খােলা বাজার২৪, সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ : পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সে নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি (রিপ্রেজেন্টেটিভ) এবং ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারের দালালদের দৌরাত্ব, কর্মকর্তা কর্মচারীদের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ওখানকার চিকিৎসাসেবা। উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল ওই স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্সটি ২০১০ সালে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত করা হয়। এর পর থেকে হাসপাতালটি সুনামের সাথে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসলেও বর্তমানে সে ধারাবাহিকতা আর বজায় রাখতে পারেনি। সরেজমিনে হাসপাতালটিতে ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ডাক্তারদের চেম্বারে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। হাসপাতালের মসজিদের সামনে থেকে শুরু করে হাসপাতালের ভিতর পর্যন্ত তাদের মোটরসাইকেলে ভরা। নামাজের সময় মুসল্লি¬দের মসজিদে প্রবেশ করতে বেগ পোহাতে হয়। চেম্বারে রোগীদের বসার চেয়ার থেকে শুরু করে রোগীদের সোয়ার সিট পর্যন্ত তাদের দখলে। এদের বেশিরভাগই মানহীন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি। এদের ভিড়ে রোগীরা ডাক্তারদের কাছে তাদের রোগের কথা খুলে বলতে পারেন না। রোগীরা ডাক্তারের সামনে গেলে তারাই রোগীদের কাছে প্রশ্ন করেন সমস্যা কি, কবে থেকে, কিভাবে হয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এর পর ডাক্তারকে দিয়ে তাদের ঔষধ লেখানোর জন্য চলে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা। ডাক্তারও তাদেরকে খুশি করতে কমপক্ষে ৪/৫ টি কোম্পানির ঔষধ লিখে দেন। ওই দিন আরও দেখা যায় শহীদ স্মৃতি ডিগ্রী কলেজের একাদশ শ্রেনীর এক ছাত্রী ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে বাইরে অপেক্ষামান এক ব্যাক্তি ছাত্রীটির হাত থেকে তার ব্যবস্থাপত্রটি নিয়ে নিজের মোবাইলে ছবি তুলছেন। পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে একটি ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেন। অন্য এক মহিলা রোগী তার পরিক্ষাপত্র নিয়ে যাওয়ার সময় হাসপালের গেটে দাড়িয়ে থাকা ৭/৮ জন মহিলা তার দিকে এগিয়ে আসে। তাদের মধ্য থেকে একজন রোগীর হাত থেকে পরিক্ষাপত্রটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এগিয়ে আসা অন্য মহিলারা রোগীটিকে নিয়ে টানা হেচড়া শুরু করেন। পরে এ নিয়ে নিজেদের মাঝে ঝগড়া একপর্যায়ে হাতাহাতি শুরু হয়। খোজ নিয়ে জানা যায় এরা সবাই এখানকার বিভিন্ন ক্লিনিক ও ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের দালাল। কোন রোগী এর প্রতিবাদ করলে তাকে শুধু দূুর্ব্যবহারই নয় শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করতে উদ্ধত্য হন তারা। হাসপাতালের টিকিটের দায়িত্বে থাকা রাশেধ সিকদার (ওটি বয়) ও সাইফুল ইসলাম (জরুরী বিভাগের হাজিরাকারী) রোগীদেরকে তাদের পছন্দনুযায়ী ডাক্তার দেখাতে হলে ভিজিট দিয়ে ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন। অফিস সময়ে ভিজিট কেন জানতে চাইলে তার সাথে নানা ধরনের কটুক্তি করতে দ্বিধা বোধ করেন না তারা এসময় তাদের সাথে যোগ দেয় ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা। জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে বকশিষ বানিজ্যের অভিযোগ । মেডিকেল এ্যাসিষ্ট্যন্ট (সেকমো) দোলন মৃধাকে দিয়ে চলে শিশু রোগীদের চিকিৎসা। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় উঠতে গিয়ে সিড়িতে নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা দেখা যায়। তৃতীয় তলায় ভর্তি রোগীদের জন্য (ট্রলিতে) করে আনা খাবার নিয়ে দুই মহিলা (আয়া, ঝাড়–দার) দরজায় বসে ডাকাডাকি করছেন কার কার খাবার লাগবে প্লেট বাটি নিয়ে তাড়াতাড়ি আস। হাসপাতালে রোগীদের জন্য একটি মাত্র সরকারি এ্যামবুলেন্স (ভান্ডারিয়া থেকে ধার করে আনা) ও দুটি প্রাইভেট এ্যামবুলেন্স রয়েছে। প্রাইভেট এ্যামবুলেন্সের বিরুদ্ধে রোগীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রোগীদের। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর আহম্মেদ সিকদার জানান, হাসপাতালে এ্যনেস্থেসীয়া ও সার্জনের অভাবে ওটি চালানো যাচ্ছেনা। এছাড়াও এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্র্রাম মেশিন না থাকায় বাইরে দিয়ে এসকল কাজ করানো হয়। বিষয়টি নিয়ে পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. ফখরুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এ্যামবুলেন্সের জন্য মন্ত্রনায়লয়ে আবেদন করা হয়েছে এবং অতি শীগ্রই এ্যামবুলেন্স দেয়া হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সপ্তাহে দু’দিন দুপুর ১ টার পরে ভিজিটের অনুমতি ও কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেটা নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি টিম গঠনের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেগুলো না মানলে তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে । সপ্তাহের কোন কোন দিন ও টিম গঠন বিষয়ে পূনরায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর আহম্মেদ সিকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার দুপুর ১ টার পরে ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের ভিজিটের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন টিম গঠনের কথা বলেছেন কিন্তু সেটা এখনও গঠন করা হয়নি বলে তিনি জানান।