Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

monj...................খােলা বাজার২৪, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭:   পহেলা ফাগুনের আগুন লেগেছে সবার গায়ে। নানা রঙে সেজেছে তরুণী। এক বছরের অপেক্ষা ভালবাসা দিবসের কাঙ্খিত দিন। ভালবাসার নামে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার দিন। ভালবাসার ছন্দে নিজেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার দিন। বাংলাদেশে এই ভালবাসা দিবসটির মহানায়ক ভাষা সৈনিক প্রখ্যাত সাংবাদিক, কারানির্যাতিত নেতা শফিক রেহমান। তিনি ভালবাসা দিবসকে এদেশের মানুষের মাঝে আবিষ্কার করেছেন। এখন সেই মরন নেশায় আমরা সবাই ডুবে মরছি। তিনি তার তৎকালীন পত্রিকা যায়যায় দিন পত্রিকার সামনের সড়কের নামকরণ করেছিরেন “লাভ রোড”। আজও লাভ রোড নামেই সেই সড়কটি পরিচিত। যার হৃদয়ে এত ভালবাসা এখন তার হৃদয় থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কারণ তার প্রিয়তমা স্ত্রী সুদূর লন্ডনে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। তিনি আইনের গ্যারাকলে পড়ে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারছেন না। তার লাল গোলাপ টক-শো ও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু এদেশের ১৬ কোটি মানুষ ভালবাসার দিবসের মহা সমুদ্রে ভেষে বেড়াচ্ছে। ফাগুনের প্রথম দিন আমার ছোট ছেলে রনিকে নিয়ে বরিশাল জেলা স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্রে যাচ্ছিলাম। জেলখানার সামনেই দেখলাম অনেকগুলো মানুষ হলুদ শাড়ি পরে, খোঁপায় গোলাপ দিয়ে প্রিয়জনের অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রিয়জনরা কারাগার থেকে আজ মুক্তি পাবেন। তখন হৃদয় থেকে অনুভব করলাম এই ভালবাসা লোক দেখানো নয়। অনেকদিন পর প্রিয়জন কাছে আসার এক সাথেই ফাগুনের আগুন লাগিয়েই তার সামনে হাজির হচ্ছে। জেলখানা গেট পার হতে না হতেই ফুলের দোকানে ভীড়ের সাধারণ পথচারী হাঁটতেই পারছে না। ফুলের দামও আকাশচুম্বী। সেই সাথে এবারই প্রথম বরিশালে ফুলের মেলা শুরু হয়েছে। সেখানেও অনেক তরুণ-তরুণীরা উপস্থিত হয়ে মেলাকে উপভোগ করছে এবং ফুল কিনে প্রিয়জনকে উপহার দিচ্ছে। গত বছর এই দিন ঢাকার বইমেলায় ছিলাম। একদিকে নতুন বইয়ের গন্ধ, অন্যদিকে বসন্তের আগমন। আর রাত পোহালেই ভালবাসা দিবস। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে ভালবাসতে ভুলে গেছি। মা-কে তো ভালই বাসি না। স্ত্রীর দিকে নজর দেওয়ার সময় কই? বান্ধবী ও বন্ধুদের প্রতি নিজেরা এতটাই আকৃষ্ট হয়ে পড়েছি আসল রেখে নকল নিয়ে মাতামাতি। ভালবাসার শব্দটি এখন বর্ণচোরা হয়ে গেছে। “রজকীনি প্রেম, বিকাশিত হেম, কামগন্ধ নাহি তাতে”। এই প্রেম এখন শাহবাগের মিউজিয়ামে বসবাস করছে, নতুবা কবির সাহিত্যের পাতায়। আজকাল কবিরাও অনেক ডিজিটাল হয়ে গেছে। ভালবাসার নামে গা-ছুঁতে চায়। ছুঁতে না পারলে মেজাজ টন টন করে। এই ব্যাধি বড়কর্তা থেকে শুরু করে ঘরের কাজের ছেলেটার পর্যন্ত। স্টার জলসা, জি-বাংলা, সনি টেলিভিশনের দুনিয়ায় আমাদেরকে ভালবাসার মহা সৈকতে ভাসিয়ে দিয়েছে। পরকীয়ার পিএইচডি করার জন্য কারো কাছে কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে না। সত্যিকার যদি আমরা এখন গবেষণা করি বাংলাদেশে পরকীয়া সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। আর তরুণরা বড়দের এই নির্লজ্জ ভালবাসার দৃষ্টিভঙ্গি দেখে নিজেদের মনে করে তারা এখনও অনেক শিশু। আমরা নিজেরও একটি মেয়ে আছে। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। বিগত দিনগুলো ভালবাসার দিবসে মায়ের আঁচলের তলে ছিল। এবার সে বলল- ভার্সিটিতে বিশেষ ক্লাস রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, মেয়ে বড় হয়েছে, আগের মতো বলতেই পারি না- মা, তুমি আজও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেও না। যেটুকু আকার ইঙ্গিতে পারি বুঝিয়ে দেই যত দ্রুত পারো ঘরে ফিরে এসো। ও ঘরে ফিরে না আসা পর্যন্ত আমার আতঙ্ক কিন্তু কাটবে না। আমার মতো অন্য বাবা-মা দের একই অবস্থা। তারপরেও বলব, ভালবাসা দিবস নিয়ে যেভাবে মাতামাতি শুরু হয়েছে একদিন হয়তো দেখে যেতে হবে প্রকাশ্যে ভালবাসার শব্দের মধ্যে নষ্টামি যুক্ত হয়েছে। আবারও আমার প্রিয় মানুষ শফিক রেহমানের কথা মনে পড়ছে। বাংলাদেশে প্রতিদিন কোন না কোন দিবস থাকে। কোন কোন দিন একই দিনে একাধিক দিবস পালিত হয়। এর ফাঁকে তিনি ভালবাসা দিবস কেন আনলেন। একসময় মনে হতো যে, সিনেমার হল তৈরী করেছে সেখানে যারা সিনেমা দেখছে তাদের প্রতিজনের কিছু পাপ তৈরীকারী অটো পেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে যে মসজিদ মাদ্রাসা নির্মাণে সাহায্য করেছে সেখানে যারা নামাজ ও দ্বীনি শিক্ষা গ্রহণ করছে কিছু পূণ্য অটো তার আমলনামায় লিখিত হচ্ছে। কবির ভাষায় বলতে হয়-জন্মিলে মৃত্যু আছে। কোরআনের শাশ্বত বানীও এটি। তাহলে দুদিনের দুনিয়ায় নিজেদেরকে অন্ধকারে নিয়ে ধ্বংস করে কি লাভ? আসুন ভালবাসা দিবসে নিজের মা সন্তান, স্ত্রী কে ভালবাসি। নিজেদেরকে আত্মশুদ্ধি করি। যখন এই কথাগুলো লিখছিলাম ঠিক তখনই পত্রিকার পাতায় দেখছিলাম দেড় বছরের শিশু সন্তান মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। একটি গ্রাম এখন কান্নার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এবারের ভালবাসা দিবসে ব্যাতিক্রম কিছু করি। যা সমাজের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। লেখক মহাসচিব বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি