Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : 1রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১৩২০ মেগাওয়াটের (দুইটি ৬৬০ মেগাওয়াট) দু’টি ইউনিটের নির্মাণ কাজ আগামী মার্চের শেষনাগাদ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের (বি আইএফপিসিএল) কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনোদ ভ্যায়ার। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯১৫ একর জমির মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। মূল প্রকল্পের কাজ শুরুর আগের প্রাথমিক স্থাপনা নির্মাণের কাজও শেষ হয়েছে।
বাসস প্রতিনিধি সরেজমিনে প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, প্রকল্প এলাকা ঘিরে উঁচু বেস্টনী দেয়াল, ৫টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, অফিস, আবাসন, কর্মকর্তাদের ছোট আবাসন ও কেয়ারটেকারদের বাসস্থান নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বি আইএফপিসিএল’র উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিনোদ ভ্যায়ার বাসসকে বলেন, ‘আগামী মাসের শেষ নাগাদ মূল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে।’

মোট ৯১৫ একরের মধ্যে ৪২০ একর জুড়ে বিদ্যুৎ প্রকল্পের মূল কাজ ২০১৯-২০ অর্থবছরে সম্পন্ন হবে বলে আশাবাদ জানান বিনোদ। হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড অব ইন্ডিয়া মূল প্ল্যান্ট নির্মাণ করবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অবশিষ্ট জমিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের আবাসন, স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, কমিউনিটি সেন্টার ও অন্যান্য অবকাঠামো থাকবে।’ সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাসড়ক থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দিকে নতুন ছয় কিলোমিটার সড়ক ধরে শত শত শ্রমিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজের জন্য ছুটছেন। তারা সিমেন্টের ব্লক তৈরি করছেন, জেটি থেকে ইট, পাথরসহ অন্য নির্মাণ সামগ্রী নামাচ্ছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য মূল প্লান্টের পশ্চিম পাশে পশুর নদীতে দু’টি পল্টুন ও জেটি স্থাপন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) অরুণ চৌধুরী বাসসকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঘিরে নিরাপত্তা দেয়াল কনক্রিটের ব্লক দিয়ে তৈরি হবে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রামপাল উপজেলার রাজনগর ও গৌরঙ্গা ইউনিয়নের সাপমারী-কাটাখালী ও কাইগর্দাশকাঠি মৌজার ৯১৫ একর জমির ওপর বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ২০১২ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেড (বি আইএফপিসিএল) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
রামপালের বিদ্যুৎ প্রকল্পটির কারণে সুন্দরবনের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না জানিয়ে বিনোদ বলেন, ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর হবে না। এ প্রকল্পে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজিসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।’ বিশ্বে বনভূমির কাছে বিভিন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হয়েছে জানিয়ে বিনোদ বলেন, ‘এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবন থেকে অন্তত ২১ কিলোমিটার ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।’
এজিএম অরুণ চৌধুরী বলেন, ‘বিপিডিবি ও ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) সমান ৫০ শতাংশ করে মালিকানায় থাকবে। এ প্রকল্পে ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের ৭০ শতাংশ এক্সিম ব্যাংক ঋণ হিসেবে দেবে।’ অরুণ চৌধুরী আরও বলেন, ‘প্রকল্প যদি অন্য কোনও স্থানে তৈরি হয় তাতে আমাদের কোনও দ্বিমত নেই।’
বি আইএফসিএল’র ম্যানেজার (জনসংযোগ) আনোয়ারুল আজিম বলেন, ‘প্রকল্পে আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজি, ৯০২ ফুট চিমনি ও অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।’ প্রতিদিন ১১ হাজার টন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে ব্যবহার হবে এবং এসব কয়লা ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হবে উল্লেখ করে আনোয়ারুল বলেন, ‘ছয় শতাধিক মানুষ সরাসরি ও ১০ থেকে ১৫ হাজার মানুষ পরোক্ষভাবে প্রকল্প থেকে লাভবান হবেন।’ স্থানীয়রা নিজেদের যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের সুযোগ পাবেন বলেও জানান তিনি।
বি আইপিসিএল’র উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) অলিউল্লাহ বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের পর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে, বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। এ জন্য বাংলাদেশ ও ভারত যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রকল্প সুন্দরবনের জন্য ক্ষতিকর নয়, পরিবেশবাদীরা প্রকল্পের বিরোধিতায় যে আন্দোলন করছেন, তা অযৌক্তিক।’
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভেড়ামারা থেকে সুইচ টিপে ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার কয়লাভিত্তিক রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। বাসস।