খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২ এপ্রিল ২০১৭: ভাষা সৈনিক, বীরমুক্তিযোদ্ধা ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেছেন, ভূমি সেবা প্রদানকারী ও সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে আন্তরিক সেতু বন্ধন তৈরিতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক থাকতে হবে। তিনি বলেন, সেবা প্রদান ও সেবা গ্রহণে অস্বস্তিকর বিষয় হচ্ছে দুর্নীতি। এছাড়া মামলা মোকদ্দমা অনেক সময় ভূমি সেবা প্রদানে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন ও ডিজিটালাইজেশন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা গেলে ভূমি সেবার মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
শনিবার (১লা এপ্রিল) রাজধানীর বিয়াম অডিটোরিয়ামে সারাদেশে ভূমি সেবা সপ্তাহ পালন উপলক্ষ্যে র্যালী শেষে আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সকালে ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফের নেতৃত্বে ভূমিমন্ত্রণালয় ও এর আওতাভুক্ত দপ্তর এবং বিভাগীয় কমিশনার ঢাকা অফিসের ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারিরা ভূমি সেবা সপ্তাহ র্যালিতে অংশ নেন। র্যালিটি আরপিএটিসি, ইস্কাটন হতে বিয়াম ফাউন্ডেশনে গিয়ে শেষ হয়। বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে ভূমি সেবা সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমিমন্ত্রী শরীফ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বোমা, খুন, জখম, জঙ্গিদের কখনও প্রশ্রয় দেয় না। এগুলো সরকারের উন্নয়ন কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ অশুভ অপশক্তিকে প্রতিহত করতে তিনি সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, একটি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জাতি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আধুনিক উন্নত রাষ্ট্রের সাড়িতে দাঁড় করাতে উন্নয়ন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার। মন্ত্রী বলেন, ভূমি মালিকানাকে নিরাপদ ও টেকসই করতে ভূমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, সবকিছুর পরিবর্তন রাতারাতি সম্ভব নয়, পরিবর্তনের জন্য মনমানসিকতা ও দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। মন্ত্রী আরও বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে জমির মালিকানা বিরোধ অনেক কমে আসবে। ভূমি অধিকার যাতে কোনোভাবেই ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। পাঠ্যপুস্তকে ভূমি ব্যবস্থাপনার বিষয় অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি সংশ্লিষ্টদের ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন ও ত্রুটি মুক্ত করতে প্রচুর অনুশীলন করার আহ্বান জানান।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেছবাহ উল আলম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ভূমি সেবা শুধু এক সপ্তাহের জন্য নয়, সারাবছর জুড়ে সেবা প্রদানকারীরা ভূমি সেবা প্রদান করে যাবেন। তিনি বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনাকে এনালগ পদ্ধতি থেকে ডিজিটালাইজেশন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বহাল রাখতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান বলেন, রেকর্ড রুমগুলো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ই-মিউটেশনের কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, সেবা গ্রহিতাগণ অনায়াসেই ঘরে বসে ই-মিউটেশন এর কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। তিনি বলেন, সৎ নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার মধ্যে থেকে টাইম কোড ও ভিজিট (টিসিভি) ব্যবহার করে জনগণের চাহিদা মোতাবেক সেবা প্রদান নিশ্চিত করা হচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, দালাল শ্রেণিকে খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে যারা ভালো কাজ করছেন তাদের পুরস্কারের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি ফেসবুক ও ওয়েবসাইটের ব্যবহার এবং জনসাধারণের মতামত গ্রহণ ও সে অনুযায়ী নিষ্পত্তির মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান।
ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দীন আহমদ এর সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেছবাহ উল আলম, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহফুজুর রহমান, ভূমি আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ঢাকা জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দীন ও ঢাকা বিভাগের এসিল্যান্ডদের পক্ষে মিরপুর ভূমি সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অঞ্জন কুমার সরকার বক্তব্য রাখেন।