Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

70খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ ২০১৭: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর যাত্রা শুরু প্রায় দশ বছর আগে। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই কলম্বোতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচের মাধ্যমে। টি-টোয়েন্টি অভিষেকও ওই একই বছর, নাইরোবিতে কেনিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মাধ্যমে।
তবে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হয় আরও বছর দুয়েক। ২০০৯ সালের ২ জুলাই কিংসটনে দ্বিতীয় সারির ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।

ওয়ানডে আর টেস্ট অভিষেকের মধ্যকার সময়ের ব্যবধানটাই বলে দেয়, বাংলাদেশের অন্যান্য অধিকাংশ খেলোয়াড়ের মত হুট করে টেস্ট ক্যাপ চাপেনি তার মাথায়।
বরং পাঁচ দিনের ক্রিকেটে নিজের সামর্থ্য প্রমাণের জন্য পাড়ি দিতে হয়েছে লম্বা পথ। ২০০৭-০৮ সালের দিকে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে যান তিনি, যার ফলে টেস্টে তার অভিষেক একটা সময়ে হয়ে ওঠে ‘সময়ের দাবি’।
কিন্তু শুরুটা মসৃণ ছিল না মোটেই। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংস মিলিয়ে তার রান ছিল সাকুল্যে ১৭। তবে নিজেকে মেলে ধরতে খুব বেশি সময় নেননি। নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম ম্যাচেই হ্যামিল্টনে পেয়ে যান প্রথম (এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র) সেঞ্চুরির দেখা।
সেটা ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখের কথা। তাঁর দিন কুড়ি আগেই অবশ্য সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কারের কাছ থেকে দারুণ একটা স্বীকৃতি পেয়ে যান তিনি।
মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৬ রানের এক হার-না-মানা ইনিংস খেলেন তিনি, যা দেখে গাভাস্কার তাকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘বিশ্বের সেরা ৮ নম্বর টেস্ট ব্যাটসম্যান’ হিসেবে। উল্লেখ্য, ওই সময়ে টেস্টে মুশফিকুর রহিম ব্যাট করতেন ৭ আর মাহমুদউল্লাহ ৮ নম্বর পজিশনে।
সে যাইহোক, এখন নজর দেয়া যাক তার সাম্প্রতিক পারফরমেন্সের দিকে। শেষ ২০ ইনিংসে তার ব্যাট থেকে ৫০ বা ততোধিক রানের ইনিংস এসেছে মাত্র দুইবার। ২০১৫ সালের জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৬৭, আর এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে হায়দ্রাবাদ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৪। যাকে একসময় ভাবা হত দলের মিডল অর্ডারের অন্যতম মূল স্তম্ভ, তার কাছ থেকে এমন পারফরম্যান্স চিন্তা করা যায়!
শুধু তাই না। তাকে ভক্তরা ভালোবেসে ডাকে ‘সাইলেন্ট কিলার’ হিসেবে। বিপদের মুখে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে পারায় বিশেষ সুখ্যাতি আছে তার। কিন্তু সেটা আসলে কতটুকু সত্য? অন্তত টেস্টের ব্যাপারে? গত অক্টোবরে ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে চলমান শ্রীলংকা সিরিজের প্রথম ম্যাচ পর্যন্ত মোট ৬টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশে।
সবগুলো ম্যাচেই দলে ছিলেন তিনি, এবং ব্যাটেও নেমেছেন। এবং আশ্চর্যের বিষয়, এই ৬ ম্যাচের ১২ ইনিংসের মধ্যে ৪ বার তিনি আউট হয়েছেন সেশনের ঠিক শেষ মুহূর্তে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে তার উইকেট পতনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় সেশনের খেলা, ঢাকা টেস্টে আউট হয়েছিলেন দ্বিতীয় দিন শেষের মিনিট পনেরো আগে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে আউট হয়েছিলেন চতুর্থ দিনের খেলা শেষ হবার দুই ওভার আগে, আর ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের তৃতীয় দিনে চা পানের বিরতির মিনিটখানেক আগে। অর্থাৎ গড়ে প্রতি তিনবারে একবার করে তিনি সেশনের শেষ লগ্নে উইকেট খুইয়ে এসেছেন, যার ফলে বিপদে পড়েছে গোটা দল।
পরের পরিসংখ্যানটি আরও দুঃখজনক। চলতি মৌসুমে টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ২৫.৩৩। তার চেয়ে রুগ্ন ব্যাটিং গড় আছে কেবল আর একজন ব্যাটসম্যানের; মুমিনুল হকের গড় ২৩.৫।
তিনি এ মৌসুমে যেভাবে আউট হচ্ছেন সেটাও যথেষ্ট দৃষ্টিকটু। পেস বোলিংয়ে তিনি যে খুব খারাপ এমনটা বলা যাবে না কখনোই। তাই যদি হতো তবে ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পেসার-ফ্রেন্ডলি উইকেটে টানা দুই সেঞ্চুরি করেছিলেন কিভাবে?
অথচ সেই তাকেই এ মৌসুমে পেস বোলিংয়ের সামনে মনে হচ্ছে বড় অসহায়। দ্রুতগতির ডেলিভারী সামলানোর ক্ষেত্রে ফিট মুভমেন্টে পাস মার্ক তুলতে পারবেন না নিঃসন্দেহে। বেন স্টোকস, নিল ওয়েগনার আর ইশান্ত শর্মার হাতে পরাস্ত হয়েছেন গত তিন সিরিজে।
সেজন্যই কিনা, গল টেস্টের প্রথম ইনিংসে তিনি ক্রিজে আসতেই শ্রীলংকা অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ বল তুলে দেন লাহিরু কুমারার হাতে। আর কুমারাও বেশ ভালোভাবেই অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন তাকে ক্লিন বোল্ড করে।
একটা বিষয় পরিষ্কার, প্রতিপক্ষ দল হোমওয়ার্ক করে তার দুর্বলতাগুলো বের করে ফেলেছে। অথচ তিনি নিজে কি তার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারছেন না? টিম ম্যানেজমেন্ট কি এ ব্যাপারে তার সাথে খোলাখুলি আলাপ করছে না?
পরিশেষে একটা কথাই বলব, মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পদ। তিনি ‘জাস্ট এনাদার ক্রিকেটার’ নন যে তার এই দুঃসময়ে আমরা তাকে আস্তাকুরে ছুঁড়ে ফেলার দাবি জানাব। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট খেলায় যে তার মধ্যে একটা মানসিক ক্লান্তি চলে এসেছে, সে ব্যাপারে সকলেই একমত হবে।
এই ক্লান্তি দূর করার জন্য হলেও তাকে কয়েক ম্যাচ ‘বিশ্রাম’ দেয়া দরকার। এবং তার নিজেরও উচিৎ বিষয়টা হাসিমুখে মেনে নেয়া। তাতে তার নিজেরও যেমন মঙ্গল, তেমনি ‘ইমরুল নাকি সৌম্য’ এই বিতর্কেরও একটি সুষ্ঠু সমাধান করা সম্ভব।