Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ৮ মার্চ ২০১৭: 9তাপস কুমার, নাটোর:নাটোরের ড্রাগন ফল চাষী কামরুজ্জামান ১০ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন, নজর কেড়েছেন অনেকের । শহর থেকে ১২কিলোমিটার পূর্বে নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের পাশে সৈয়দমোড় এলাকায় বিদেশী এই ফল চাষে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন এ ফলচাষী। ৭ বছর আগে ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে তিনি ১৪০০ টি ড্রাগনের চারা রোপন করেছিলেন। সঠিক পরিচর্যা করায় বাগানের গাছে গাছে পরিপুষ্ট ফল আসছে । এখন এ বাগান থেকে বছরে ২৫,০০০কেজি থেকে ৩০,০০০কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। উৎপাদিত এসব ফল ঢাকা, চট্ট্রগ্রাম, সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে যায়।
সরজমিনে ড্রাগন ফলের বাগানে গিয়ে দেখা য়ায়, গাছের আগাছা পরিস্কার সহ বিভিন্ন পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত বাগারে পরিচর্যার দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরা। ড্রাগন ফলের সাথে সাথী ফসল হিসাবে ভুট্টা, বাদাম, থাই পেয়ারা, জামরুল, আমের চাষ করেছেন। এমন অনেক বিদেশী ফল আছে যেগুলো বাংলাদেশে সার্থকভাবে চাষ করা সম্ভব। আবার এমন ফল আছে যেগুলো এদেশে হবে, তা মানুষের চিন্তাতেও আসত না-যেমন স্ট্রবেরী, ড্রাগন ফল ইত্যাদি। এই ফলগুলো এদেশে শুধু উৎপাদনই হচ্ছে তাই না বরং বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। এসব ফলগুলোর পরিবেশিক চাহিদার সাথে বাংলাদেশের জলবায়ুর কোন মিল নেই। সৌভাগ্যবশত এই ফলগুলোর এমন কয়েকটি জাত আছে যা বাংলাদেশের জলবায়ুতে সাফল্যের সাথে জন্মানো সম্ভব। থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনিশিয়াসহ এশিয়ার অনেক দেশে এ ফলগুলো অনেক আগেই বহুল চাষ শুরু হয়েছে। ভিয়েতনামে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করা হয় ক্যাকটাস পরিবারের ড্রাগন ফলটি। তবে এখন দেশের অনেক এলাকাতে বিদেশী ফলগুলোর মধ্যে ড্রাগন ফলের চাষ বাণিজ্যিক ভাবে শুরু হয়েছে। চাষ পদ্ধতি নিয়ে কথা হল কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল জলিলরে সাথে। তিনি এ প্রতিবেদক কে জানান, এ ফলটির জন্য শুষ্ক জলবায়ু প্রয়োজন। মধ্যম বৃষ্টিপাত এ ফসলের জন্য ভালো। ফলে যেখানে পানি জমে না এমন উঁচু জমি চাষের জন্য উপযোগী। উচ্চ জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ বেঁলে-দোঁয়াশ মাটিতে এ ফল চাষের জন্য উত্তম। এ ফসল চাষে তুলনামুলক সার কম প্রয়োজন হয়। তবে মুরগির বিষ্ঠা উত্তম জৈব সার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আমাদের দেশের আবহাওয়াতে লাল ড্রাগন ফল, হলুদ ড্রাগন ফল, সাদা ড্রাগন ফল চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ইহা একটি লতানো কাটাযুক্ত গাছ কিন্তু এর কোন পাতা নাই। গাছ দেখে সবাই একে সবুজ ক্যাক্টাস বলেই মনে করেন। ড্রাগন গাছে শুধুমাত্র রাতে স্বপরাগায়িত ফুল ফোটে। ফুল লম্বাটে সাদা ও হলুদ রং এর হয়। তবে মাছি, মৌমাছি ও পোকা-মাকড় পরাগায়ন ত্বরান্বিত করে এবং কৃত্রিম পরাগায়ন করা যায়। এ গাছকে উপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের/বাঁশের খুটির সাথে উপরের দিকে তুলে দেওয়া প্রয়োজন হয়।
ড্রাগন ফল চাষী কামরুজ্জামান জানান, বছরের যে কোন সময়ই গ্রীষ্মকালীন এ ফলের চাষ করা যায়। সাধারণত জুলাই আগষ্টে ফল পাকতে শুরু করে। ফুল আসার ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মাথায় ফল পেকে যায়। দেড় থেকে দুই বছর বয়সের একটি গাছে ৫-৩০টি ফল পাওয়া গেলেও পূর্ণ বয়স্ক একটি গাছে বছরে ৫০ থেকে ১০০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। একটি পরিপুষ্ট পাকা ফলের ওজন প্রায় ৪শ থেকে ৬শ গ্রাম হয়। এক নাগাড়ে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি ফল ৫শ থেকে ৬শ টাকা দরে বিক্রি হয়। তিনি আরও জানান, আবহাওয়া অনুকুল থাকলে এ বছরে প্রায় ১৫ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা লাভ হওয়ার সম্ভবনা আছে। ড্রাগনের চারা এক বার রোপন করলে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত এক নাগাড়ে ফল দেয়। সেক্ষেত্রে ২য় বছর থেকে চাষ বাবদ খরচ একেবারেই কম লাগে। ফলে এ ফল চাষ যথেষ্ঠ লাভজনক।
এ ব্যাপারে নাটোর কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, জেলায় অনেকেই ড্রাগন ফলের চাষ করছে। গত বছর ১৩ মেট্রিক টন উৎপাদন হলেও এ বছর ২০মেট্রিক টন ড্রাগন ফল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। বিদেশী এ ফসল দেশের মাটিতে চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে নাটোর কৃষি স¤প্রসারন বিভাগ প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। অধিক পুষ্টিগুন সম্পন্ন এ ফল চোখকে সুস্থ্য রাখে, শরীরের চর্বি কমায়, রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমানো সহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এ ফল ডায়াবেটিস রোগীর ভাতের পরিবর্তে প্রধান খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায় বলে অচিরেই এ ফলের স্থানীয় বাজার সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থানীয় বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে ফল বিক্রির ব্যবস্থা করা গেলে এ ফল চাষে কৃষকেরা লাভবান হবেন।