Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

31খােলা বাজার২৪, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ :  বাংলাদেশের সামনে জয়ের জন্য ‘মিশন ইমপসিবল’ এক লক্ষ্য ছুড়ে দিল ভারত। যে লড়াইয়ে অবশ্য ড্র’য়ের কথা ভেবেই মাঠে নামতে হবে টাইগারদের। কেননা, চা বিরতির আগে ভারত ২য় ইনিংসে ২৯ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে। অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন চেতেশ্বর পুজারা (৫৪) ও রবিন্দ্রু জাদেজা (১৬)। ঐতিহাসিক এই টেস্ট জিততে ৪৫৯ রান চাই বাংলাদেশের।
হায়দ্রাবাদ টেস্টে হাতে যে সময় আছে তাতে ম্যাচ বাঁচাতেই লড়তে হবে বাংলাদেশকে। অবশ্য সান্ত্বনা হতে পারে ম্যাচটা অন্তত ইনিংস ব্যবধানে হারছে না মুশফিকুর রহীমের দল। কারণ বাংলাদেশের ১ম ইনিংস থেকে ২৯৯ রান এগিয়ে থেকেও ফলো-অনের রাস্তায় হাটেনি স্বাগতিকরা। কিছুটা চমকে দিয়ে বরং নিজেরাই আবার ব্যাট হাতে নামে। উইকেটে আরো ফাটল ধরিয়ে হয়তো বোলারদের হাতে বল দিতে চাইছেন বিরাট কোহলি। কিন্তু চাপের মুখে থেকেও ভাল বোলিং করছেন টাইগার বোলাররা।
২য় ইনিংসের শুরুটা বেশ ভাল ছিল বাংলাদেশের বোলারদের। তাসকিনের জোড়া আঘাতে কেঁপে উঠে স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইন আপ। তারপর বিরাট কোহলিকে আটকে দেন সাকিব আল হাসান।
দলীয় ১২ রানে প্রথম উইকেট হারায় ভারত। ফিরে যান আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার মুরালি বিজয়। অফ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে মুশফিকের হাতে তুলে দেন ক্যাচ। এরপরই লোকেশ রাহুলকে (১০) সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন সেই তাসকিন। এই পেসারের বলে কাট করতে গিয়ে সেই মুশফিকের গ্লাভসে ক্যাচ।
এরপর আগের ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান কোহলিকে ফেরান সাকিব। ৩৮ রান আসে ভারত অধিনায়কের ব্যাটে। মিডউইকেটে মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। এরপর অজিঙ্কা রাহানেকে (২৮) ফিরে পাপমোচন করেন সাকিব। ৪ রানে তার হাতেই জীবন পেয়েছিলেন এই ভারতীয়।
রোববার টেস্টের চতুর্থ দিন লাঞ্চের আগেই ১ম ইনিংসে ১২৭.৫ ওভারে ৩৮৮ রান তুলে অলআউট হয় টাইগাররা। যা কীনা ওভারের হিসেবে ভারতের বিপক্ষে টাইগারদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দীর্ঘ ইনিংস। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ৬৮৭ রানে ১ম ইনিংস ঘোষণা করে ভারত।
আরো একবার স্রোতের বিপরীতে লড়াই করে গেলেন মুশফিকুর রহীম। অবশ্য ফলো-অন বাঁচানো হয়নি। কিন্তু ঠিকই আপাতত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিতে পেরেছেন টেস্ট ক্যাপ্টেন। অন্য প্রান্তে সঙ্গী থাকলে হয়তো লড়াইটা আরো খানিক ক্ষণ চালিয়ে যেতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত এগার নম্বর ব্যাটসম্যান মাঠে আসায় কৌশল পাল্টে ফেলেন। তাড়াহুড়ো করে রান তুলতে গিয়ে ১২৭ রানে শেষ হয় তার সংগ্রামী সেই ইনিংস।
