খােলা বাজার২৪, রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ইং রবিবার বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ এক বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান সরকার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যই শুধু বিইআরসি নয়; অনেক প্রতিষ্ঠানেই গণশুনানীর আয়োজন করেছে। কিন্তু দিন দিন এই গণশুনানী হাস্যকর রূপ ধারণ করেছে। এসকল গণশুনানীর বিরুদ্ধেও গণশুনানীর প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। গত ০৭ই আগষ্ট ২০১৬ ক্রয়মূল্য নির্ধারণের জন্য বিইআরসি একটি গণশুনানীর আয়োজন করে। এ গণশুনানী চলে ১৮ই আগষ্ট ২০১৬ পর্যন্ত। গণশুনানীতে যেসকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে তারা সকলেই বর্ধিত মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবকে যুক্তিসঙ্গত নয় বলে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। আমাদের সংগঠনও গত ১৮ই আগষ্ট ২০১৬ এই গণশুনানীর বিরুদ্ধে একটি গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে ও কিছু সুপারিশ তুলে ধরে। যেমন, গণপরিবহন ও ব্যক্তি পরিবহনের জন্য সিএনজির আলাদা দাম নির্ধারণ, আসাসিক এলাকা ভেদে মিটারযুক্ত চুলার মূল্য নির্ধারণ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ডোমেষ্টিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা, তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতি ৬ মাস পর পর আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল বাধ্যতামূলক করা, গ্যাস খাতে ৫৫% শুল্ক ও ভ্যাট কমিয়ে আনা, তিতাসের এফডিআরের ৮ হাজার কোটি টাকার লভ্যাংশ কোথায় ব্যয় হয়? তা প্রকাশ করা, তিতাসের ২৫% যে পাবলিক শেয়ার হোল্ডারগণ তারা শেয়ার বাজারে ধ্বসের ফলে কতটুকু ক্ষতিপূরণ পেয়েছে এবং এই মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবনায় তাদের মতামত আমলে নেয়া সহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
আমরা এক সময় জানতাম দেশ গ্যাসের উপর ভাসছে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে গ্যাস শেষ হয়ে আসছে! প্রকৃত পক্ষে কোন সমীক্ষা বা গবেষণা ছাড়াই বর্তমান কূপ থেকে সরবরাহ কমার ফলে ধারণা ভিত্তিতে এ ধরনের মন্তব্য সরকারের মন্ত্রীদের মুখে মানায় না। তাই অতিশীঘ্রই সারাদেশে সমীক্ষা চালিয়ে জাতিকে জানানো কি পরিমাণ গ্যাস আমাদের দেশে প্রকৃত পক্ষে রয়েছে।
দুর্নীতির চিত্র:
গত ১৮ই আগষ্ট ২০১৬ইং তারিখ থেকে আমরা পর্যবেক্ষণের নেমে দেখতে পাই গ্যাস খাতে লুটপাট। সেই সাথে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও লুটপাটের ভয়াভহ চিত্র। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ধনিয়া, শ্যামপুর, কদমতলী, মৃধাবাড়ী, ডেমরা, সিদ্ধেশ^রী, শানারপাড়, পাগলা ও চিটাগং রোডের বিভিন্ন ছোট, বড় ও মাঝারী শিল্পকারখানায় দু’ধরনের সংযোগ রয়েছে। একটি কমার্শিয়াল ও অন্যটি ডমেষ্টিক। এসকল প্রতিষ্ঠান ডমেষ্টিক সংযোগের সাথে কমপ্রেসার বসিয়ে কারখানা চালাচ্ছে। আবার অনেক কারখানায় কমর্শিয়াল সংযোগই নেই। সেখানে এ জাতীয় কারখানা ডমেষ্টিক লাইন দিয়ে চালানো হচ্ছে। আর এসকল কর্মকান্ড তিতাস কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। তারা এসকল প্রতিষ্ঠান থেকে মাসিক চুক্তিতে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা বা তারও বেশি আদায় করে থাকেন। মাঝে মাঝে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন এর ভাগ নিয়ে থাকেন। অন্যথায় এদেরকে হয়রানির ভয় বা গ্রেফতারের ভয় দেখানো হয়। যদি প্রকৃত পক্ষেই এসকল প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার সঠিক রাজস্ব আদায় করতে পারতো তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব এখান থেকে আসতো। আর এখান থেকেই এ সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বোনাস প্রদান করতে কোন অসুবিধা হতো না। এসকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি ঢাকাতেই সরকারকে ভুল বুঝিয়ে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমাদের দাবি এসকল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনতি বিলম্বে বিচারের আওতায় আনা হোক। মুষ্টিমেয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে দেশের ১৬ কোটি জনগণ দুর্ভোগ পোহাতে পারে না।
শুধুমাত্র রান্নার চুলার গ্যাসের লাইনের মূল্যই বৃদ্ধি করা হয়নি; মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে সিএনজি চালিত গ্যাসের দাম, বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দাম, সার কারখানার গ্যাসের দাম ও বাণিজ্যিক শিল্প-কারখানার গ্যাসের দাম। এর ফলে পরিবহন খাত, কৃষি উৎপাদন, বাণিজ্যিক ও রপ্তানীতে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। সেই সাথে সাধারণ মানুষের জীবীকার ব্যয়ভার তিন থেকে সাড়ের তিন হাজার টাকা বৃদ্ধি পাবে।
বিগত দিনে সরকার ১৪ লক্ষ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধির ফলে বাকি ১৬ কোটি মানুষেরই জীবনের ব্যয়ভার বৃদ্ধি হয়েছে। সাধারণ মানুষ এই ব্যয়ভার আর বইতে পারছে না। এর মধ্যে আবার সরকারের এ মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনজীবন চরম দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। সরকারের যে লক্ষ্য এসডিজি বা মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া তা অনেকাংশেই বাঁধাগ্রস্ত হবে বলে আমরা মনে করি। তাই এই বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই।