খােলা বাজার২৪, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : জীবণ যুদ্ধে জয়ী হলেও মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে পরপারে চলে গেলেন নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার কৃতি সন্তান নিভৃতচারী ভাষা সৈনিক নূর আলম খাদেমুল ইসলাম। বয়সের ভারে ন্যুজ হয়ে বেশ কিছুদিন অসুস্থ্য থেকে গত ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬ –তারিখে ৮৭ বছর বয়সে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ১৯৯০ সালে স্ত্রী খালেদা বেগমের অকাল মৃত্যু এবং দুই সন্তান এলাকার বাহিরে অবস্থান করায় মৃত্যুর আগে কিছুটা নিঃসঙ্গ জীবণ যাপন করতেন তিনি। বয়সের ভারে ন্যুজ হলেও তাঁর মনোবল ছিল অটুট। এলাকার একজন বুদ্ধিজীবি হিসাবে তিনি সর্বমহলে সমাদৃত ছিলেন। সে সময়ের একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি হয়েও সারা জীবণ তিনি শিক্ষকতায় পেশায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।
পিতা মৃত খয়ের উদ্দীন ছিলেন এলাকার একজন স্বনামধন্য শিক্ষক ও গুণীজন। ভাষা সৈনিক নূর আলম খাদেমুল ইসলাম ১৯৩০ সালের ১০ ফেব্র“য়ারী নওগাঁ জেলার পতœীতলা উপজেলার গগনপুর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে নজিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৪৮ সালে রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে আই,এ, ১৯৫০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশ করেন।
ভাষা সৈনিক নূর আলম খাদেমুল ইসলাম ১৯৫৩ সালের শেষ দিকে নজিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এর পর নওগাঁর বি,এম,সি কলেজ প্রতিষ্ঠা হলে কিছুদিন সেখানে ১৫০ টাকা বেতনে অধ্যাপনা করেন। দেশ স্বাধীনের পর ধামইরহাটের লক্ষনপাড়া এবং পরে ধামইরহাট সফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯০ সালে অবসর গ্রহণ করেন। শিক্ষানুরাগী ভাষা সৈনিক নূর আলম খাদেমুল ইসলাম এলাকায় শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক অবদান রেখেছেন। তিনি নজিপুর মহিলা কলেজ, আল-হেরা ইসলামী একাডেমী ও গিয়াস উদ্দীন বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ ও গবেষনা একাডেমী প্রতিষ্ঠার জন্য মোট ১একর ১৭ শতক জমি দান করেছেন। মৃত্যুর আগে অসুস্থ্য হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তিনি নজিপুরে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। মৃত্যুকালে তিনি এক পুত্র, এক কন্যা ও অসংখ্য শুভাকাঙ্খি রেখে গেছেন। পুত্র প্রফেসর ডাক্তার এন, এ কামরুল আহসান বাংলাদেশের বিশিষ্ট রক্তনালী ও বক্ষব্যাধি সার্জন। একমাত্র মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন।
দেশ ও জনগণের স্বার্থে এই ভাষা সৈনিক অনেক ত্যাগ স্বীকার করলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন সম্মাননা তিনি পাননি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে নূর আলম খাদেমুল ইসলাম প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন। মৃত্যুর আগে নিজ বাড়িতে তিনি তাঁর শিক্ষা জীবন, ভাষা আন্দোলন ও শিক্ষকতা জীবনের স্মৃতি চারণ করে এই প্রতিবেদকের নিকট এক দীর্ঘ সাাৎকার প্রদান করেন। সাক্ষাৎকারটি সার-সংক্ষেপ এখানে তুলে ধরা হলো।