Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

6খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২ এপ্রিল ২০১৭:  ব্যাংকঋণ অনুমোদন, শিল্প-কারখানা স্থাপনের অনুমতি এবং পণ্য আমদানি ও রপ্তানির অনুমোদন সব কিছুই এখন ঢাকাকেন্দ্রিক। এই প্রবণতা কমিয়ে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করার দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শনিবার জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চিটাগাংয়ের উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে চট্টগ্রামের শীর্ষ ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও চেম্বার নেতারা এই দাবি জানান। ‘চট্টগ্রামের শিল্প ও বাণিজ্যের সম্ভাবনা, সমস্যা ও সমাধান’ শীর্ষক বৈঠকটি চট্টগ্রামের পাঁচতারা হোটেল র‍্যাডিসনে অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে বিএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর আলী হোসেন বলেন, ‘একটি পণ্য আমদানিতে ডেমারেজ পরিশোধের অনুমতি পেতে আমাকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা থাকলেও তাদের সেই ক্ষমতা নেই। স্বয়ংক্রিয় অনুমতির এই যুগে কেন ঢাকার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে? যেকোনো অনুমোদনের জন্য আমাদের ঢাকায় যেতে হচ্ছে। এতে কী পরিমাণ সময় ও অর্থ এবং ভোগান্তি হয় তার আর্থিক মূল্য বিশাল। ’
অনুষ্ঠানে ভোগ্যপণ্যের বড় আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ১০ বছর আগে ভোগ্যপণ্যের আমদানি ছিল ৫০ লাখ টন। এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ১০ লাখ টন। কিন্তু বন্দর সুবিধা কতটা বেড়েছে? সঠিক বন্দর সুবিধা না থাকায় এই সময়ে কয়েক হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি বা ডেমারেজ দিতে হয়েছে। পণ্য আমদানির সব অনুমোদন চট্টগ্রাম থেকে দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে ইসলামী ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, ‘চট্টগ্রামের লোকেরা ব্যাংকের টাকা দেয় না এমন একটা কথা প্রচলিত আছে, কিন্তু আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে যত টাকা ব্যাংকঋণ দেওয়া হয়েছে তার কত শতাংশ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা পেয়েছে তা তদন্ত করে দেখা উচিত। ’
আহসানুল আলম আরো বলেন, চট্টগ্রামসহ কেউই এখন ১ থেকে ৫ শতাংশ কমিশন না দিয়ে ঋণ পাচ্ছে না। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণ পাওয়া এখন আরো কঠিন। কারণ তাদের পাঁচ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় গিয়ে সচিবালয়ে ধরনা দিতে হয়। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম বলেন, ‘দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটি মাথায় রেখেই আগামী ১০০ বছরের জন্য চট্টগ্রামকে ঘিরে বড় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। আগামী ১০ বছরে চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে এক লাখ কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে, সুতরাং স্বপ্নটাকে বড় করে দেখতে হবে। ’
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে সারা দেশের উন্নয়ন। শুধু চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরেই সারা দেশের অর্থনীতির আমূল পরিবর্তন সম্ভব। সেই পরিকল্পনা নিতে হবে এখনই।
বিজিএমইএ চট্টগ্রামের প্রথম সহসভাপতি মঈন উদ্দিন আহমেদ মিন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০২১ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে চট্টগ্রামকে ঘিরে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
আলোচনায় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম চট্টগ্রামের সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, আগামীর চট্টগ্রাম কেমন হবে তা নিয়ে কোনো তথ্যভিত্তিক গবেষণা নেই। বেসরকারি অর্থায়নে প্রয়োজনে বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে একটি গবেষণা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অগ্রাধিকার ঠিক করে প্রস্তাবনা দেওয়া যেতে পারে।
জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) চিটাগাং কসমোপলিটনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নিয়াজ মোরশেদ এলিট বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রামের গুরুত্ব নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে। একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।
দৈনিক আজাদীর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেসিআই সভাপতি গিয়াস উদ্দিন।
অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রামের সাবেক সিটি মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সামশুল আরেফিন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (সদস্য) জাফর আলম, চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সাবেক সভাপতি কামরুন মালেক, রূপালী ব্যাংকের পরিচালক অধ্যাপক সেলিম উদ্দিন, ম্যাফ শুজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জসীম ইউ আহমেদ প্রমুখ।