Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

11kখােলা বাজার২৪।। সোমবার, ৬ মার্চ ২০১৭: প্রধান নির্বাচন কমিশনার যে বিতর্কিত তা প্রমাণ করার জন্যই আগামীকাল ১৮টি উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

রোববার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, এই নির্বাচন কমিশনার যে আওয়ামী লীগের দলীয় লোক, তিনি (নির্বাচন কমিশনার) শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে আসছে তা প্রমাণ করার জন্যই বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিতর্ক বললেও কেন তার অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার গঠিত নির্বাচন কমিশনারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় তা দেশবাসীকে এবং বিশ্ববাসীকে দেখানোর জন্যই নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি।

তিনি আরো বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে ক্ষমতা দখলকারী আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী গোটা নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও সব দলের অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ নির্বাচনকে দেশান্তরিত করে তাঁর পূর্বের পছন্দসই প্রধান নির্বাচন কমিশনার রকিবউদ্দিন এর মতো আর একজন অনুগত ও দলীয় আশীর্বাদপুষ্ট লোককে বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। জনতার মঞ্চের এই কর্মকর্তা আওয়ামী পরীক্ষায় সকল দিক থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার কারণেই এবারে সিইসি হিসেবে তাঁকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সুতরাং কে এম নুরুল হুদা’র ন্যায় সিইসি’র নেতৃত্বে নির্বাচন যে দলীয় প্রভাবমুক্ত হবে না সেটি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হতে শুরু করেছে। সেই একই রক্তঝরা নির্বাচন, শাসকদলের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদেরকে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধাসহ আওয়ামী অনাচারের নির্বাচনের চিত্র আগামীকাল দেশব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য ১৮টি উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালেই ফুটে উঠতে শুরু করেছে।

বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ তৈরীতে বর্তমান নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র সম্পূর্ণরুপে ব্যর্থ নয়, বরং হাসিনা মার্কা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্যই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে কমিশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। হাসিনা মার্কা নির্বাচন মানেই একতরফা নির্বাচন, রক্তাক্ত নির্বাচন, একদলীয় নির্বাচন, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীকে চিরদিন ক্ষমতায় রাখার জন্য ভোটারবিহীন নির্বাচন। সুতরাং আতঙ্ক, ভয় এবং ভীতিকর পরিবেশ বজায় রাখতে হলে শাসকদলের সহিংস সন্ত্রাস জরুরী। তাই এই সহিংস সন্ত্রাস আশকারা পাচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততার কারণে। অতএব এই আজ্ঞাবহ প্রধান নির্বাচন কমিশনার দিয়ে শাসকদলের প্রভাবমুক্ত, অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কখনোই সম্ভব নয়। মাত্র ১৮টি উপজেলা নির্বাচনও রক্তাক্ত পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে। ভোটারদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়ার জন্য ভয়াল পরিবেশ বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আগামীকাল উপজেলা নির্বাচন নিয়ে রিজভী আরো বলেন, আগামীকাল ০৬ মার্চ দেশব্যাপী অনুষ্ঠিতব্য কয়েকটি উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নৃশংস হামলা, হুমকি-ধমকি ও অস্ত্রবাজীতে এখন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে এক ভয়াবহ ও ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদেরকে জীবননাশের হুমকিসহ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বাড়ীতে বাড়ীতে বেপরোয়া হামলা চালানো হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় ব্যাপক বাধা এবং বিএনপি প্রার্থী ও সমর্থকদের ভয়ভীতি প্রদর্শণ করা হচ্ছে। এসব ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিষয়ে আমরা আগেও আপনাদের অবহিত করেছি। আগামীকাল ০৬ মার্চ দেশের ১৮টি উপজেলার নির্বাচন। এই নির্বাচনী এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কিছু খন্ডচিত্র এখন আমি আপনাদেরকে অবহিত করছি।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)’র বাসভবন রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। নিজ এলাকায় যেখানে নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে সিইসি ব্যর্থ সেখানে কীভাবে সারাদেশের নির্বাচন তিনি বা তাঁর কমিশন কন্ট্রোল করবেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এলাকায় বহিরাগত সন্ত্রাসীরা অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মহড়া দিচ্ছে। বিএনপি প্রার্থী, সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের বিভিন্ন কায়দায় ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মোট কথা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতা ও মদদে এধরণের ন্যাক্কারজনক কার্যকলাপ সংঘটিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিকট প্রতিকারের আবেদন জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তথাপি সিইসি কর্তৃৃক কোন কার্যকর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না, তিনি এখন লাজবাব।

আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে সর্বত্র আজ জোরালোভাবে উচ্চারিত বর্তমান সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নারকীয় ঘটনা। এই সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের যাবতীয় ঘটনা নিহিত আছে তাদের তৈরী দু:শাসনের অচলায়তনের মধ্যে একটি সামাজিক-রাজনৈতিক অন্যায্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কারন এই অন্যায্য ব্যবস্থা গড়ে না তুললে তাদের অবৈধ ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যাবে। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার তাদের স্বপ্নসাধ পূরণ হবে না। এই অন্যায্য ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বিরুদ্ধে জনসাধারণের প্রতিবাদে আওয়ামী নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র এখন আরো হিংস্র হয়ে উঠেছে। অত্যাচারী রাষ্ট্র নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগে জনগণের ন্যায্য প্রতিবাদ দমন করে এবং পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আক্রমন করে। বাংলাদেশে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এই আক্রমনের প্রধান শিকার হয়েছে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে নির্বাচন কমিশনকে দখল করে নিতে সচেষ্ট থেকেছে। সেজন্য গণতন্ত্রকে দীর্ঘদিন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছে, এখন এই নবগঠিত নির্বাচন কমিশন গণতন্ত্রের মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে কী না এটাই আজ জনগণের কাছে একটা বিশাল প্রশ্ন। তবে শাসকগোষ্ঠীকে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই-অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঝটিকা কেন্দ্র হচ্ছে এদেশের জনগণ। জনগণই তাদের অধিকার ফিরে পেতে উদ্বেল আন্দোলনের ঝাঁপিয়ে পড়বে।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, সহ দপ্তর মনির হোসেন, বেলাল হোসেন, ছাত্রদলের দপ্তর আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী প্রমুখ।