Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

24kখােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১ এপ্রিল ২০১৭: যমুনা নদীর নিচ দিয়ে টানেল নির্মাণে দাতাদের সহায়তা মিলছে না। প্রকল্পে কারিগরি সহায়তায় বারবার অনুরোধ করা হলেও বিশ্বব্যাংক, জাপানের জাইকা এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) সাড়া মিলছে না। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেলের পর যমুনা নদীর তলদেশে দ্বিতীয় টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এজন্য প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের দ্বিতীয় এ টানেলে রেলপথ সংযোজনের কথা ছিল। কিন্তু এখন উন্নয়ন সহযোগীদের সাড়া না পেয়ে খরচ কমানোর জন্য প্রকল্প থেকে রেল নির্মাণ বাদ দেয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের শুরুতেই দাতাদের অনাগ্রহ এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে। এ অবস্থায় সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সিদ্ধান্ত এসেছে, বৈদেশিক সহায়তা না পেলে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থেই তা বাস্তবায়ন করা হবে। এরপর থেকে নিজস্ব অর্থেই সম্ভাব্যতা যাচাই করা শুরু হয়েছে। তবে এতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিলম্বিত হতে পারে।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৫-২৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরের সময় যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে জাপান আগ্রহ দেখায়। এ প্রকল্পসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে জাপান সরকারের ঋণ প্রদানের বিষয়ে যৌথ ইশতেহার স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু এখন জাইকা জানিয়ে দিয়েছে, তারা প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করবে না। এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

এ প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, উন্নয়ন সহযোগীদের অগ্রাধিকার এবং বাংলাদেশের অগ্রাধিকার একসঙ্গে মিলে গেলে তারা সাধারণত সহায়তা দিয়ে থাকে। তিনি জানান, বিশ্বব্যাংকের কাছে এখনও ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প প্রস্তাব দেয়া আছে। সেখান থেকে প্রতিবছর তারা সর্বোচ্চ ২ বিলিয়ন ডলার দিয়ে থাকে। সে হিসাবে অনেক প্রকল্প পাইপলাইনে জমা হয়। এ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও সেরকম কিছু হতে পারে। তবে আমাদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বিশ্বব্যাংক বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি ।

সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত সরকারের নিজস্ব তহবিলের অর্থেই হাতে নেয়া হচ্ছে ‘যমুনা নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা’ শীর্ষক প্রকল্পটি। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প প্রস্তাব এখন পরিকল্পনা কমিশনে। সব প্রক্রিয়াকরণ শেষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে অনুমোদন পেলে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

প্রকল্প প্রস্তাবে সেতু বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা। এ তিন নদী দেশকে ভৌগোলিকভাবে উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল- এ চার ভাগে বিভক্ত করেছে। যমুনা নদী ভারত থেকে উৎপত্তি হয়ে প্রথমে পদ্মা এবং এরপর মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। যমুনার প্রশস্ততা অনেক বেশি। বর্ষাকালে ৮ থেকে ১৩ কিলোমিটার প্রশস্ত হয়ে থাকে। এ নদী দিয়ে গড়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয় এবং ৬০০ মিলিয়ন টন পলি বহন করে থাকে। পলি বহনের বিবেচনায় যমুনা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং পানি প্রবাহের দিক থেকে বৃহত্তম নদী। পলি জমার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সেতুর পরিবর্তে টানেল নির্মাণ সুবিধাজনক হওয়ায় প্রাথমিক পর্যায়ে বালাশী এবং বাহাদুরাবাদ অবস্থানকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার মাধ্যমে টানেলের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে। যমুনা টানেল বাস্তবায়নের পদক্ষেপ হিসেবে সম্ভাব্য সমীক্ষা পরিচালনার জন্য বিশ্বব্যাংক, জাইকা ও আইডিবির কাছে কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়। কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নিজস্ব অর্থায়নে সমীক্ষা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল এক ডিও (আধা সরকারিপত্র) পত্রে মুখ্য সচিব উল্লেখ করেন, বাস্তবে যদি রেলপথ রাখার কারণে নির্মাণ ব্যয় অনেক বেড়ে যায় সেক্ষেত্রে রেলপথ বাদ দিয়ে শুধু সড়কপথ নির্মাণ করা যৌক্তিক হবে। অন্যদিকে ২০১৪ সালের ৬ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গাইবান্ধা জেলার বালাশীঘাট এবং জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ ঘাটে সংযোগ টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

অর্থায়ন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডির বিশ্বব্যাংক উইংয়ের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মাহমুদা বেগম বুধবার বলেন, আমরা সহায়তা চেয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের অগ্রাধিকারের সঙ্গে প্রকল্পটি মেলেনি। তাই তারা সাড়াও দেয়নি। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক সামাজিক খাতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জাইকা ডেস্কের সাবেক প্রধান ও ইআরডির অতিরিক্ত সচিব শাহ আমিনুল জানান, জাইকা অর্থায়ন করবে না বলে জানিয়েছে। তারা এর চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়ে অন্য প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। তাছাড়া সব উন্নয়ন সহযোগী প্রকল্পে যে সহায়তা করবে, এমন কোনো কথাও নেই।