Tue. Jun 17th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪, বুধবার, ১ মার্চ ২০১৭ :  36জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী একটি নদী বিধৌত বন্যাকবলিত উপজেলা। এ উপজেলার পৌরসভাসহ ৮টি ইউনিয়নের বেশীরভাগ এলাকায় প্রতি বছর হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয় বন্যায়। যারফলে চর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বছরের বেশীরভাগ সময় মানবেতর জীবনযাপন করে। এলাকার হাজারো ছেলেমেয়ের পড়াশুনার ইচ্ছা থাকলেও দূরের কোন কলেজের বেতন ও আনুষঙ্গিক খরচের কথা চিন্তা করে চর এলাকার খেটে খাওয়া মানুষ সে আগ্রহটুকুও হারিয়ে ফেলে। সরিষাবাড়ী কলেজ জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী কলেজ। এ কলেজটি সরিষাবাড়ী উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।
১৯৬৭ সালের ১লা জুলাই প্রতিষ্টিত হয় সরিষাবাড়ী কলেজ। দীর্ঘ চার যুগ তথা ৪৮ বছরের পুরনো ১১ (১০.৯৭একর) একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত সরিষাবাড়ী কলেজ। ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ডিগ্রী পর্যায়ের কোর্স চালু রয়েছে এ কলেজে। এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিএম, ¯œাতক, ¯œাতক সন্মানসহ ৩৫টি বিষয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৫ সহস্রাধিক । বর্তমানে এ কলেজে বাংলা, সমাজ বিজ্ঞান, ব্যবসা ব্যবস্থাপনা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ ৪টি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু রয়েছে। কলেজটিতে ৪৮ জন সুদক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। কলেজে সারিবদ্ধভাবে ৩টি দোতলা বিল্ডিং, ৪শ ফুট লম্বা একটি ছাত্রাবাসসহ ৪টি বিশাল হাফ বিল্ডিং, রয়েছে সুদৃঢ় ২টি পুকুর, মসজিদ ও বিশাল খেলার মাঠ এবং কলেজ ক্যাম্পাসের পাশেই মনোরম পরিবেশে রয়েছে অধ্যক্ষের আলাদা একটি বাসভবন। এছাড়া কলেজ ক্যাম্পাসেই রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির ২ সহস্রাধিক বিশাল বৃক্ষের সমাহার। এছাড়াও রয়েছে কলেজের রোভার স্কাউট, বিএনসিসি ও ক্রীড়ায় জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের স্বাক্ষর। এক কথায়-সরিষাবাড়ী কলেজের একটি পরিপূর্ণ বিশাল অবকাঠামো রয়েছে। পুরা ১১ একর জমি জুড়েই রয়েছে গোটা ক্যাম্পাস।

সরিষাবাড়ী কলেজটি বিগত সরকার প্রধানদের বারবার প্রতিশ্রুতি অর্জন করলেও এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। ১৯৮৮ সালে এ কলেজটি জাতীয়করণে জাতীয় পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদ উদ্যোগ নেন। সে সময় এলাকার কোন এক রাজনৈতিক দলের কিছুসংখ্যক উগ্র নেতাকর্মী এরশাদ বিরোধী মিছিল ও শ্লোগান দিলে তার জাতীয়করণের উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমšী¿ বেগম খালেদা জিয়া কলেজটি সরকারীকরণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তৎকালীন দলীয় নেতৃস্থানীয়দের নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, সে সময়ও দলীয় স্থানীয় প্রভাবশালী স্বার্থান্যাশী মহলের প্ররোচনায় কলেজটি সরকারীকরণে বাধাগ্রস্থ হয় এবং এলাকাবাসীর সে আশাও বিফলে যায়। পরবর্তীতে মহাজোট তথা শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠ হলে কলেজটিকে সরকারীকরণের লক্ষ্যে আবার পূর্বের অবস্থায় সরিষাবাড়ী কলেজ নামে পূনঃপ্রতিষ্ঠিত করা হয়।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ ডিসেম্বর/২০০৮ইং তারিখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পূর্ব আওয়ামীলীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরিষাবাড়ী কলেজ মাঠে এক ঐতিহাসিক টেলিকন্ফারেন্সে সরিষাবাড়ী কলেজকে সরকারীকরনের প্রতিশ্রুতি দেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে গত ১৮/১১/২০১৪ইং তারিখে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় স্মারক নং-০৩.০০১.০০০.০০.০০.০৬.২০১৪-৯৮এর মাধ্যমে সরিষাবাড়ী কলেজ সরকারীকরণের প্রক্রিয়া দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিবকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির তথ্য সংগ্রহপূর্বক সরেজমিন প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনাও প্রদান করেন। এ ব্যাপারে গত ৩০/১২/২০১৪ ইং তারিখে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কাউসার নাসরীন স্বাক্ষরিত বেসরকারী কলেজ জাতীয়করণের লক্ষ্যে সরিষাবাড়ী কলেজটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংযুক্ত ছক অনুযায়ী প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে গত ২৮/০৭/২০১৫ইং তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিদর্শক দল সরিষাবাড়ী কলেজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। অথচ আজ পর্যন্ত এ কলেজটিতে জাতীয়করণের কোন ছোঁয়া লাগেনি!
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এলাকার সাধারন মানুষের মনে একটাই হাহাকার, ৪ যুগের পুরনো কলেজটি জাতীয়করন থেকে বঞ্চিতই থেকে গেল। হাজার হাজার শিক্ষার্থী এমনকি হাজার হাজার পরিবারের মঙ্গলের কথা কেউ চিন্তা করে না।চিন্তা করারও কেউ নেই। এনিয়ে এলাকাবাসীর ভিতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। কলেজটি জাতীয়করন না হওয়া দুঃখজনক। আগামী নির্বাচনে এ কলেজটিই একটা ইস্যু হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও ধারনা করছেন শিক্ষানুরাগী সচেতনমহল ও এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ও কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, কলেজের অবস্থান, আয়তন, শিক্ষার্থী ও অবকাঠামোসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করলে সরিষাবাড়ী কলেজ সরকারীকরনের সকল শর্ত পূরণে সক্ষম। কলেজটি জাতীয়করনের কোন বিকল্প নেই।