এটি ক্যারিয়ারের ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে পঞ্চম টেস্ট শতক টাইগার অধিনায়কের। ২৩৫ বল খেলে এই মাইলফলকে পা রাখেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ১২৭ রানে থামেন তিনি। খেলেন ২৬২ বল। ১৬ চার ও দুটি ছক্কার এই ইনিংস খেলার পথে মুশি টপকে যান হাবিবুল বাশারকে (৩০২৬)। টেস্ট এখন তিনি দেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। ওপরে আছেন তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান।
মুশফিককে ফিরিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ৪৫ টেস্টে আড়াইশ’ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েন। টপকে যান অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ডেনিস লিলিকে (৪৮)। ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুততম হিসেবে ২৫০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড এখন অশ্বিনের।
আগের দিন মুশফিককে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এরপরই মেহেদী হাসান মিরাজ। দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসটাই খেলে ফেলেন তিনি। তার ও মুশফিকুর রহীমের ব্যাটেই ফলো-অন এড়ানোর স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। কিন্তু হায়দ্রাবাদ টেস্টের চতুর্থ দিনের প্রথম ওভারেই সর্বনাশ! ভুবনেশ্বর কুমারের সুইং বলটা বুঝে উঠতে পারলেন না। বোল্ড মেহেদী। আগের দিনের সেই ৫১ রানেই ধরেন সাজঘরের পথ। ভাঙ্গে ৮৭ রানের জুটি।
মুশফিককে কিছুক্ষণ সঙ্গ দিয়ে তাইজুল ইসলাম ফিরে যান ১০ রানে। খেলেন ৩৮ বল। তাসকিন আহমেদও লড়েছেন কিছুটা সময়। ৩৫ বলে ৮ রান করে রবিন্দ্র জাদেজার শিকার তিনি। ৩৯ রানের জুটি গড়েন অধিনায়কের সঙ্গে। শেষ পর্যন্ত কামরুল ইসলাম রাব্বি অপরাজিত ছিলেন শুন্য রানে।
আগের দিন রাজিব গান্ধী স্টেডিয়ামে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৮২ রান। অন্য ব্যাটসম্যানরা উইকেটে আসা-যাওয়ার খেলাতেই ছিলেন ব্যস্ত! এরপর রোববার ৬৬ রানে শেষ ৪ উইকেট! তাইতো ব্যাটিং স্বর্গে ঠিকঠাক জবাব দেয়া হল না স্বাগতিকদের। তবু রানটা নেহাত মন্দ হলো না পাহাড়ে চাপা পড়ার পরও।
তারও আগে প্রথম দুই দিনের ৫ সেশনে ব্যাটিং স্বর্গে ভারত রানের পাহাড়ে উঠে বসে। ৬ উইকেট হারিয়ে ১ম ইনিংসে ৬৮৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে তারা। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি করেছেন রেকর্ড গড়া ডাবল সেঞ্চুরি। তার আগে মুরালি বিজয় এবং পরে ঋদ্ধিমান সাহা সেঞ্চুরি করেছেন।
ভারতের এই ইনিংসের সামনে কোনঠাসা বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো ভারতের মাঠে টেস্ট খেলতে গিয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখেই আছে টাইগাররা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ভারত ১ম ইনিংস : ১৬৬ ওভারে ৬৮৭/৬ ইনিংস ঘোষণা (রাহুল ২, বিজয় ১০৮, পুজারা ৮৩, কোহলি ২০৪, রাহানে ৮২, ঋদ্ধিমান ১০৬*, অশ্বিন ৩৪, জাদেজা ৬০*; তাসকিন ১/১২৭, রাব্বি ০/১০০, সৌম্য ০/৪, মিরাজ ২/১৬৫, সাকিব ০/১০৪, তাইজুল ৩/১৫৬, সাব্বির ০/১০, মাহমুদুউল্লাহ ০/১৬)।
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১২৭.৫ ওভারে ৩৮৮/১০ (তামিম ২৪, সৌম্য ১৫, মুমিনুল ১২, মাহমুদউল্লাহ ২৮, সাকিব ৮২, মুশফিক ১২৭, সাব্বির ১৬, মিরাজ ৫১, তাইজুল ১০, তাসকিন ৮; ভুবনেশ্বর ১/৫২, ইশান্ত ১/৬৯, অশ্বিন ২/৯৮, যাদব ৩/৮৪, জাদেজা ২/৭০)।