খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২৬ মার্চ ২০১৭: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহল ঘিরে রোববারও অভিযান চলছে।
রোববার ভোর থেকে থেমে থেমে গুলি ও শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। দুপুর ২টার দিকে বিকট শব্দে পরপর সাতটি বোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়।
শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়নের নেতৃত্বে এ অভিযান শুরু হয়।
সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ শুরুর নয় ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের অভিযানে থাকা সেনা সদর দপ্তরের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান জানান, অভিযান চলবে।
তিনি বলেন, ‘অভিযানে আতিয়া মহল থেকে ৭৮ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ জন পুরুষ, ২১ জন নারী এবং অবশিষ্ট শিশু রয়েছে।’ সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জঙ্গি আস্তানা থেকে ১০/১২টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছে। ভিতরে কতজন জঙ্গি রয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। তারা বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় বোমা স্থাপন করেছে।’
জঙ্গিবিরোধী এ অভিযানের শুরুতে ওই ভবনে আটকে ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত। এরপর শুরু হয় মূল অভিযান।
দুপুর ২টা থেকে শুরু হয় মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। এক পর্যায়ে সাউন্ড গ্রেনেড ও গ্রেনেডের শব্দও শোনা যায় ভবনের আশপাশের এলাকা থেকে। পৌনে ৩টার দিকে ভবনটির পাঁচতলা থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটে গোলাগুলির শব্দ আর পাওয়া যায়নি।
দুপুর আড়াইটার দিকে তিনজন সেনা সদস্যকে আহত অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যেতে দেখা যায়। দুপুর ২টায় গুলি-বোমার আওয়াজ শোনার আগে একটি অ্যাম্বুলেন্সকে পুলিশ বেষ্টনি অতিক্রম করে ভেতরে ঢোকানো হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ওই জঙ্গি আস্তানায় অন্তত একজন নারী ও একজন পুরুষ জঙ্গি রয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন। কাউছার আলী ও মর্জিনা বেগম নামে ওই দুইজন স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে কয়েক মাস আগে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অভিযান শুরুর পর ওই ভবনে আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধারের চেষ্টা চলে।
এর আগে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে পরপর দুটি গুলির শব্দ শোনা গেছে। এরপর দীর্ঘ সময় আর কোনো শব্দ শোনা যায়নি।
অভিযানের বিষয়টি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রোকনউদ্দীন নিশ্চিত করেন।
সেনাবাহিনী এই অভিযানের নাম দিয়েছে ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’; এর আগে ঘটনাস্থলে সোয়াত এই অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন স্প্রিং রেইন’।
শনিবার সকালে অভিযান শুরুর আগেই গণমাধ্যমকর্মীসহ আশপাশের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয় নিরপাদ দূরত্বে। বন্ধ করে দেওয়া হয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ। ফায়ার ব্রিগেডের দুটি গাড়ি রাতেই ঘটনাস্থলে এনে রাখা হয়েছিল। সকালে সাঁজোয়া যান ও অ্যাম্বুলেন্স দেখা যায়।
অভিযানের সরাসরি সম্প্রচার না করতে আইএসপিআরের পক্ষ থেকে সংবাদ মাধ্যমকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এরআগে শুক্রবার সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা আতিয়া মহলের চারিদিকে সোয়াত ও বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল অবস্থান নেয়। অভিযানে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ দল সেখানে পৌঁছে। শুক্রবার রাতে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার গোলাম কিবরিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শুক্রবার ওই ভবন থেকে জঙ্গিদের বের হয়ে আত্মসমর্পণ করতে পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করে আহ্বান জানানো হলেও তাতে সাড়া মেলেনি। বরং পুলিশের আহ্বানের জবাবে ওই ভবনের ভেতর থেকে এক নারীকে চিৎকার করে বলতে শোনা গেছে— ‘আমরা আল্লাহর পথে আছি, আর পুলিশ শয়তানের পথে আছে।’ এরপর পাঁচতলা ওই ভবন ঘিরে রাখে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শিববাড়ির উস্তার মিয়ার আতিয়া মহলের নামের বাড়িতে তল্লাশির সময় নিচ তলা থেকে পুলিশ ও র্যা বকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে অভিযান শুরু করে বলে জানান সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রোকনউদ্দীন।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার সকালে সেখানে থেমে থেমে গুলির ঘটনা ঘটে।
বাড়ির মালিক উস্তার মিয়ার ছেলে রিপন জানান, জানুয়ারি মাসে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন ওই বাসার নিচতলায় ওঠেন। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে জানান তারা।
বাড়ির মালিক উস্তার মিয়া জানান, পাঁচ তলা ভবনের প্রতিটি তলায় ৬টি করে ইউনিট রয়েছে। এ ভবনে ২৭টি পরিবার বসবাস করে। শুক্রবার তারা সেখানে আটকা পড়ে। এর আগে পাশের আরেকটি চার তলা ভবনে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেয় পুলিশ।
পুলিশ জানায়, কিছুদিন আগে এই এলাকায় বাড়ির মালিকের কাছে ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য চাওয়া হয়। উস্তার মিয়া তার বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে থানায় যে তথ্য জমা দেন, সেগুলি যাচাই বাছাই করে পুলিশের সন্দেহ হয়। এই সন্দেহের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে পুলিশ তল্লাশিতে গেলে ভেতর থেকে তাদের উদ্দেশ্য করে বোমা নিক্ষেপ করা হয়।