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় আমি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে এমএ করছিলাম। ভাষা আন্দোলনে শহীদ বরকত আমার সহপাঠি এবং খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। ১৯৫২ হতে ২০১৬ সাল এই দীর্ঘ ৬৬ বছরের পথ পরিক্রমায় স্মৃতির খাতা হতে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। ভাষা আন্দোলন ছিল মুলতঃ রাষ্ট্র ভাষার আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নামক যে রাষ্ট্রের জন্ম হলো তা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিভক্ত ছিলো। আমরা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিলাম। পাকিস্তানে মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশই ছিলো বাঙ্গালী। আর আমাদের ভাষাও ছিলো বাংলা। সেই হিসাবে আমরা ছিলাম পশ্চিম পাকিস্তানের লোক সংখ্যার দিক দিয়ে সংখ্যা গুরু। অথচ শাসক গোষ্টির কাছে আমাদের বিমাতা সুলভ আচরণ পেতে হয়েছে।পাকিস্তান সৃষ্টিতে মি. জিন্নাহর অশেষ অবদান থাকায় তাকে পাকিস্তানের জনক বলা হয়। তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল ছিলেন। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পূর্ব পাকিস্থান রেসকোর্স ময়দানে বর্তমানে সোহরার্দি উদ্যানে এসে এক জনসভায় তিনি ঘোষনা দিলেন ”এক মাত্র উর্দ্দূ,উর্দ্দূই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা”। তখন ছাত্ররা একথা ধরে বসলেন। শুধুমাত্র ভাষার কারনে বাঙ্গালীরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হবে এবং রাষ্ট্রীয় সুবিধাদি থেকে বঞ্চিত হবে এমনটা হতে পারে না। তখন মোতাহার হোসেন চৌধুরী, আব্দুল কাশেম ও আবুল মুনসুরের নেতৃত্বে ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন শুরু করলেন । সে সময় রাজনৈতিক নেতা হিসাবে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকও এর প্রতিবাদ করতে লাগলেন।
ভাষা আন্দোলনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা ছিলেন। এ আন্দোলনের তিনি আটক হন ও হাজত খাটেন। সরকারের সাথে ছাত্রদের আলোচনা মাধ্যমে সরকার দাবী মেনে নেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। তমুদ্দিন মজলিশ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা অধ্যাপক আবুল কাশেম ভাষা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতৃত্বের দাবিদার। ১৯৫২ সাল তখন পূর্ব পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নূরল আমিন। তিনি ২১ ফেব্র“য়ারী সংসদ অধিবেশন আহ্বান করলেন। তখনও ছাত্ররা ভুলে যায়নি ভাষা আন্দোলনে কথা। ২১ ফেব্র“য়ারীর আগেই তৎকালীন ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল পার্টি, মুসলিম লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ দলমত নির্বিশেষে সকল ছাত্র সংগঠন মিলে সর্বদলীয় কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট না হয়েই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করনে। এর উদ্দেশ্যে ছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় মর্যাদা দেওয়া। এ উদ্দেশ্য নিয়েই ছাত্ররা সংসদে যেয়ে দাবী জানাবে।
সরকার জানতে পেরে ছাত্রদের এ আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য ঢাকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২১ ফেব্র“য়ারী ১৪৪ ধারা জারী করলেন। তখনই শুরু হলো সত্যিকারের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের নেতারা এর কোন প্রতিবাদ করার সাহস পেলেন না। তবে এ আন্দোলন স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল না। এ আন্দোলন ছিল রাষ্ট্র ভাষা বাংলায় প্রতিষ্ঠা ও অত্যাচার, অনাচারসহ বিভিন্ন দাবী আদায়ের জন্য। নেতারা কেহই ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার পক্ষে মত দিলেন না। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতারা মনে করলেন এ ১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে এবং তাঁরা ধর্মঘটের ঘোষনা দিলেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সম্পূর্ণই ছাত্রদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছিল।