খােলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিডিআর ট্রাজেডি স্মরণে অনেক আগে থেকেই ২৫ ফেব্রুয়ারী রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা উচিত ছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের আত্মীয়-স্বজনের বাইরে অন্য কোনো কিছুতে জাতীয় শোক পালনে রাজি নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অনেক রথী-মহারথী বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, প্রত্যেকটি বিদ্রোহের ঘটনা সফলভাবে দমন করা গেলেও বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা দমন করা যায়নি। কারণ, পরিকল্পনাকারীরা আগেই আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে আসে। মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম আজ শুক্রবার সকালে তোপখানাস্থ শিশুকল্যাণ মিলনায়তনে বিডিআর ট্রাজেটির ৮ম বার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাপ চেযারম্যান জেবেল রহমান গানি’র সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া। নগর সদস্য সচিব মোঃ শহীদুননবী ডাবলু’র সঞ্চালানায় আলোচনায় অংশগ্রহন করেন এনডিপি চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, কল্যাণ পার্টি মহাসচিব এম.এম আমিনুর রহমান প্রমুখ।
দেশে বর্তমানে ‘স্বৈরতন্ত্র’ চলছে বলে অভিযোগ করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বলেন, বাংলাদেশে এখন আইনের শাসন, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার বলে কিছু নেই। দেশ এখন একটি দলের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে গেছে। কিন্তু দেশবাসী কখনো কোনো স্বৈরাচারকে সহ্য করেনি। তাই বর্তমান স্বৈরাচার সরকারকেও বেশিদিন সহ্য করবে না। জনগণের আন্দোলনের মুখেই তাদের পতন ঘটবে। বিডিআর ট্রাজেডি স্মরণে ২৫ফেব্রুয়ারীকে ‘জাতীয় শোক ও শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার দাবীর প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনার পেছনে নেপথ্য শক্তি হিসেবে কারা কাজ করেছে, তা এখনো উদঘাটিত হয়নি। ফলে মূল পরিকল্পনাকারিরা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা বলেন, জাতি জানতে চায়, পিলখানা ট্রাজেডির মূল পরিকল্পনাকারী তথা নেপথ্যের নায়ক এবং অর্থলগ্নিকারী কারা এবং তারা কোথায়, কোন উপগ্রহে থাকে? তাছাড়া এটি কি শুধু বিদ্রোহ না পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।
খায়রুল কবির খোকন বলেন, বিডিআর ট্রাজেডির আট বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা ওই ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারীদের ধরতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছি, যদিও বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় ওই বাহিনীর সদস্যদের বিচার হয়েছে।
এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেছেন, ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়নি, দেশি-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। তাই স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও জাতীয় ঐক্যের প্রশ্নে আমাদেরকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মূলপ্রবন্ধে ন্যাপ মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বলেছেন, ২০০৯ সালের এই দিন ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নাটক মঞ্চস্থ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-র্সাবভৌমত্ব রক্ষার অতন্ত্র প্রহরী দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে বাংলাদশকে একটি অর্কাযকর রাষ্ট্রে পরিনত করার চক্রান্ত শুরু হয়েছিল। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের র্দীঘ প্রায় ২০০ বছররে ঐতিহাসিক বিডিআর চেতনাকে ধ্বংস করেছে। ১৯৭১‘র মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ২৩ র্মাচ যে বাহিনী প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করছেলি সেই বাহিনীকে করেেছ কলঙ্কিত। শুধু বাংলাদেশ নয়, সম্ভবত পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম এতজন সেনাকর্মকর্তাকে নারকীয় হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানায়। তিনি আরো বলেন, আজ প্রয়োজন আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য। দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্বে উঠে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা ক্ষমতায় টিকে থাকার মোহমুক্ত হয়ে সবাই সবাইকে নিয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিয়োজিত হওয়া, নিবেদিত হওয়া। মনে রাখতে হবে দেশ থাকলে সবাই থাকবেন। যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন হয় তার ক্ষয় নাই, পরাজয় নাই। আজ প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারন করে ঐক্যবদ্ধ ভাবে ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানা ট্রাজেডি থেকে শিক্ষা গ্রহন করে জাতীয় এজেন্ডা নির্ধারন করা।
সভাপতির বক্তব্যে জেবেল রহমান গানি বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারী ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের যে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল, সেটি যে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপর চরম আঘাত ছিল- তা আজ দিবালোকের মতো স্পষ্ট। স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার যে চক্রান্ত, ২৫ ফেব্রুয়ারী সেই চক্রান্তেরই নগ্ন বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আর ওইদিন ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার মাধ্যমে যে বিপুল ক্ষতি সাধিত হয়েছে, তা পূরণে বাংলাদেশের ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লেগে যাবে। তিনি আরো বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিডিআর সদস্যদের বিচার হলেও ওই ঘটনার নেপথ্যে যারা ছিল তাদের কোনো বিচার হয়নি, তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে। তাদেরও বিচার করতে হবে।
বিডিআর ট্রাজেডি স্মরণে ২৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয়ভাবে শোক পালনের পাশাপাশি ‘শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণার জোর দাবি জানিয়ে জেবেল রহমান গানি বলেন, আশা করব, সরকার ২৫ ফেব্রুয়ারী জাতীয়ভাবে শোক পালন করবে এবং ওইদিন এমন কোনো কর্মকান্ড পরিচালনা করবে না, যাতে শহীদদের আত্মা কষ্ট পায়।