খােলা বাজার২৪, সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের বৃহত্তর লাকসামের ৪টি উপজেলায় শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে যত্রতত্র গড়ে উঠা সরকারী-বেসরকারী হাসপাতাল, প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, চিকিৎসকদের চেম্বার ও ফার্মেসীগুলোর সামনে নানাহ ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটিভদের মোটর সাইকেলের বহর আর বাজেট অধিবেশনে যাওয়ার মত ব্রিপকেইস কিংবা ফাইলবক্স নিয়ে আনাগোনায় ভাবিয়ে তুলেছে এলাকার মানুষকে। ওইসব প্রতিনিধিদের দৌড়ঝাপে জানান দিচ্ছে এ অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই যেন নানাহ রোগে অসুস্থ্য।
স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকদের সহায়তায় ঔষুধ কোম্পানীগুলোর আগ্রাসী মার্কেটিং কৌশলে অপ্রয়োজনীয় ঔষুধের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম বর্হিভূত। অসাধু চিকিৎসকরা নানাহ লোভে পড়ে বিক্রয় প্রতিনিধিদের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এলাকার অশিক্ষিত ও সাধারন রোগীদের ভেজাল এবং নিম্নমানের ঔষুধ ক্রয়ে বাধ্য করছেন। প্রতিদিন ওইসব প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকদের চেম্বার থেকে রোগীরা বের হতে না হতেই শুরু হয় বিক্রয় প্রতিনিধিদের দৌঁড়াদৌড়ি। এতে রোগী কিংবা স্বজনদের পড়তে হয় মারাত্মক বিপাকে। চিকিৎসকদের স্বাক্ষাত কিংবা উপহার দিতে মহড়া চলে ঘন্টার পর ঘন্টা মার্কেটিং প্রতিনিধিদের। ঔষুধ কোম্পানীগুলোর মার্কেটিং কৌশলের নামে চলছে বেপরোয়া বানিজ্য ও অসুস্থ্য স্বাস্থ্যসেবা।
এলাকায় অসংখ্য কোম্পানীর প্রতিনিধিরা মাসিক টার্গেট বাড়াতে চিকিৎসকদের পিছনে বিনিয়োগ করছেন দু’হাতে। রোগীর ব্যবস্থাপত্রে চিকিৎসকরা কোন কোন কোম্পানীর কি ঔষুধ লিখেছে তা দেখানো নিয়ে রোগীদের সাথে ঔষুধ কোম্পানী প্রতিনিধিদের ঘটে যাচ্ছে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা। ওইসব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রোগী সমাগম দেখে ওইসব প্রতিনিধিরা লোভনীয় অফারে চিকিৎসকদের কলম, পেড, চাবির রিং, টিভি, ফ্রিজ ও আসবাবপত্রসহ মোটা অংকের পকেট বানিজ্যে ঔষুধ ক্রয়ের নামে রোগীদের সাথে প্রতারনা করছেন।
অপরদিকে ইতিমধ্যে মানসম্পন্ন ঔষুধ উৎপাদনে ব্যর্থ ২০ কোম্পানীর সকল ঔষধ ও ১৪ কোম্পানীর এন্টিবায়োটিক উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই ৩৪ কোম্পানীর মধ্যে সরকার ইতিমধ্যে ১১ কোম্পানীর লাইসেন্স বাতিলসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। আবার ২/৩টি কোম্পানীর জিএমপি সনদ আছে বলে গুঞ্জন থাকলেও চলছে নানাহ গুঞ্জন। এছাড়া বাজার মনিটরিং না থাকায় এবং হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা শর্তেও এলাকার ফার্মেসীগুলোতে ওইসব কোম্পানীর ঔষধ বিক্রি এবং লোভী চিকিৎসকরাও কমিশন বানিজ্যের কারনে রোগীদের প্রেসক্রিপশন লিখে কিনতে বাধ্য করছেন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের নিরব ভূমিকায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি মারাত্মক হয়ে উঠেছে।