খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ ২০১৭: সুনামগঞ্জের দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের একমাত্র ভরসা বোরো ফসল। বর্তমান সরকার যখন খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে সুনামগঞ্জের অন্যতম শস্য-ভান্ডার বোর ফসল রক্ষার্থে ক্রুটিপুর্ণ বাঁধ নির্মান ও ক্লোজার (ভাঙ্গা) মেরামতের জন্য ডিসেম্বর মাসের নির্ধারিত সময় শেষের দিকে ফসল রক্ষা বাঁেধর কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও পিআইসিরা ফেব্র“য়ারী মাসের প্রথম দিকে শুরু করলেও এখন পর্যন্ত ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ ৪০ ভাগ সম্পন্ন না হওয়ায় শংঙ্কিত এ উপজেলার কৃষকরা। ফলে উপজেলার দেখার হাওর, সাংহাই হাওর,কাচিভাঙ্গাঁ হাওর,জামখলা হাওর ও খাই হাওর সহ উপজেলার সবকয়টি হাওরের কৃষকদের ২২ হাজার হেক্টর জমির একমাত্র বোরো ফসল হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দেখার হাওরের হলদির খাড়া,উতারিয়া,পাতারিয়া, জামখলা, শালদিঘা, কাঁচিভাঙ্গা, সহ উপজেলার সবকয়টি হাওরের কোন,কোন বাঁধের কাজ শেষ হলেও ড্রেসিং সহ কোন কোন বাঁধের পার্শবর্তী এসকে বেটরের কাজ শুরু হয়নি, গেল বছরের বিপদগ্রস্থ যে বাঁধগুলো দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করে সোনালী ফসল তলিয়ে গিয়েছিল এবারো অরক্ষিত সেই অংশগুলো দিয়েই হাওরে পানি প্রবেশের শংঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। বিভিন্ন হাওরে পলি জমে হাওর কিংবা নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ার কারলে বোরো মৌসুমে অল্প বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে মহাসিং নদীসহ বিভিন্ন হাওরে পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি চলে আসে। যা পানির প্রথম ধাক্কায় বাঁধগুলো হুমকির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পিআইসি’র মাধ্যমে যে কাজগুলো হয় তা অনেকাংশেই অগোছালো অবস্থায় রয়ে গেছে। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার একাধিক কৃষকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, পাউবো’র নিয়ম অনুযায়ী যে মাপের ভিত্তিতে কাজ করার কথা সে অনুযায়ী কিছু কিছু পিআইসি কাজ দ্রুত শেষ করারা উদ্যোগ নিলেও অধিকাংশ পিআইসি তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। সরকার প্রতিবছর ফসল রক্ষা বাধঁ নিমার্নের জন্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও বিগত বছরগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু সুযোগ সন্ধানী দূনীর্তিবাজ কর্মকতা ও ঠিকাদারদের ব্যাপক অনিয়ম-দূনীতির কারণে সময়মতো দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মানের নামে সময় কালক্ষেপন, অবিরাম বৃষ্টিপাতের অজুহাত, টেকসই বাধঁ নির্মান না হওয়া ইত্যাদি কারণে আাগাম বন্যায় কৃষকরা তাদের সোনালী ফসল হারাতে হয়েছিল। সরকার চলতি বছর নির্ধারিত সময়ে বাঁধ নির্মানের জন্য টাকা বরাদ্দ দিলেও ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাধঁ নির্মান কাজ শুরু করার কথা এবং তা গত ২৮ ফেব্র“য়ারীর মধ্যে সকল বাধেঁর নির্মান কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলে সময় কালক্ষেপন করায় বর্তমান পর্যন্ত হাওরে বাধঁ নির্মাণের কাজ ৪০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি। ফলে কাজ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে কিংবা শেষ হবে কি হবেনা এ নিয়ে চরম হতাশা আর শঙ্কায় রয়েছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক কৃষক। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার মোট ১৭ টি বাঁধের কাজ পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপি¬মেনটেশন কমিটি) গঠন করে ফসল রক্ষা বাঁেধর নির্মান করা হয়। কিন্তু সরকারের নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ না হওয়ায় কৃষকদের মাঝে সন্দেহ আর প্রচন্ড ক্ষোভ রয়েছে। প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে বেরিবাঁধের কাজ শুরু হয়না। ফাল্গুন চৈত্র মাসে তড়িঘড়ি করে কাজ শুরু করলে বৃষ্টি বাঁধলের সময় মাটি বসার আগেই মাটি ধসে পড়ে এছাড়া মাটি কাটার খরচ বাঁচাতে বাঁধের খুব কাছ থেকে মাটি উত্তোলণ করে প্রতিবছর নির্মান করা হয় বেরীবাঁধ। ফলে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই বাঁধ ভেঙ্গে হাওরে পানি প্রবেশ করে সোনালী ফসল তলিয়ে যায়। অথচ নীতিমালা অনুযায়ী সাধরণ বাঁধের ১০ ফুট, ক্লোজারের ক্ষেত্রে ৩০ ফুট দূরত্বে মাটি উত্তোলনের কথা রয়েছে। পাউবো এসও কে ম্যানেজ করে পি.আই.সি(প্রজেক্ট ইমপি¬মেনটেশন কমিটি) ক্রটিপুর্ণ বাঁধ নির্মাণ করে অফিস থেকে অনায়াসে বছরের পর বছর বিল উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছেন। একাধিক পিআইসি চেয়ারম্যানদের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড তাদেরকে যে পরিমান টাকা বরাদ্দ দিয়েছে তা এখনও পাননি এবং প্রয়োজনীয় সময়ে বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ শেষ করতে বিলম্ব হচ্ছে।
এ ব্যপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আলমগীর কবির জানান: ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার বিষয়ে কমিটি গঠন করে মিটিং করে বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য, কাজ চলমান রয়েছে এবং অচিরেই কাজ শেষ হবে।
এ ব্যপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী আবুল কালাম জানান, বেরিবাঁধের কাজের ব্যাপারে মিটিং করে সব পিআইকে বলে দেওয়া হয়েছে কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য, যদি এখন ও কাজ শেষ না হয় তাহলে সবাইকে আবার বলা হবে যেন অচিরেই কাজ শেষ করা হয়। সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আফসার উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনির মোবাইল ফোন বন্দ পাওয়া যায়।