২১ ফেব্র“য়ারীর আগের রাতে ছাত্রদের মিটিংয়ের নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই। মিটিং হতে তাঁরা ২১ ফেব্র“য়ারী ধর্মঘটের ডাক দেন। ধর্মঘটকে সফল করার জন্য ২১ ফেব্র“য়ারী ছাত্ররা ১০জন ১০জন করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ভাগ করে নিলেন। সিদ্ধান্ত হয় যারা যে এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন তাঁরা স্ব-স্ব এলাকায় দোকান পাট বন্ধ করে দিবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব দোকানপাট বন্ধ করা হলো। সকাল ১০টায় সকল ছাত্র সমবেত হল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা ১০জন ১০জন করে দলে বিভক্ত হলাম। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার প্রথম দলে আমিও ছিলাম। পরের দলে ছিল নওগাঁর বদলগাছী থানার মৃত সাবেক এম,পি, এ্যাড. আতাউর রহমান তালুকদার । প্রথমেই ছাত্রদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ হতে থাকে। পরে সকল দলগুলির চাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট খুলে দেওয়া হয়। ছাত্রদের ঢল নামে তখন রাস্তায়। গেট পার হয়ে মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্ররা পৌঁছে ইট পাটকেল ছঁড়তে থাকে পুলিশের প্রতি। গেটের আগেই আমিসহ ১০জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে ভ্যানে করে তুলে নিলেন। তখন আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম সংসদ ভবনের দিকে। তখন সংসদ ভবন ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের সামনে। সেখানে যেতে মেডিকেল কলেজ অতিক্রম করতে হতো। তখন ঐ আন্দোলনকে এগিয়ে নেন মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান গুলো। আমাদেরকে আটকের পর প্রথমেই প্রায় পঞ্চাশ জনকে লালবাগ থানায় নেয়া হলো। ঐ দিন বেলা ১০টার পর পুলিশের গুলিতে আমার সহপাঠি বন্ধু বরকত গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। সে ছিল আমার ক্লাশের সবচেয়ে লম্বা। তার বাড়ি ছিল মুর্শিদাবাদে। সে সহজ সরল, অমায়িক, বিনয় শ্যামল বর্ণের ছিল গায়ের রং। তাকে লম্বা ঝুলের সার্ট ও পাজামা পড়তেই বেশি দেখেছি। এর পরই সর্বস্তরের জনতার মাঝে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এতে ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীরাও পিছিয়ে ছিল না। তাদেরকেও গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু ৫/৬ মাইল দূরে পুলিশ ভ্যানে নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর আমাদেরকে লালবাগ থানা থেকে সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হলো। তখন আমাদের সাথে ছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান (শেলী), এ্যাডঃ আতাউর রহমান তালুকদার এবং বিচারপতি নাইম উদ্দিন প্রমুখ। বরকতের এ মর্মান্তিক মৃত্যুর পর আন্দোলন আরও বেগবান হয়ে উঠল। ঐ রাতেই অনেক ছাত্রকেই সন্দেহমূলক ভাবে ছাত্রাবাস থেকে আটক করা হলো। তাঁদের মধ্যে ছিলেন নওগাঁ পতœীতলা থানার গগনপুর গ্রামের মরহুম প্রফেসর আব্দুল খালেক। পরবর্তীতে যিনি দীর্ঘদিন ধরে বগুড়ার এক কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। আন্দোলনে আটক হয়ে আমরা ২৮দিন হাজতে ছিলাম। প্রথমেই একটি বড় ঘরে সবাইকে একত্রে রাখা হলো। আর সেই সময় চারিদিক থেকেই অভিনন্দন আসতে শুরু করল। তখন আমাদেরকে হিরো বলে মনে হতো। ব্যবসায়ীরা চারিদিক থেকে ফল ও অন্যান্য খাবার আমাদেরকে দিতে লাগলেন। শুভাকাংখীদের অনেকেই দাঁত মাজার জন্য ব্রাশ, পেষ্ট ইত্যাদিও দিতে শুরু করলেন। এভাবে সপ্তাহ খানেক চলল। এর পর আমাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে জেল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের রোগীদের মানে খাবার দিতে শুরু করলেন। তখন শীতের সময় হলেও আমাদের ইটের বালিশ ও কম্বল দেয়া হলো। মশার উৎপাত থাকলেও মশারির ব্যবস্থা ছিল না। আমরা হাজতে কবিতা আবৃত্তি, রচনা , নাচ, গান ও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে সময় কাটাতাম।
