খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১১ মার্চ ২০১৭: শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী নানা সমস্যায় জর্জরিত। একাডেমীক ভবন না থাকা এবং নাজ গানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ অপ্রতুলতাই এখন প্রধান সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্র না থাকায় সঙ্গীতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। মান্দাতার আমলের ব্যবহারের অনুপযোগী একটি পুরানো একচালা টিনের ঘরে চলছে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কার্যক্রম। এতে সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকরা। তড়িৎ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে দাবী রেখেছেন শিল্পকলা কতৃপক্ষ। জেলা প্রশাসক ও সত্যতা স্বীকার করেছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, ১৯৮০ সালে জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে তুলাসার মৌজায় শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের সামনে সরকারী ৬৩ শতাংশ জমির উপর নির্মিত হয়েছে শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী। একটি আধা পাকা ভবন নির্মাণ করে শুরু হয় সাংস্কৃতিক চর্চা। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে তিন যুগ। অদ্যাবধি সেই আধা পাকা ভবনেই চলছে সাংস্কৃতিক চর্চা। তিন কক্ষ বিশিষ্ট এ ছোট্ট ভবনের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল, দেয়ালের পলেস্টার খসে পড়ছে, একটু জোরে বৃষ্টি হলেই চাল দিয়ে দমকলের ন্যায় অঝোরে পানি পড়ছে। আর প্রতিটি কক্ষের দরজা জানালাতেই উইপোকায় বাসা বেঁধেছে। একটি টয়লেট রয়েছে যা ব্যবহারের অনুপোযোগী। নেই অভিভাবকদের বসার স্থান।। নুতন করে একাডেমীক ভবন নির্মানের কোন ব্যবস্থা এখনো হয়নি।বার বার উদ্যোগ নেয়ার পরে ও কেন যেন ফসকে যায় প্রকল্পটি।কোটি টাকা বরাদ্ধ পাওয়ার পরে ও সে টাকার বরাদ্ধ বাতিল হয়ে যায়। এখানে কোন তদবীরের অভাব নাকি রাজনৈতিক কোন কারন রয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একটি অরাজনৈতিক সংস্থার ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকার কোন অবকাস থাকা কাম্য নয়।
শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের জন্য যে যন্ত্রপাতি গুলো ছিল তাও পুরাতন ও ব্যবহার করার কারনে ভেঙ্গে চুড়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সংগীত পরিবেশনের ক্ষেত্রে সাউন্ড সিস্টেমের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু শিল্পকলা একাডেমীতে নেই কোন সাউন্ড সিস্টেম। জরুরী ভিত্তিতে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর ভবন নির্মাণ এবং প্রয়োজনীয় বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করে সংস্কৃতি চর্চায় সহযোগিতা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা কর্তৃপক্ষ।
এ দিকে শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মাঠে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এক শ্রেণীর প্রভাবশালী অসাদু গাড়ি ব্যবসায়ীরা পুরো মাঠ জুড়ে যত্রতত্র ফেলে রাখছে রেন্ট এ কারের গাড়ি। সকাল নেই বিকেল নেই, নেই কোন টাইম টেবিল ,যেখানে সেখানে আবার শিল্পকলা ভবনের সামনে গাড়ি পাকিং করে ফেলে রাখছে । কোন বিধি নিষেধের তোয়াক্কা করছেনা তারা।কতৃপক্ষ কোন কথা বলতে গেলে গাড়ি চালকরা উল্টো তাদেরকে ধমক দিয়ে বলে সরকারী জায়গায় গাড়ি রাখছি তোমাদের কি? । যত্রতত্র গাড়ি পাকির্ং এর কারনে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত ক্লাসে ঢুকতে পারছেনা। অভিভাবকরা ও অসস্তি বোধ করছেন। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাপ দিলে ২/১ দিন বন্ধ থাকে এরপর আবার শুরু হয় বিড়ম্বনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
এ ব্যাপারে শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সিনিয়র শিক্ষক আব্দুর রব কোতোয়াল বলেন, শরীয়তপুর জেলার শিল্পকলা একাডেমীর ভাল একাডেমীক ভবন না থাকায় নিয়ম অনুযায়ী সাংস্কৃতিক চর্চা করা যাচ্ছে না। বর্তমানে তিনটি কক্ষের মধ্যে দুটি কক্ষে ক্লাশ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে।
শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিক্ষক আলমগীর হোসেন বাহার বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই চাল দিয়ে পানি পড়তে থাকে। এতে করে যন্ত্রপাতি গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমান একাডেমীতে তিনটি হারমোনিয়াম রয়েছে। তার মধ্যে দুইটি হারমোনিয়ামই অচল। পাঁচ জোড়া তবলার মধ্যে চার জোড়াই ব্যবহারের অনুপযোগী রয়েছে। একটি মাত্র ঢোল রয়েছে তাও অবস্থা শোচনীয়।
শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক এম.এম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর নানা সমস্যা আছে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য মহা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি অল্প সময়ের মধ্যে ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করবেন বলে আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। ভবনটা হয়ে গেলে অন্যান্য ছোট খাট সমস্যা স্থানীয় ভাবে পূরন করা সম্ভব।
শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সভাপতি এবং জেলা প্রশাসক মোঃ মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর বর্তমান অবস্থা আশা ব্যঞ্জক নয়। এ বিষয়ে শীঘ্রই উদ্যোগ নেয়া হবে।