Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

44kখােলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: দুই বাংলার মোহনায় বেনাপোল চেকপোস্টের শুন্যরেখায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একুশে মঞ্চে’ বসেছিল এপার-ওপার বাংলার ‘বাংলা’ ভাষাভাষী মানুষের মিলনমেলা ভাষা দিবসের মিলন মেলা মহাউৎসব।

আজ মঙ্গলবার একুশের সকাল থেকেই গান, আবৃত্তি, নাচ আর দু’বাংলার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-রাজনীতিবিদদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে বেনাপোল আর পেট্রাপোলের শূন্যরেখা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও কয়েক ঘণ্টার জন্য উধাও হয়ে যায় সীমান্তের কাঁটাতার,দু’বাংলার মানুষ শুন্যরেখায় একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মুগ্ধতার চোখে,মেতে উঠে আড্ডায়-স্মৃতিচারণে। এসময় দুপারের মানুষের ঢল নামে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন,কাটা তারের বেড়া আটকাতে পারবেনা কাউকে-দুপারের রক্ত সেতু বন্ধন তৈরী করবে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষার টানে দুই বাংলার হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বেনাপোল চেকপোস্ট নোমান্সল্যান্ড এলাকায়। ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে মঙ্গলবার সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করে দলে দলে মানুষ যোগ দেন ২১ শের মিলন মেলায়।আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি ” এই শ্লোগান নিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধায় মাথানত করতে বাংলাদেশের বাঙালিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও। দুই বাংলার মানুষ, রাজনৈতিক ,সামাজিক, ব্যবসায়ীক ও সংস্কৃতিক দল এবং সরকারের প্রতিনিধিরাও বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ।

বেনাপোল পৌরসভা ও বনগাঁ পৌরসভা এই মিলন মেলার আয়োজন করেন।নো-মান্সল্যান্ডে নির্র্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।

সীমানা পেরিয়ে শুন্যরেখায় পা রাখেন পশ্চিমবাংলার খাদ্য ও সরবরাহ দপ্তরের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাতা বসু,লোকসভার সংসদ সদস্য শ্রীমতি মমতা ঠাকুর,উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রহিমা মন্ডল, বিধানসভার বিধায়ক বিশ্বজিত দাস, বনগাঁ পৌরসভার পৌর প্রধান শংকর আঢ্যসহ ওদেশের রাজনীতিবিদ-কবি-শিল্পী-সাংবাদিক সাহিত্যিকদের একটি প্রতিনিধিদল।এপার থেকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলির সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য্য, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সহিদুল ইসলাম মিলন, সাধারন সম্পাদক শাহিন চাকলাদার,কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক আব্দুল মজিদ, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন,যশোরের ডিসি হুমায়ুন কবীর,যশোর ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান, বেনাপোল শুল্কভবনের কমিশনার শওকাত হোসেন, স্থলবন্দরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল সহ রাজনীতিবিদ-কবি-শিল্পী-সাংবাদিক সাহিত্যিকরা ফুল দিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান।

অনুষ্ঠান সংগীত পরিবেশন করছেন স্বাধীনবাংলা বেতারের শিল্পী খুরশিদ আলম,রথীন্দ্রনাথ রায় ওপারের প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী অর্পিতা চক্রবর্তী, অরুন্ধতী হোম চৌধুরী। বাংলাদেশের কবি আসাদ চেীধুরি,নাট্যকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ও ভারতের কবি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় কবিতা আবৃতি করছেন।

সকাল সাড়ে ৯ টার সময় বেনাপোল-পেট্রাপোল নো-ম্যান্সল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা হয়।অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন।

উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো শতস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। তারা একই মঞ্চে গাইলেন ভাষা শহীদদের স্মরনে বাংলার জয়গান। নেতারা শ্রদ্ধা জানাতে হাতে হাত রেখে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলেন বাংলা ভাষাকে।মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে বেনাপোল চেকপোস্ট নো-ম্যান্সল্যান্ডে এভাবেই কাটালেন দুই বাংলার ‘বাংলা ভাষাভাষী’ মানুষ। একই আকাশ-একই বাতাস, দুই বাংলার মানুষের ভাষা এক। ”আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমাদের প্রাণ কাঁদে। তাই তো বারবার ছুটে আসি দুই দেশের বাঙালি বাংলাভাষী মানুষের পাশে।”

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে যৌথ ভাবে দু’দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যে দিয়ে প্রতিবারের ন্যায় এবারও দিবসটি পালন করছে দুই বাংলার মানুষ। দুই দেশের সীমান্ত এলাকা সহ নানা রং এর ফেস্টুন, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, আর ফুল দিয়ে বর্নিল সাজে সাজানো হয় নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা। ভাষার টানে বাঙালির বাধন হারা আবেগের কাছে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় দু’বাংলার মানুষ।

দু’দেশের সীমান্ত রেখা ভুলে নিরাপত্তা বেস্টনি পেরিয়ে ভাষা প্রেমীরা ছুটে এসে একে অপরকে বুকে জড়িয়ে ধরে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে। ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে মিস্টি বিতরন করে উভয়কে বরন করে নেয়া হয়।দুই বাংলার মানুষের এ মিলনমেলায় উভয় দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে উৎসাহের সৃষ্টি হয়। ফুলের মালা ও জাতীয় পতাকা বিনিময় করে উভয় দেশের আবেগপ্রবণ অনেক মানুষ। বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে ঢল নামে হাজার হাজার মানুষের। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তব্ধ হয়ে যায় আন্তর্জাতিক সীমারেখা।

ভাষা দিবসের মিলনমেলায় বিজিবি বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। এরপর দু’দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদ্যাপন করে যৌথভাবে। এ সময় ভাষার টানে বাঙালির বাঁধনহারা আবেগের কাছে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় দুই বাংলার মানুষ। এর মধ্যদিয়ে বোঝা গেল রফিক, শফিক, বরকত ও সালামের তরতাজা রক্ত বৃথা যায়নি। ভাষার আকর্ষণ ও বাঙালির নাড়ির টান যে কতটা আবেক ও প্রীতিময় হতে পারে তা বুঝিয়ে দিল মহান একুশে ফেব্রুয়ারি।

সমগ্র অনুষ্ঠানে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা। সীমান্ত টপকে যাতে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বিজিবি ও বিএসএফ ছিল সর্বদা সতর্কাবস্থায়। অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।