তিনি হাজতের স্মরনীয় ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, হাজতে কোন প্রস্রাব, পায়খানার ব্যবস্থা ছিল না। রাত্রিকালীন প্রস্রাব পায়খানা একটি কড়াইয়ের মধ্যে করতাম সকালে অন্য লোক তা পরিস্কার করতেন। এজন্য হাজতের এক কোনে কম্বল দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছিল। তবুও বসলেই আমাদের শরীরের উপরের অংশটা দেখা যেত। আমাদের আটকের খবর পেয়ে অভিভাবকরা শান্তনা দিয়ে আসতে লাগলেন। তোমরা চিন্তা করো না, হতাশ হইও না। পাকিস্তান সরকার আমাদের বিচারের জন্য জেল খানায় কোর্ট বসালেন। ছাত্রদের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য একজন ব্যারিষ্টার নিয়োগ করা হলো। তিনি আমাদের শিখিয়ে দিলেন বেআইনী মনে করেছিরাম হেতু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছি। রায়ে উলে¬খ করা হলো “রিলিজড উইথ এ্যাডমনিশান’’ অর্থাৎ মৃদু তিরস্কার করে ছেড়ে দেয়া হলো।
ভাষা আন্দোলন ছিল স্বাধীকারের চেতনা। স্বাধীকারের আন্দোলনের পথ বেয়ে পরে স্বাধীনতার আন্দোলন ক্রমান্বয়ে এসে পড়ল। এরই ফলশ্র“তিতে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে রাষ্ট্রের জন্ম হলো। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, কতকগুলো তরুন রক্ত দিয়েছিল যে বাংলা ভাষার উন্নতি হবে, বাংলা ভাষা রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা পাবে ও মাতৃভাষা মহান রূপ লাভ করবে। নিম্ন শ্রেণীর ভাষা ছিল তার উন্নয়ন হবে। বাংলা রাষ্ট্রভাষা হলো। মর্যাদা পেল। বিশ্বের দরবারে স্বীকৃতি পেল। কিন্তু নিজ দেশে বাংলা এখনও দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাষায় রয়ে গেল। ২১ ফেব্র“য়ারী এসে আমরা শুধুমাত্র বাঙ্গালী হই। এরপর আর কোন খোঁজ থাকে না। আন্তরিকতা শূন্য আনুষ্ঠানিকতা ধারণ করে। এর পিছনে কোন হৃদয়ের ছোঁয়া নেই। যদি থাকত তাহলে বাংলাদেশে এত ইংরেজি কালচার শুরু হতো না। তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেন বিভিন্ন ইংরেজী বাহারি নামের কিন্ডারগার্টেন স্কুল দিয়ে দেশের আনাচে কানাছে ছেঁয়ে যেত না। আমরা আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে বাঙ্গালী আন্তরিক ভাবে নয়। যে কোন মহান আন্দোলনের সাথে নিজেকে অঙ্গীভূত করতে পারা বর্তমান কালের একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে জন্ম না হয়েও অনেকে এখন মুক্তিযোদ্ধার সনদপত্র ধারী ও মহান মুক্তিযোদ্ধা। তেমনি ১৯৫২ সালে অনেক পরে জন্মগ্রহণ করেও অনেকেই রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ভাষা সৈনিক এবং ভাষা চেতনার ধ্বজাধারী। এটা মন্দের ভাল। অপসংস্কৃতি নয়। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, শহীদ মিনারের সামনেই আমার বাড়ি। ভাষা দিবসের আগে মধ্যরাতে ভাষা শহীদদের ষ্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য আমারই ফুলের বাগানের ফুল নিয়ে প্রশাসনসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে গেলেও আমাদের মতো গুটিকয়েক ভাষা সৈনিকের খোঁজ কেউ রাখে না। এটা ভাবতে বড় অবাক লাগে। জীবণের শেষ ইচ্ছা প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ইচ্ছে আছে এলাকায় একটি বধির স্কুল প্রতিষ্ঠা করবো।