খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ১০ মার্চ ২০১৭: দিনাজপুরের বিরলে পুর্ণভবা নদীর উপর নির্মিত হয়েছে দেশের সর্ববৃহত রাবার ড্যাম। কৃষকদের সেচ সুবিধা দিয়ে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এটি নির্মিত হয়েছে। রাবার ড্যামটির কারণে মরুকরণের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ৬ হাজার টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য, সৃষ্টি হয়েছে মাছ চাষের সুযোগ। কৃষকদের মুখে দেখা দিয়েছে হাসির ঝিলিক। যে সকল জমি পুর্বে পানির অভাবে পতিত হয়ে থাকতো রাবার ড্যামটি নির্মান করার পর সে জমিতে পানির অভাব দুর হয়েছে। সোনালী ফসলে ভরে গেছে প্রান্তর। স্থানটি নিরিবিলী ও প্রাকৃতিক সোন্দর্যে ভরপুর। তাই এটি একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হওয়ায় প্রত্যেকদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের ভিরে মুখরিত হয়ে উঠে। এখানে একটি পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করলে সরকার পাবে বিপুল অংকের রাজস্ব।
শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে এ অঞ্চলের কৃষকদের আবাদ করতে কষ্ট হতো। পানির অভাবে পতিত থাকতো শত শত হেক্টও জমি। ফলে কৃষকদের গৃহে পরতো হাহাকার। তারা দুইবেলা দু-মুঠো অন্ন যোগার করতে পরের জমিতে শ্রম বিক্রি করতো। অর্থের অভাবে কৃষক পরিবারের শিশু-যুবকরা লেখা পড়া করতে পারতো না। সব সময় অভাব অনটোনের মধো দিয়ে দিন কাটতো। এই এলাকার কৃষকদের করুণ অবস্থা দেখে এমপি খালিদ মাহমুদ এদের মুখে হাসি ফোটাতে নানা পরিকল্পনা নিয়েছিল এবং তা প্রধান মন্ত্রি শেখ হানিসনার নিকট উপস্থাপন করেছিলেন। প্রধান মন্ত্রি শেখ হাসিনা উক্ত এলাকার কৃষকদের কথা ভেবে তাই বরাদ্দ দিয়েছিলেন রাবার ড্যাম তৈরীর অর্থ। সেই অর্থ দিয়ে বিরল-বোচাগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য নির্মান করলেন দেশের বৃহত্তম রাবার ড্যাম।
এই রাবার ড্যামটি বিরল উপজেলার ২নং ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের আন্তর্গত মাগুরাবান ধন্যসাহার ঘাট পুর্ণভবা নদীর উপর নির্মান করা হয়। প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে দিনাজপুর এলজিইডি এই নির্মান কাজ বাস্তবায়ন করে। বহুল প্রত্যাশিত ৯০ মিটার এই দীর্ঘ রাবার ড্যাম ও ব্রীজ পুর্ণভবা নদীর উপর নির্মাণ করা হয়। এই রাবার ড্যামটি নির্মানের ফলে যেমন দুর হয়েছে কৃষকদের সেচের পানির অভাব, সেই সাথে প্রচুর পরিমানে মাছের অভাব দুর হয়েছে। শুধু বিরলের কৃষকরা নয় বরং পার্শের উপজেলা কাহারোল, ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জ সহ অন্যান্ন জেলার কৃষক ও জেলেরা সুবিধা ভোগ করছে। এখন বহু জেলে ও তার পরিবাররা মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে এবং মাছ বিক্রির অতিরিক্ত টাকা দিয়ে শিশু-কিশোরদের লেখা পড়া চালিয়ে থাকে। এখন আর এলাকায় অভাবের কথা পুর্বের মতো শোনা যায়না। আর এই সবটুকু কাজই এমপি খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পরিশ্রমের ফলে।
দিনাজপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খলিলুর রহমান জানান, রাবার ড্যাম থেকে সেচ সুবিধা নিতে কৃষকদের দিতে হচ্ছে না কোন অতিরিক্ত খরচ। এতে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দীর্ঘ এই রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে। ড্যামটি বিরল ও কাহারোল উপজেলার বাসিন্দাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে এনেছে। বিরল ও কাহারোল উপজেলার ইউনিয়নের হাজার হাজার হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। উপকৃত হয়েছে দুই উপজেলার প্রায় দুই হাজার কৃষক পরিবার। খরা মৌসুমে এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় সেচ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে বছরে বোরো ধানের অতিরিক্ত উৎপাদন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন বৃদ্ধি পাবে। এতে বছরে প্রায় ৫ কোটি টাকা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন এই এলাকার কৃষকরা। এছাড়াও এই প্রকল্পের মাধ্যমে নদীর ৪৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পানিতে মাছ চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।