খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ ২০১৭:শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে করপোরেট কর সুবিধা পায় কোম্পানি কিংবা ব্যাংক বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রচলিত করবিধি অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির চেয়ে ১০ শতাংশ কর কম দিতে হয়। তালিকাভুক্ত হওয়ার পর লভ্যাংশ না দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। যদিও কোম্পানিগুলোর আর্থিক হিসাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, তালিকাভুক্তির আগে ক্রমাগত মুনাফা করেছে কোম্পানি, কিন্তু তালিকাভুক্তির পর সেই মুনাফা কমে যায়। দুই-এক বছর মুনাফা হলেও পরবর্তী সময়ে কমতে থাকে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছে, শেয়ার গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেবে নাকি করবে না, এটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির একান্ত বিষয়। লভ্যাংশ প্রদানে কোনো বাধ্যবাধকতা কিংবা নীতিমালা নেই। তবে কোম্পানির মুনাফা হলেও লভ্যাংশ না দিলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেটি খতিয়ে দেখতে পারে।
বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা বলছে, ভালো ভালো অনেক কোম্পানি আগের বছর লভ্যাংশ দিলেও এক বছরের মাথায় কোনো লভ্যাংশ দেয় না। আর্থিক হিসাবে কৃত্রিম লোকসান দেখানো হয়। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিষদ ও দুর্নীতির কারণে শেয়ার গ্রাহকরা বঞ্চিত হয়। এটা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিংবা বাজারসংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত।
একটি কোম্পানি বছরজুড়ে ব্যবসার পর ক্ষতি কিংবা লোকসানে থাকলে লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়। আবার মুনাফা হলেও কোনো কোম্পানি সাধারণত ব্যবসায় সম্প্রসারণ ও লভ্যাংশ প্রদান করার মতো লভ্যাংশ না থাকলে শেয়ার গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেয় না। আর্থিক হিসাব বছর শেষে মুনাফার একটি অংশ শেয়ার গ্রাহকদের মধ্যে বণ্টন করে কোম্পানি। আর বাকি অংশ কোম্পানির ব্যবসায় সম্প্রসারণে ব্যয় করে। আবার লভ্যাংশ দেওয়ার পরও অবশিষ্ট অংশ রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়। কোম্পানির দিতে না পারা ও আর্থিক হিসাব-নিকাশ বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ার গ্রাহকদের অনুমোদন নিতে হয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে শেয়ার গ্রাহকদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়া বা ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা দেওয়া কোম্পানির সংখ্যা বেড়েছে। আর সেই হিসাবে লভ্যাংশ না দেওয়া কোম্পানিকে দুর্বল ও স্বল্প মূলধনী কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমনও বেড়েছে। কোনো কোম্পানি আর্থিক বছর শেষে কোনো লভ্যাংশ দিতে না পারলে এই ক্যাটাগরিতে অবনমন করা হয়। আর এই হিসাব বছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মুনাফা কিংবা লোকসান বিবেচনায় লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
ডিএসইর বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২২টি কোম্পানি শেয়ার গ্রাহকদের লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যার মধ্যে ৯৮টি কোম্পানি নগদ, স্টক আর কোনো কোম্পানি নগদ ও স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। তবে ২৩টি কোম্পানি শেয়ার গ্রাহকদের জন্য কোনো লভ্যাংশ প্রদান করতে পারেনি। অর্থাৎ এই কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে অথবা লভ্যাংশ প্রদান করার মতো আয় করতে পারেনি। আর ৭২টি কোম্পানি নগদ ও স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে, কিন্তু ২৬টি কোম্পানি শুধু স্টক বোনাস দিয়েছে।
নিয়মানুযায়ী, একটি কোম্পানি লভ্যাংশ দিতে না পারলে শাস্তিস্বরূপ স্বল্প মূলধনী বা ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবনমন করা হয়। জেড ক্যাটাগরিতে অবনমনে কোম্পানি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টির পাশাপাশি এই কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে মার্জিন ঋণ দেওয়া হয় না। আবার শেয়ার বিক্রি করতেও ৯ দিন অপেক্ষা করতে হয়। সাধারণত কোনো কোম্পানির শেয়ার তিন কার্যদিবসের মধ্যে লেনদেন করা গেলেও জেড কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করা হয় ৯ দিন পর।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে শেয়ার গ্রাহকদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারেনি ১৪টি কোম্পানি। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়া ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত আট কোম্পানিও ছিল। আর অন্যগুলো ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ‘বি’ ক্যাটাগরির। আর ১৯টি কোম্পানিকে মৌল ভিত্তির বা ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানির তালিকায় উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে নতুন তালিকাভুক্ত ১২টি কোম্পানি ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ ঘোষণা করে এই তালিকায় উন্নীত হয় আর লভ্যাংশ না দেওয়া ‘জেড’ ক্যাটাগরির চারটি কোম্পানি লভ্যাংশ প্রদান করে ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত হয়।
২০০০ সালের ২ জুলাই থেকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতার ভিত্তিতে ‘এ’ ও ‘বি’ দুই ক্যাটাগরি চালু করে। ‘এ’ ক্যাটাগরি হচ্ছে ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে সক্ষম কোম্পানি আর ‘বি’ হচ্ছে ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিতে পারা কোম্পানি। একই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর ‘জেড’ ক্যাটাগরি চালু করে কর্তৃপক্ষ। এই ক্যাটাগরি হচ্ছে কোনো লভ্যাংশ দিতে না পারা। এ ছাড়া ‘এন’ ও ‘জি’ নামে দুটি ক্যাটাগরি আছে।
বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, “ভালো লভ্যাংশ দেওয়া কোম্পানি হঠাৎ করেই ‘নো ডিভিডেন্ড’ ঘোষণা করে। বিনিয়োগকারীরা দৈনিক লেনদেনের পাশাপাশি কোম্পানির লভ্যাংশ পাওয়ার আশায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করে। তবে লভ্যাংশ না দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হই আমরা। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিষদের দূরদর্শিতা আবার দুর্নীতির কারণে এই লভ্যাংশ দেওয়া হয় না। আবার কোনো কোম্পানি কৃত্রিমভাবেও লোকসান সৃষ্টি করে। ”