Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

34kখােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১৮ মার্চ ২০১৭: মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি: মুন্সীগঞ্জের কৃষকের অশ্রুধারা আর বৃষ্টির পানির প্রবাহ বইছে আলু জমিগুলো জুড়ে। গত সপ্তাহে একটানা ৩ দিনের বৃষ্টির পর শনিবার ফের বৃষ্টি হওয়ায় মুন্সীগঞ্জ জেলা জুড়ে কৃষকের জমিগুলোতে পানি জমে গেছে। গত সপ্তাহে একটানা ৩ দিন বৃষ্টির কারনে পানি জমে আলুতে পচঁন সৃষ্টি হয়েছিলো। মুন্সীগঞ্জ জেলায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই লক্ষে ১২-১৩ লক্ষ মেট্রিকটন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা ধরা হয়েছিল। লক্ষমাত্রা যাই হোক না কেন? বৃষ্টির পূর্বে বিভিন্ন কোল্ড স্টোরেজ ঘুরে দেখা যায় একেকটি কোল্ড স্টোরেজে ২০-২২ হাজার বস্তা উঠছে। সবেমাত্র উঠা শুরু হয়েছিল। পরপর তিন দিন বৃষ্টি আবার ২দিন রোদ উঠায় কৃষকরা হাফ ছেড়ে আলু উত্তোলনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল কিন্তু শনিবার সকাল, বিকাল সন্ধ্যায় পুনরায় মুষলধরে বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টিতে আলু চাষীদের যেন মরার উপর ক্ষরার ঘা। শিলা আর বৃষ্টিতে গুলিয়ে গেছে আলু। কৃষি অফিসের তথ্যানুযায়ী এ বছর জেলার ৬টি উপজেলার ৩৯ হাজার ৩শ’ হেক্টর জমিতে লক্ষমাত্রা নিয়ে আলু চাষ করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জ জেলায় ৬৭টি হিমাগার রয়েছে। এতে ধারনকক্ষমতা হচ্ছে ৪ লাখ মেট্রিকটন। ২৬ হাজার ৭শ ২০ হেক্টর জমির আলুর কৃষকরা তুলতে পারছে। বাকী জমির আলু কৃষকরা বৃষ্টির কারণে তুলতে পারেনি বলে জানিয়েছেন কৃষ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।

এ পর্যন্ত ১৩লক্ষ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন আলু উত্তোলনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু এখন চাষীদের আলু বৃষ্টির পানির নীচে। উত্তোলনকৃত আলুও পানিতে ভাসছে। এ যেন মরার উপর খড়ার ঘা।

গজারিয়া, সিরাজদিখান, লৌহজং, সদর, টঙ্গবিাড়ি ও শ্রীনগর উপজেলায় সর্বত্র চলছে কৃষকের মাতম। মাথায় বাজ পরেছে কৃষকদের। এখন কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।

কৃষক জমিগুলো শুকানোর প্রত্যাশায় থেকে সম্প্রতি জমিগুলো কিছুটা শুকালে পূর্ণদমে আলু উত্তোলন শুরু করেছিলো। কিন্তু শনিবার সকালে-বিকালে কয়েক দফা অনাকাক্ষিত বৃষ্টির পর ফের শিলা বৃষ্টি এ যেন মরার উপর ক্ষরার ঘা। কৃষকের সেই স্বপ্ন ভেস্তে গেছে। আলু জমিতে ফের পানি জমে যাওয়ায় আলু উত্তোলন বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে কৃষকরা তাদের আলু জমির গাছ, জমির মধ্যে বিছানো খড় তুলে আলুর আইল কেটে আলু উত্তোলণ শুরু করেছে এর মধ্যে মুষলধরে বৃৃষ্টি শুরু হওয়ায় তার জমির মধ্যে উত্তেলিত আলু মাথায় নিয়ে দিক বিদিক ছুটতে থাকে। গাছ উত্তোলন করে রাখা আলুগুলো বৃষ্টির পানির সাথে মিশে কাদাঁময় হয়ে আছে। খাল ডোবা সংগ্লগ্ন জমিগুলোর পানি কৃষক নালা কেটে খালের মধ্যে অপসারণ করছেন। আর যে সমস্ত জমিগুলো খাল নালা হতে দুরে সেগুলোর পানি কলসী ও বালতি ভরে ডোবা খালে এনে ফেলছেন।

গনাইসার গ্রামের কৃষক মোতালেব জানালেন এবার ১ কানি (দেড় হেক্টর) জমিতে আলু চাষ করছিলাম এর আগে বৃষ্টিতে ৭ গন্ডা (৪৯) শতাংশ জমির আলু পচেঁ নষ্ট হয়ে গেছে। শনিবার আলু উত্তোলন শুরু করেছিলাম কিন্তু হঠাৎ করে বৃষ্টি শুরু হওয়াতে জমির মধ্যে পানি জমে গেছে। এদিকে বৃষ্টির কারনে দ্রুত আলু উত্তোলন করতে গিয়ে উপজেলা ব্যাপী তিব্র শ্রমিক সংকট দেখা গেছে।
প্রতিটি শ্রমিক ৫০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হলেও আলু উত্তোলন করার শ্রমিক পাচ্ছেনা কৃষক। ব্যায় বহুল আলু চাষ করতে গিয়ে কৃষকদের স্বর্ণালংঙ্কার বন্ধক ধারদেনা সুদ ও ঋন নিয়ে চাষাবাদ করেছিলো তারা। বিগত কয়েক বছর আলুর মূল্য কম থাকায় লোকশান গুনে আসছিলো কৃষক। কিন্তু হঠাৎ করে এ বছর অনাকাক্ষিত বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আলু পচেঁ সব হারনোর ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে দিন কাটছে। এবার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ১০হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ হয়েছিলো। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিলো ৩লক্ষ ৫০হজার মেট্রিকটন। সবেমাত্র প্রায় ৩ হাজার হেক্টের আলুর জমি উত্তোলন করা হয়েছে। এই উত্তোলিত আলুর অধিকাংশই জমির মধ্যে স্তুপ করে রেখেছে কৃষক। এই জমির মধ্যে স্তুপ করে রাখা আলু গুলোর মধ্যেও পানি জমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।