Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

ac3006cb4b25f5edf4990bb01214a756-18খােলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: বলা হয়, মানুষের জীবন হচ্ছে সবচেয়ে দামি। পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়ে হলেও মানুষ জীবন রক্ষা করতে চায়। বেঁচে থাকতে চায়। জীবনই যদি না থাকে, তাহলে টাকা-পয়সা সোনাদানা দিয়ে কী হবে? কিন্তু লাকী আক্তারের কাছে কারও জীবনের চেয়ে টাকা-পয়সা, সোনাদানার মূল্য বেশি। তাই তো তিনি সোনার লোভে দুটি শিশুকে প্রাণে মেরে ফেলতে পেরেছেন।

প্রথম আলোসহ দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আজ বৃহস্পতিবার নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের খবরটি ছাপা হয়। পত্রিকাগুলোর খবরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের নামোশংকরবাটীর ভবানীপুর-ফতেপুর মহল্লার দুই শিশু সুমাইয়া খাতুন ও মেহজাবিন আক্তার গত রোববার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বাইরে খেলতে যায়। এরপর তাদের দুজনের কেউ আর বাড়ি ফিরে আসেনি। মেয়ে বাড়ি ফিরে না আসায় সুমাইয়ার স্বজনেরা প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজা শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁরা প্রতিবেশী ভ্যানচালক মো. ইয়াসিনের বাড়িতে যান। সেখানে তাঁর পুত্রবধূ লাকী আক্তারের (২৪) কথাবার্তায় সন্দেহ দেখা দেয়। জোর করে তাঁরা ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালিয়ে খাটের নিচে বস্তাবন্দী অবস্থায় শিশু দুটির লাশ পান।

পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে লাকী জানিয়েছেন, বিভিন্ন এনজিও থেকে তিনি পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু শোধ করতে পারছিলেন না। তাই ওই দুই শিশুর সঙ্গে থাকা ১২ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন ও কানের দুলের লোভেই তাদের অপহরণ করেন। এই দুটি শিশু তাঁর নিজের মেয়ে ইমনের খেলার সাথি। শিশু দুটির কাছ থেকে স্বর্ণালংকার নিয়ে প্রথমে তাদের আটকে রাখেন ফ্রিজের পেছনে। পরে তারা চেঁচামেচি করলে তাদের খাটের বক্সে ঢুকিয়ে রাখেন। এতে দমবন্ধ হয়ে মারা যায় শিশু দুটি। এরপর বক্স থেকে তাদের লাশ বের করে বস্তায় ভরে খাটের নিচে রেখে দেন। শিশুদের কাছ থেকে নেওয়া স্বর্ণালংকারগুলো বিক্রি করে তিনি ২১ হাজার টাকা পান। এ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধও করেছেন।

ভাবা যায়! মাত্র কটা টাকার লোভে কেউ এমন নৃশংসভাবে কাউকে হত্যা করতে পারে? লাকী আক্তার কীভাবে পারলেন এই জঘন্য কাজটি করতে? সুমাইয়া ও মেহজাবিন তো তার নিজের মেয়ের বয়সী। তাদের হত্যা করার সময় কি তাঁর নিজের মেয়ের কথা মনে হয়নি? তার কি ঋণ পরিশোধের আর কোনো উপায় ছিল না? চাইলে কি তিনি বিকল্প কোনো পথ বের করতে পারতেন না?

নিশ্চয়ই পারতেন। লাকী আক্তার হয়তো ভেবেছেন, এটাই সহজ পথ। আসলেই তো শিশুদের খুন করা খুব সহজ। চাইলেই তাদের মেরে ফেলা যায়। এ জন্য বিশেষ কোনো কারণ লাগে না।

হত্যাকাণ্ডের শিকার সুমাইয়ার বয়স ছিল সাত বছর আর মেহজাবিনের ছয় বছর। গোটা জীবনই তো তাদের সামনে পড়ে ছিল। জীবনের রূপ-রস-গন্ধ নেওয়ার আগেই তাদের নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হলো। আহা! কী কষ্টই তাদের হয়েছিল যখন বক্স খাটের ভেতরে তাদের শ্বাস রোধ হয়ে আসছিল।

শুধু সুমাইয়া আর মেহজাবিনই নয়, এ রকম আরও বহু শিশু বড়দের স্বার্থ, লোভ আর হিংসার শিকারে পরিণত হয়েছে। যেকোনো স্বার্থসিদ্ধির জন্য বড়রা শিশুদেরই টার্গেট করে। এই তো গত বছরের ডিসেম্বর মাসের ঘটনা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় রনি নামের আট বছরের এক শিশুকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। তারা রনির বাবার কাছে মোটা টাকার মুক্তিপণ দাবি করে। না পেয়ে রনিকে তারা খুন করে লাশ একটি সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেয়। মাদক নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে জান্নাতুল নামে চার বছরের এক শিশুকে খুন করা হয় গত বছরের অক্টোবরে। জমি নিয়ে বাবার সঙ্গে প্রতিবেশীর বিরোধের গত জানুয়ারি মাসে খুন হয় ১১ বছরের শিশু রিদোয়ান। এ রকম শিশুহত্যার খবর লিখে শেষ করা যাবে না।

লাকী আক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সুমাইয়া ও মেহজাবিনের মা। তাঁদের মতো আমরাও সুমাইয়া, মেহজাবিনসহ সব শিশুহত্যার বিচার চাই। চাই হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।