Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ৩ এপ্রিল ২০১৭: 50২০১৬ সাল পর্যন্ত রামনিওয়াশ আগরওয়ালা রংপুর অঞ্চলের প্রায় ৩০ টি উপজেলার কৃষকদের মাঝে ৬০০ এর বেশি স্থানে জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি কল্পে সচেতনতা বৃদ্ধি মূলক নাটিকা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন । যার ফলশ্র“তিতে এ অঞ্চলে জৈব সারের ব্যবহার পূর্ব তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বিগত ২০১০-২০১৬ইং সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০০ প্রান্তিক চাষীকে কেঁচো সার তৈরির উপকরণ সরবরাহ করেন এবং তাদের উৎপাদিত কেঁচো সার বিক্রয়ের ব্যবস্থা করেন। তার উদ্ভাবিত জৈব সারে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সবগুলো উপাদান বিদ্যমান । রাসায়নিক বিশ্লেষণে প্রাপ্ত মূখ্য, গৌণ উপাদান ও জৈব পদার্থের মূল্য বিদেশ থেকে আমদানিকৃত রাসায়নিক সারের বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম। এক্ষেত্রে ১০০ কেজি জৈব সারের প্রাপ্ত গুণাগুণের আনুমানিক মূল্য দাড়ায় প্রায় ২১৮৫/- টাকা অথচ কৃষক পর্যায়ে এই জৈব সার সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ৯০০/- টাকায় । ১৯৯৭ইং সাল থেকে শুরু করে অদ্যবধি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সিটিউট এর তিন জন মহা-পরিচালক, কৃষি স¤প্রসাণের এক জন মহা-পরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়- ময়মনসিংহ এর বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপক বৃন্দ, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন এর উর্দ্ধতন কর্মকর্তা বৃন্দ ও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান, এনজিও, বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন অনেক কর্মকর্তারা অন্নপূর্ণা জৈব সারের উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিদর্শনে এসেছেন এবং বহুল প্রশংসা করেন। রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলার সাধারণ কৃষকরা সহ সরকারী-বেসরকারী অনেক কৃষি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যেমন, বারি, বিএডিসি, ব্র্যাক, ফেরদৌস বায়োটেক, স্বরূপ এগ্রিকালচার, কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের আইএপিপি প্রজেক্ট এ সার ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনে আশানুরূপ ফল পাচ্ছে এবং এর চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি হচ্ছে। অন্নপূর্না জৈব সারের উদ্যোক্তা রামনিবাস আগরওয়ালার মনমানসে মাটি, গো-সম্পদ, কৃষি তথা বিশ্ব অর্থনীতির যে তত্ত্ব গথিত আছে তা কৃষি উন্নয়নে জৈব সারের গুরুত্ব খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করছে। কৃষির মূল চালিকা শক্তি মাটি ও গো-সম্পদ যে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে কৃষি উৎপাদনে সহায়তা করে এবং একে অপরের পরিপূরক তার সুন্দর একটি ব্যাখ্যা এখানে পাওয়া যায়। মাটি হতে বিভিন্ন ধরণের খাদ্যশস্য, অর্থকরী শস্য, শিল্পের কাঁচামাল ইত্যাদি উৎপাদিত হয় তেমনি গো-সম্পদ হতেও এগুলো প্রাপ্ত হয় এবং এর মাধ্যমেই বিশ্ব স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির সৃষ্টি ও পরিচালিত হয়। এটি একটি প্রকৃতির নিয়ম।
বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভরশীল দেশ। এদেশের ৮০ ভাগ জনসংখ্যা সরাসরি কৃষির সহিত জড়িত। এখানকার প্রধান ফসল যেমন, ধান, গম, আলু, পাট, তামাক, ভুট্টা ইত্যাদি। বাকী ২০ ভাগ জনসংখ্যাও যেকোন দিক দিয়েই হোক কৃষির উপর নির্ভরশীল। কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন উদ্যোগ বা টেকনোলজি জীবন নির্বাহ ও উন্নতি লাভ করার এক বড় মাধ্যম। কৃষি উৎপাদনে সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সার সাধারনত ২ ভাগে বিভক্ত (১) জৈব সার (২) রাসায়নিক সার
জৈব সার নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে উদ্ভিদ ও প্রানীর পচনশীল বর্জ্য বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রাপ্ত সার অংশ। জৈব সার মাটিতে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের খাদ্য উপাদান সরবরাহ করে। এটি মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, মাটির বায়ু চলাচল বৃদ্ধি করে এবং মাটির তাপমাত্রা ও আদ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে। মাটির অনুজৈবিক ক্ষমতা, মাটির জৈব পদার্থের উপর নির্ভর করে। জৈব সারে উৎপাদিত ফসলের গুণগতমান পুষ্টি গুণ ও স্বাদ অধিক হয়।
রাসায়নিক সারঃ অধিক খাদ্য উৎপাদন করার জন্য কৃত্রিম ভাবে রাসায়নিক উপাদান দিয়ে বানিজ্যক ভাবে উৎপাদিত সার। যেমন, ইউরিয়া, ডিএপি ইত্যাদি। এ রাসায়নিক সার অধিক পরিমাণে ব্যবহারে মাটিতে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, মাটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হয় এবংখাদ্যের স্বাদ গুণগত মান কমে যায়।
একই সময়ে সে যদি অসম ভাবে কোন সার যথা- কেবল ইউরিয়া প্রয়োগ করে তাহলে মাটির অন্যান্য খাদ্য উপাদান আরো হ্রাস পায়।
জৈব পদার্থ বা জৈব সার মাটির উর্বরতা ব্যবস্থাপনার অতিব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে একটি উত্তম মাটিতে কম পক্ষে শতকরা ২% জৈব পদার্থ থাকা কাম্য কিন্তু মাটি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় যে, অধিকাংশ মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ শতকরা ১% ভাগেরও কম। জৈব সার, কম্পোষ্ট, সবুজ সার মাটিতে প্রয়োগ না করায় ফসল উৎপাদন দিন দিন আশংকা জনক হারে কমে যাচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগমী দশকে দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে এবং খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। এ অবস্থা থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে মাটির স্বাস্থ্য ভাল করে মাটিকে বাঁচাতে হবে। এর একমাত্র উপায় মাটিতে অধিক হারে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করার জন্য চাষীদের আগ্রহ করে তুলতে হবে এবং জৈব সারের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের ৮০ লক্ষ হেক্টর জমির জন্য হেক্টরে ১টন হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লক্ষ মেট্রিকটন জৈব সারের প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশে জৈব সারের প্রকল্পের একটি সম্ভাবনাময় লাভ জনক উন্নত ভবিষ্যৎ রয়েছে।