Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1kখােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১ এপ্রিল ২০১৭: কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুই দিন ঘিরে রাখা বাড়িটিতে কাউকে পাওয়া যায়নি।গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ দাবি করেছে, সেখানে ছয়টি বোমা (আইইডি) পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটির ওজন পাঁচ কেজি করে। এগুলো আজ শনিবার সকালে নিষ্ক্রিয় করা হবে। এর আগ পর্যন্ত অভিযান স্থগিত থাকবে। তবে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা অব্যাহত থাকবে।

গতকাল দিনভর সন্দেহজনক ওই বাড়ি ঘিরে ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’ নামের অভিযান চালায় পুলিশ। ৪৯ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ছয়টায় অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) শফিকুল ইসলাম দাবি করেন, ওই আস্তানায় আনাস ওরফে আনিস (১৯-২০) এবং রনি (২২-২৩) নামের দুই জঙ্গি ছিল। তাদের ধারণা, বাড়িটি ঘেরাও করার আগেই জঙ্গিরা পালিয়ে গেছে। এই দুজন কুমিল্লায় বাসা নেওয়ার আগে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বাসা ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল। তারা দুজন পাঁচ মাস আগে নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়।
গত বুধবার বিকেল পাঁচটা থেকে কুমিল্লা নগরের দক্ষিণ বাগমারা-সংলগ্ন গন্ধমতী বড় কবরস্থানের পশ্চিম পাশে দেলোয়ার হোসেনের নির্মাণাধীন তিনতলা বাড়ির নিচতলায় জঙ্গি রয়েছে সন্দেহে বাড়িটি ঘিরে রাখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ সূত্র বলেছে, নিচতলার একটি কক্ষে জঙ্গিরা বোমা ও বিস্ফোরক নিয়ে অবস্থান করছিল বলে তাদের কাছে তথ্য ছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কারণে বুধ বা বৃহস্পতিবার সেখানে অভিযান চালানো হয়নি।

নির্বাচনের পরদিন গতকাল সকাল আটটা থেকে অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’। স্থানীয় প্রশাসন সকাল থেকে অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত সময়ের জন্য গন্ধমতি এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে মাইকিং করে। এলাকার গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

সন্দেহজনক আস্তানা থেকে আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত সবার যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। গণমাধ্যম কর্মীরাও এই নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করেন। বিশ্বরোড থেকে কোটবাড়ী সড়কে যাওয়ার পথেও যান চলাচল বন্ধ করা হয়। ওই এলাকায় অবস্থান করে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে শুরু হয় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’। এতে পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট, র্যা ব, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরাও অংশ নেন। শুরুতে জানালা দিয়ে গ্যাস ছোড়া হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েক দফা মহুর্মুহু গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এরপর থেকে ওই এলাকা ছিল অনেকটা নীরব। অভিযান ঘিরে ওই এলাকার আশপাশে ছিল উত্সুক মানুষের ভিড়। দুপুরের আগে গ্যাস বন্ধ করে দেওয়ায় স্থানীয় ব্যক্তিদের রান্না নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়।

অভিযানের বর্ণনা
সন্ধ্যা ছয়টায় অভিযান স্থগিত করে কুমিল্লা শহরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বর্ণনা দেন ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ১৫ মার্চ মিরসরাইয়ে দুই জঙ্গিকে আটক ও অর্ধ পোড়া একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। মুঠোফোনটির ফরেনসিক প্রতিবেদনের সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য মেলানো হয়। এর ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম থেকে এক জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বুধবার সকাল ১০টায় পুলিশ কুমিল্লার দক্ষিণ বাগমারার দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির খবর পায়। পুলিশ বুধবার বিকেল পৌনে চারটার দিকে বাড়িটি শনাক্ত করে। আনাস সকাল ১০টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, এ সময় রনি দরজা খোলা রেখে ঘুমিয়ে ছিল বলে বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেন পুলিশকে বলেছেন।
ডিআইজি শফিকুল দাবি করেন, এই দুই জঙ্গির ছবিও পুলিশের কাছে আছে। ১ মার্চ তারা বাড়িটি ভাড়া নেয়। তারা একটি ট্রলি ব্যাগে করে পাঁচ কেজি ওজনের দুটি বোমা ও ব্যাগের চারপাশে চারটি হ্যান্ডগ্রেনেড নিয়ে আসে। এ ছাড়া তাদের কাছে দুটি সুইসাইডাল ভেস্টও ছিল। তিনি বলেন, গতকাল বেলা ১১টার দিকে পুলিশ জানালা ভেদ করে ওই বাসায় গ্যাস ছোড়ে। এরপর তীব্র ঝাঁজালো অবস্থার কারণে তাদের দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। বেলা একটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় প্রথমে তিনতলা বাড়ির তৃতীয় তলায়, পরে দ্বিতীয় ও নিচতলায় যায় পুলিশ। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছু দেখা যায়নি। পরে টর্চলাইট এনে সেখানে ট্রলি দেখা যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল বলেন, ‘ধারণা করছি বাড়ি ঘেরাও করার আগেই জঙ্গিরা পালিয়ে যায়। ওদের নিয়ম অনুযায়ী, একজন বাসা থেকে বেরিয়ে গেলে বাসায় ফিরতে দেরি হলে আরেকজনও বেরিয়ে যায়।’