খােলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: শ্রীনগর ভূমি অফিসে অন্যান্য দিনের মতো মিস কেসের শুনানী চলছে। বিচারকের আসনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা শারমিন। মামলার বাদী ষাটোর্ধ ৩ বোন ও বিবাদী তাদেরই ছোট ৪ ভাই। বিবাদীরা বোনদের অস্বীকার করে দাবী করছেন বাদীদেরকে তারা চিনেননা। যে ভাইদের কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন হাতে তুলে খাইয়েছেন, সম্পত্তির লোভে তারাই এখন রক্তের সম্পর্ককে অস্বীকার করছেন। এই বিষয়টিই ৩ বোনের কাছে অনেক কষ্টের হয়ে উঠে। বিচারকের সামনেই তারা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
দীর্ঘ শুনানীর পরে ৩ বোন প্রমাণ করতে সক্ষম হন ভাইদের সাথে তারাও একই বাবার ঔরষজাত সন্তান। এসিল্যান্ড দিলরুবা শারমীন ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে করা ১২ বছর আগের ২ একর ৮১ শতক জমির ৪ টি নামজারি বাতিলের আদেশ দেন এবং ৩ বোনকে তাদের নামে নামজারির করার জন্য আবেদনের পরামর্শ দেন। এতে ১২ বছর পর ৩ বোন তাদের বাবার সম্পত্তিতে নিজেদের অধিকার ফিরে পেলেন।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানায়, ৪ ছেলে ও ৩ মেয়ে রেখে দোহার উপজেলার বেথুয়া গ্রামের ওয়াজউদ্দিন মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর ১২ বছর আগে ৪ ভাই সোহরাব, নুরুল ইসলাম, শাহ আলম ও লুৎফর তাদের ৩ বোন চন্দ্রবান, তুরবান ও আলেয়াকে বাদ দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জালিয়াতি করে ওয়ারিশ সার্টিফিকেট নিয়ে শ্রীনগর উপজেলার বাঘড়া মৌজার ২ একর ৮১ শতক জমি ৪ টি মোকাদ্দমায় নামজারি করে নেন। এক যুগ পর ষাটোর্ধ তিন বোন ভাইদের জালিয়াতির খবর জানতে পেরে সাহস নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন এবং শ্রীনগর উপজেলা ভূমি অফিসে ২০১৫ সালে নামজারি গুলো বাতিল করার জন্য তৎকালীন এসিল্যান্ড রমেন্দ্র নাথের বরাবর মিসকেস দায়ের করেন। যা পর্দানশীন ৩ বোনের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জ। মিসকেস দায়েরের পর অনেকগুলো তারিখ পার হয়ে গেলেও কোন সুরাহা না হওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পরেন।
গত বুধবার তাদের নির্ধারিত শুনানির দিন বিষয়টি এসিল্যান্ড দিলরুবা শারমিনের নজরে আসে। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে দুই পক্ষের শুনানী নেন। বিষয়টি গুরত্বের সাথে নিয়ে এসিল্যান্ড তাৎক্ষনিক ভাবে ভাইদের নামে করা ৪ টি নামজারি বাতিল করে দেন। এসিল্যান্ডের কার্যালয়ে উপস্থিত ৩ বোন অনেকদিন পর তাদের অধিকার ফিরে পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পরেন।
এ ব্যাপারে শ্রীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিলরুবা শারমিন বলেন, অধিকার বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা এসিল্যান্ড ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমার দায়িত্ব। মুসলিম ফরায়েজি আইন অনুসারে বোনের প্রাপ্য অংশ তাকে বুঝিয়ে না দেয়াটা ভাইয়ের জন্য অপরাধ। তাছাড়া ওয়ারিশ সনদ যেহেতু ইউপি চেয়ারম্যান সরবরাহ করেন, তাই তাদের আরো সতর্কতার সাথে যাচাই করতে হবে। চার ভাইয়ের নামে সম্পাদিত চারটি নামজারী বাতিল করে বঞ্চিত তিন বোনের নামে প্রাপ্য অংশ নামজারী করে দেয়ার প্রক্রিয়া নেয়া হয়েছে। রাজস্ব আদালতের ক্ষমতার মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।