ২৩টিতে। চলতি বছরে লভ্যাংশ না দেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে বরাবরের মতোই সরকারের খাদ্য ও চিনি শিল্প করপোরেশনের অধীন তালিকাভুক্তি প্রতিষ্ঠান ও পাট খাতের কোম্পানিগুলো রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ইমাম বাটন, আজিজ পাইপ, দুলামিয়া কটন, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, মেঘনা পিইটি, সমতা লেদারসহ বেশ কয়েকটি লোকসানি কোম্পানি। জানা গেছে, উৎপাদনক্ষমতার সদ্ব্যবহার হ্রাসের পাশাপাশি ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ধারাবাহিক লোকসানে রয়েছে এসব কোম্পানি। তবে বিগত বছরের তুলনায় শেয়ারপ্রতি লোকসান ও শেয়ারপ্রতি দায় কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির।
লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা ও নগদ লভ্যাংশের হার বৃদ্ধির প্রবণতাকে শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নগদ লভ্যাংশ প্রদানের মধ্য দিয়ে একটি কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা ও সচ্ছলতার চিত্রটিই প্রতিফলিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. হেলাল উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, নগদ লভ্যাংশ দেয়া কোম্পানির সংখ্যা বৃদ্ধি শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক। নগদ লভ্যাংশ প্রদান কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা প্রমাণ করে। যত বেশি কোম্পানি নগদ লভ্যাংশ দেবে, বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি তত আস্থাশীল হবেন। কোম্পানিগুলো স্টক লভ্যাংশ দিলে শেয়ারপ্রতি মুনাফা ও সম্পদমূল্য কমে যায় এবং এ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই কোম্পানির শেয়ারের আবেদনও কমে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্যান্য দেশে মূলত কোম্পানির ব্যবসা স¤প্রসারণের জন্য বোনাস শেয়ার ইস্যু করা হলেও আমাদের দেশে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটনা ভিন্ন। বোনাস শেয়ার থেকে সংগৃহীত মূলধন কোম্পানি কী কাজে ব্যয় করে, তা বিনিয়োগকারীদের অগোচরেই থেকে যায়। আইপিও তহবিলের মতো বোনাস শেয়ারের অর্থ সদ্ব্যবহার সম্পর্কেও মনিটরিং থাকা দরকার বলে মনে করেন তিনি।