খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১১ মার্চ ২০১৭: পোশাক খাতে নতুন এক সম্ভাবনা জাগিয়েছে জিন্স নামে পরিচিত ডেনিম পণ্য। ব্যবসায়ীরাও বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন এ খাতে। বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহও বাড়ছে ডেনিমে। এছাড়া উন্নতমানের বৈচিত্র্যময় ডেনিম পোশাক তৈরিতে সক্ষমতা অর্জন করায় বাংলাদেশে উৎপাদিত ডেনিম পণ্যের কদর বাড়ছে বিশ্ববাজারে। দেশে ডেনিমের উন্নয়নে আলাপ-আলোচনা, প্রদর্শনী ক্রমেই বাড়ছে। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয়, আর ডেনিম রপ্তানিতে এখন তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে। শিল্পোদ্যোক্তারা বলছেন, এ খাত বাংলাদেশের রপ্তানি আয়কে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে। যদিও বাংলাদেশে ডেনিম পোশাক তৈরিতে চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাপড় উৎপাদন না হলেও এর পরিমাণটা বাড়ছে। এছাড়া ডেনিমের সম্ভাবনা তুলে ধরতে দেশে কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী করা হচ্ছে।
দেশের অন্যতম ডেনিম কারখানার মালিক ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, ডেনিম মূলত হাইভ্যালু পণ্য। এতে বিনিয়োগ যেমন বেশি লাগে, তেমনি ডেনিম পণ্য সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। সরকার ও গার্মেন্ট খাতের উদ্যোক্তারা আগামী ২০২১ সাল নাগাদ পোশাকশিল্প থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এই গতানুগতিক তৈরি পোশাক রপ্তানি করে সে লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। এ জন্য ডেনিমের মতো হাই ভ্যালু প্রডাক্টের দিকে ঝুঁকতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ডেনিম পণ্য বিশ্বের যেকোনো দেশের চেয়ে অনেক ভালো মানের। কিন্তু বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের ডেনিম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় এবং বাংলাদেশের ইমেজ সংকটের কারণে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য সবার আগে দেশের ইমেজ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্রতিবছর দু’বার ‘বাংলাদেশ ডেনিম এক্সপো’ নামে মেলা করছি।
জানা গেছে, বর্তমানে ডেনিমের দুটি প্রধান বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদার যথাক্রমে ২২.৮৮ ও ১১.৩৫ শতাংশ পূরণ করে বাংলাদেশ। বছরে বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ ডেনিম পণ্য রপ্তানি করছে ৩৫০ কোটি ডলারের। বছরে ডেনিম পণ্য রপ্তানির প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশের উপরে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ডেনিম পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয়। বাংলাদেশ ২০১৪ সালে ১ কোটি ৮৫ লাখ ডেনিম পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৪ কোটি ৪৩ লাখ পিস এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১৪ কোটি ১০ লাখ পিস ডেনিম পণ্য (জিনসের প্যান্ট, শার্ট, জ্যাকেট, ব্লেজার ইত্যাদি) রপ্তানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এসব পণ্য রপ্তানি থেকে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ২৫০ কোটি ডলার। আলোচিত বছরে ইইউতে রপ্তানি বেড়েছে ১১ শতাংশের বেশি। ২০২১ সাল নাগাদ এ খাতে রপ্তানি আয়ের আশা করা হচ্ছে ৭০০ কোটি ডলার।
বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে ডেনিম কাপড় তৈরির জন্য দেশে ২৭টির বেশি কারখানা তৈরি হয়েছে। আরো ৫টি কারখানা প্রক্রিয়াধীন। এই খাতে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগ করেছেন ৮৩৪ মিলিয়ন ডলার। প্রতিবছর ডেনিম কাপড় উৎপাদনে দেশের সক্ষমতা রয়েছে ৩৬ কোটি গজ। আর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৬০-৬৫ কোটি গজ। ২০২১ সালের মধ্যে এই চাহিদা ১২০ কোটি গজে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। সুতরাং এ খাতে বিনিয়োগের ব্যাপক জায়গা রয়েছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
জানা গেছে, বিশ শতকের মাঝামাঝি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিমের ব্যবহার শুরু হলেও বাংলাদেশ এখন এর অন্যতম উৎপাদনকারী দেশ। পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান মনে করেন গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের সমাধানে ইতিবাচক উদ্যোগ নিলে ডেনিম খাতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।
ডেনিম অ্যান্ড জিন্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সন্দ্বীপ আগারওয়াল বলেন, সারা দুনিয়ায় ডেনিমের বাজার সুবিশাল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও হয়ে গেছে সে বাজারের বিশাল এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশবিশেষ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে প্রথমবার এদেশে উৎপাদন শুরু হয় ডেনিম পোশাকের। তুলা এবং বুননের বিশেষত্বের কারণে বিশ্বব্যাপী কাপড়টি ‘ডেনিম’ নামে পরিচিত। তবে জনপ্রিয়তার বিচারে এখন জিন্স নামেই বেশি চেনেন ব্যবহারকারীরা। সারাবিশ্বের বেশিরভাগ জনগোষ্ঠীর পছন্দের পোশাক এটি। মানবজমিন