খােলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৪ফেব্রুয়ারি ২০১৭: ‘আর প্রশ্নফাঁসের সুযোগ নেই’, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার এমন কথা বলা হলেও প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। এসএসসির প্রায় প্রতিটি বিষয়ের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। পরীক্ষার আগের রাতে বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া প্রশ্নের সাথে হুবহু মিলে যাচ্ছে মূল পরীক্ষার প্রশ্ন। আর এতেই যত সন্দেহ। শঙ্কিত অভিভাবকরা।
২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা হল পরিদর্শন শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ানো হয়। একই দিন অভিভাবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, চিরকাল প্রশ্ন ফাঁস হয়ে আসছিল। আমরা তা বন্ধ করেছি। বর্তমানে যে প্রশ্নে পরীক্ষা হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীরা খুশি। তারা আনন্দ উল্লাসের মধ্যে পরীক্ষা দিচ্ছে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ৫ ফেব্রুয়ারি এসএসসিতে বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। তবে পরীক্ষা শুরুর অনেক আগেই ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। অনেকে রাতেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন প্রশ্নপত্রের মূল কপি। এরপর ইংরেজি প্রথমপত্র এবং দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠে।
গত রবিবার ছিল গণিত পরীক্ষা। মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আগের রাতে ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই নেওয়া হয় এসএসসির ঢাকা বোর্ডের গণিতের পরীক্ষা।
একটি ফেসবুক গ্রুপ থেকে মোবাইল নম্বর নিয়ে পরীক্ষার্থী সেজে এক সংবাদকর্মী শনিবার রাতে গণিতের যে প্রশ্ন পেয়েছিলেন, হুবহু সেই প্রশ্নেই গণিতের সৃজনশীল ও এমসিকিউ অংশের পরীক্ষা হয়েছে। এসএসসিতে রবিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গণিত (আবশ্যিক) বিষয়ের পরীক্ষা হয়। দুপুরে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র দেখার পর মিলিয়ে ফাঁস হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তবে এ বিষয়ে গতকাল সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগের সত্যি সত্যিই প্রমাণ মিললে চলতি এসএসসির গণিত পরীক্ষা বাতিল করা হবে। তবে আগে অভিযোগ সম্পর্কে তদন্ত করা হবে। তদন্তে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে পরীক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্ন ফাঁসের সম্ভাব্য বিভিন্ন উত্স আমরা বন্ধ করেছি। এর সফলতাও পেয়েছিলাম। গত দু-তিন বছর ধরে কোনো প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। কিন্তু এখন তীরে এসে তরি ডোবার মতো অবস্থা হয়েছে। সব দিক বন্ধ করে শিক্ষকদের হাতে প্রশ্ন তুলে দিয়েছি। এখন সেখান থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ আসছে। আমরা এ ব্যাপারটি কোনোভাবেই বরদাস্ত করব না। দোষীদের ধরবোই। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, শিক্ষকদের মধ্যে এ রকম অসত্ ব্যক্তির সংখ্যা সীমিত। অসত্ শিক্ষকদের ধরিয়ে দিতে সব শিক্ষকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অসত্ শিক্ষকদের কাছ থেকে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার কথা বলেন।
২০১৪ সালে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠায় আগের রাতে পরীক্ষাটি স্থগিত করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় একই বছরের ১০ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্কালীন অতিরিক্ত সচিব বর্তমানে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
ওই কমিটি বোর্ডের অধীন উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার ইংরেজি ও গণিত (তত্ত্বীয়) দ্বিতীয়পত্রের প্রশ্নপত্র হুবহু ফাঁস হয়েছে বলে প্রমাণ পায়। এ দুটি বিষয়েরই ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের নমুনা পেয়েছিল ফরিদপুর থেকে। তবে ফাঁসের সুনির্দিষ্ট উত্স বের করতে পারেনি কমিটি।
পৌনে তিন মাস তদন্ত করে একই বছরের জুনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল কমিটি। এতে ভবিষ্যতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া ঠেকাতে বেশি সংখ্যক প্রশ্নের সেট ছাপিয়ে পরীক্ষার দিন সকালে লটারির মাধ্যমে সেট নির্ধারণ করে পরীক্ষা নেওয়াসহ চারটি মূল সুপারিশ করা হয়েছিল। ওই সুপারিশের আলোকে কিছু কাজ বাস্তবায়নও হচ্ছিল। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।