খােলা বাজার২৪, রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : তোফাজ্জল হোসেন: নরসিংদীতে এক মর্মান্তিক বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখী সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩ জনসহ ১২ জন নিহত এবং ৫ জন গুরুতর আহত হয়েছে। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৭ টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলাব উপজেলার দড়িকান্দী নামকস্থানে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটেছে।
ভৈরব হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ মোঃ মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, নিকলী উপজেলার ছাতিরচর ইউনিয়নের হাওড় এলাকা ছাতিরচর গ্রামের বাসিন্দা হাসান ও মানিক পরিবারসহ অন্যান্যরা দীর্ঘ দিন যাবত ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের বসবাস করে আসছিল। প্রতি বছর তারা ছাতিরচরের একটি গ্রাম্য মেলায় যোগদিতে গ্রামে আসতো। গতকাল রবিবার তারা এই গ্রাম্য মেলায় যোগদেয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে একটি মাইক্রোবাস নিয়ে ছাতিরচরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। মাইক্রোবাসটি বেলাব উপজেলার দড়িকান্দী এলাকায় পৌছলে হঠাৎ সামনের একটি পার্শ্ব রাস্তা থেকে একটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা মাইক্রোবাসটির সামনে পড়ে। মাইক্রোবাসটি সিএনজিটিকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় বিপরীত দিক থেকে অগ্রদূত পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দ্রুত বেগে এসে মাইক্রোবাসটির সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ ঘটে। এতে মাইক্রোবাসটি ধুমড়ে-মুচড়ে যায়।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হাসান (৩৫), তার স্ত্রী হালিমা (২৬), পুত্র ইশান (১২) ও শ্যালিকা জুম্মা (১৬), মানিক পরিবারের মানিক (৫০), তার স্ত্রী মাফিয়া (৪০), পুত্র অন্তর (৭) ও পুত্র বধু শারমিন ফাতেমা (২০), অন্য পরিবারের ভাই বোন নাজমুল (৩৬) ও সাধনা (৪০) এবং ড্রাইভার সহকারী হিরা মিয়া (৪২)’র নাম জানা গেছে। নিহত বাকী ১ জনের নাম ঠিকানা জানা যায়নি।
আহতদের মধ্যে কুতুব উদ্দিনের স্ত্রী ফিরুজা (৩০) ও ফাতেমা বেগম (৩০)কে ও অজ্ঞাতনামা ড্রাইভারকে প্রথমে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ও পরে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। বাকীদের নাম ঠিকানা জানা যায়নি।
কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলি উপলোর ছাতিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: হানিফ ইসলাম সমকাল কে জানান দূর্ঘটনার পর খবর পেয়ে ছাতিরচর এলাকার নিহতদের আত্মীয়স্বজন র্দর্ঘটনার স্থলে এসে লাশ সনাক্ত করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে যায়। বিকেল পৌনে ৪ টায় নিহতদের লাশ গ্রামের বাড়ীতে পৌছে। হাজার হাজার মানুষ নিহতদের লাশ দেখার জন্য ভীড় জমায়। এসময় সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। আত্মীয়-স্বজনের গগন বিদারী চিৎকার ও বুকচাপড়ানো কান্নায় সাধারণ মানুষের চোখ অশ্র“সজল হয়ে উঠে। সন্ধ্যার পর নামাজে জানাজা শেষে গ্রামের গোরস্থানে তাদেরকে দাফন করা হবে।
দুর্ঘটনার পর নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা ম্যজিষ্ট্রেট মো: মোজ্জাম্মেল হক, বেলাব উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা উম্মে হাবিবা, ভৈরব হায়ওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান ও বেলাবো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বদরুল আলম খান ঘটনাস্থল পদিরর্শন করেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কে প্রধান করে এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নরসিংদী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদানের ঘোষনা দেয়া হয়েছে।