Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০১৭:  35প্রাকৃতিক ভাবে পাতি-হাঁস প্রতিপালন করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের আদিবাসী শিক্ষিত যুবক বিকাশ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী বিষয়ে অনার্সসহ মাষ্টারর্স সমাপ্ত করে কয়েক বছর চেষ্টা করেও চাকুরী না পেয়ে জোর দেন হাসঁ প্রতিপালনে। আর প্রথম দফায় সাফল্য লাভ করার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি বিকাশকে।
সরেজমিনে জানা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার আদিবাসী পল্লী গদাইপুর গ্রামের এক আত্ম প্রত্যয়ী শিক্ষিত যুবক বিকাশ। ২০০৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে ইংরেজীতে অনার্সসহ মার্ষ্টাস ডিগ্রী লাভের পর আর দশ জনের মতই চাকুরী নামের সোনার হরিনের পেছনে ছুটেও একটা চাকুরী খুঁজে পাননি তিনি। অবশেষে গত বছর বাবার কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে গত বছর ফেব্রƒযারী মাসে শুরু করেন পাতি-হাঁসের চাষ। শুরুতেই বাজিমাৎ করে আশাতীত লাভের মুখ দেখেন বিকাশ। গেল বছর সাড়ে ৭ হাজার হাঁস প্রতি পালন করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ সেগুলো বিক্রি করে লাভ করেন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকা।
এরপর দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে এবার তিনি এক খরচে দু’টি লাভের আশায় পুকুরে মাছ আর পুকুর পাড়ে হাঁস চাষ করছেন। তার খামারে এখন ২০ হাজার পাতি হাঁসের এক বিরাট চালান। সেখান থেকে বেকার ও শিক্ষিত যুবক বন্ধুদের দিয়েছেন ৯ হাজার হাঁস। লাভের অনুকুল পরিবেশ এবারেও তার হাতের নাগালেই। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাঁস-মুরগী ব্যাবসায়ীরা আসতে শুরু করেছেন তার পাতি হাঁসের খামারে। প্রতিটি হাঁসের পাইকারী মূল্য ২২০ টাকা দরে বিক্রি শুরু হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে তার খামারের সব হাঁস বিক্রি হলে খরচ বাদ দিয়ে লাভ হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা বলে জানান বিকাশ। স্বল্প সুদে ঋন পেলে তিনি এই খামারকে আরো বড় করতে পারবেন এবং সেই সাথে তার খামারে আরো বেকার তরুন-তরুনীর কর্ম সংস্থানের ব্যাবস্থা হবে বলে বিকাশ আশা করেন।
এভাবেই সাফল্যের সিঁড়ি খুঁজে পান যুবকদের মডেল হাঁস পালক এই বিকাশ। শুধু যুবকরাই নন, বিকাশের এমন ঈর্ষনীয় সাফল্যের এই হাঁস-খামার দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন নানা বয়সী বেকার মানুষরা। একই গ্রামের বরেন্দ্রনাথ তিরকী, পার্শ্ববর্তী বহরমপুর গ্রামের বিষ্ণু উড়াও, শাহজাদপুর গ্রামের শ্যামল পাহান, জেরকাপাড়া গ্রামের দুলাল সিংসহ আদিবাসী পল্লীর অনেকে জানান, ইংরেজী বিষয়ে অর্নাসসহ এম এ পাস করার পর আদিবাসী কোটাতেও একটা চাকুরী জোটেনি শিক্ষিত যুবক বিকাশের। সেই থেকে পাতি হাঁস পালন করে আজ সাফল্যের পাশপাশি আশাতীত বিকাশ আলোর মুখ দেখছে বলে তারা খুশি। বিকাশ যে শুধু নিজের ভাগ্যোন্নয়নে ব্যস্ত তাই নয়, বেকারত্ব ঘোঁচাতে শিক্ষিত ও বেকার তরুনদের প্রশিক্ষন ও পরামর্শসহ হাঁসের বাচ্চা দিয়েও সহযোগীতা করছে বলে এলাকা ঘুরে জানা গেছে। ¯œাতকোত্তর ডিগ্রƒীধারী ও মোহাম্মদুর ইউনিয়নের মেম্বার আলমগীর হোসেন, বিনধারা গ্রামের ফিরোজ চৌধুরীসহ বিকাশের ক’জন বন্ধু জনান, বিকাশের সহযোগীতায় হাঁসের খামার গড়ে তুলেছেন, যেখান থেকে তারাও দেখছেন লাভের হাতছানী। এ ছাড়া ঢাকা’র মহাখালী বাজারের মোফাচ্ছের আলী, বগুড়ার ফতেহ আলী বাজারের তাজুল ইসলাম, রাজশাহীর সাহেব বাজারের সাদেকুল আলমসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা হাসঁ-মুরগী ব্যবসায়ীরা জানান, বিকাশের খামার থেকে তারা হাঁসগুলো নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেগুলো বিক্রি করে তারাও লাভবান হচ্ছেন।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ জানান, এক সময়ের বেকার যুবক বিকাশের সাফল্যের পেছনে নিজের উদ্যম আর পরিশ্রমসহ পরিবারের উৎসাহ বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বিকাশ হাঁসের যে খামার গড়ে তুলে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি হাঁসের লিটার দিয়ে যে মাছ চাষ করছেন তাতেও লাভ গুনছেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রানী সম্পদ বিভাগের সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রাণী সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা অঙ্গিকার করেন।
বিকাশ নিজ পরিশ্রমে যে সাফল্য লাভ করেছেন তা রীতিমত তাক লাগিয়ে দেওয়ার মত ঘটনা। তার এমন উদ্যোগকে গতিশীল করতে স্বল্প সুদে সরকারি ঋনের দাবী এলাকাবাসীর। এতে করে এক দিকে বেকার শিক্ষিত যুবকরা উজ্জীবিত হবে অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হওয়ার সম্ভবনা দেখছেন সচেতন মহল।