খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল ২০১৭: ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পেছনে ভালো একটা চুক্তি ছিল বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ‘ডিপ্লোমা কৃষিবিদ মহাসম্মেলন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের সম্পদ গ্যাস, এই গ্যাস বিক্রি করতে চাইলো আমেরিকা। কিনবে ভারত। আমেরিকান কোম্পানি গ্যাস তুলবে ভারতের কাছে বিক্রি করবে। এই প্রস্তাব যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন আমাকে দিয়েছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘দেশে কত গ্যাস আছে আমি এখনও জানি না। আমাদের দেশের সামান্য কয়েকটা মানুষ এই গ্যাস সুবিধা পাচ্ছে। গ্যাসের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। দেশের সম্পদ, জনগণ এর মালিক।’
তিনি বলেন, ‘এই গ্যাস কত আছে আমি জানি না। কিভাবে আপনাদের কথা দেবো, ক্ষমতায় গেলে আপনাদের কাছে গ্যাস বিক্রি করবো। দেশের সম্পদ, জনগণ এর মালিক। আগে জনগণের চাহিদা আমাকে পূরণ করতে হবে। চাহিদা পুরণের পর পঞ্চাশ বছরের মজুদ রাখবো ভবিষ্যত বংশধরদের জন্য। অতিরিক্ত গ্যাস যদি থাকে, তখন এটা আমরা বিক্রি করতে পারি। তার আগে এটা আমরা বিক্রি করতে পারি না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব স্বাভাবিকভাবে অত বড় একটা দেশের প্রেসিডেন্ট, তাকে আমি এ কথা শুনিয়েছি। এটাতো আর কিছু না, নাখোশ হওয়া স্বাভাবিক। বিএনপি তাদেরকে মুচলেকা দিয়ে দিলো যে, ক্ষমতায় গেলেই এই গ্যাস বিক্রি করবে। এর সাক্ষী আমি।’
তিনি বলেন, ‘তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো লতিফুর রহমান। তার বাসায় আমাদেরকে দুপুরের খাবারের দাওয়াত দিলো। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আমি এবং জিল্লুর রহমান সাহেব। আর বিএনপি থেকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আর মান্নান ভূঁইয়া, তাদের মহাসচিব- এই চারজন। আর আমেরিকা থেকে তাদের বিশেষ দূত জিমি কার্র তিনি আসলেন। ওখানে বসেই এই আলোচনা।’ আমি বলে দিলাম, আমার যা বলার ছিল, আমি তা আপনাদের প্রেসিডেন্টকে বলে দিয়েছি। ঢাকায় যখন তিনি এলেন তখন বলেছি, আমাকে যখন আমেরিকায় দাওয়াত করে নিয়ে গিয়েছিল তখনও বলেছি। কাজেই আমার এই নীতির কখনও পরিবর্তন হবে না। এই আলোচনার এক পর্য়ে যখন শেষ হলো আমরা চলে আসলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেতারা ওখানে থেকে গেলেন। তাদের মধ্যে যে চুক্তি হলো দেশের সম্পদ বেচার। চুক্তি করেই তারা ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসলো। ভোটের দিক থেকে আওয়ামী লীগ কিন্তু বেশি ভোট পেয়েছে। কিন্তু সিট পেলো না। এটা যে একটা বিরাট চক্রান্ত ছিল তা আর বোঝার বাকি রইলো না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সরকারে আসতে পারি নাই। আমরা বিরোধী দলে। কিন্তু দেশের যে উন্নয়ন রেখে গেলাম। ১৯৯৬-২০০১ পর্ন্ত বাংলাদেশের জন্য ছিল স্বর্ণযুগ। এরপর বাংলাদেশ খাদ্য ঘাটতি হয়ে গেল।’
তিনি বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিয়ে গেলাম, সে বাংলাদেশকে তারা (বিএনপি) আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে রূপান্তর করলো। প্রত্যেকটি কাজেই বাংলাদেশ পেছালো। পেছনে আসার কারণ কিছুই না, ওই যে তাদের যে নীতি বাংলাদেশ দরিদ্র থাকবে। মানুষ ভুখানাগ্গা থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ গরীব থাকবে। এগুলো দেখিয়ে দেখিয়ে তারা বিদেশ থেকে সাহায্য আনবে, ভিক্ষা আনবে। সেগুলো তারা (বিএনপি) নিজেরা খাবে, দেশের মানুষ ওভাবেই থাকবে। এই হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সবচেয়ে বড় তফাৎ, নীতির বিষয়ে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী বিএডিসি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি সরকার। সাধারণ মানুষের কল্যাণে যা যা প্রয়োজন, সেগুলো বিএনপি বন্ধ করে দেয়। বিএনপি-জামায়াত কখনও বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চায়নি। তারা শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য করবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি যখন বিরোধী দলে, আমরা সরকারে। বিএনপি নেতারা পার্লামেন্টে বললেন, বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া ভালো না। কারণ বিদেশ থেকে ভিক্ষা পাওয়া যাবে না। তাদের নীতিটা হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণকে ভিক্ষুক বানিয়ে রাখা।
তিনি বলেন, ‘আমরা পার্লামেন্টে এ কথা তাদেরকে বললাম, আপনারা তো ভিক্ষুকের সর্দারের মতো দেশ চালাবেন। আমরা ভিক্ষুকের সর্দার হতে চাই না। আমরা বাংলাদেশের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করি। আওয়ামী লীগ একমাত্র দল, আমি বলতে পারি। আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা বিরোধী দলে থাকতেই তৈরি করে রাখি। কাজেই আমরা সরকারে আসার পর, আমাদের পদক্ষেপের ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘গবেষণা ছাড়া কখনও কোনও উৎপাদন বাড়তে পারে না। ‘৯৯৬ সালে এসে ১২ কোটি টাকা গবেষণার জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলাম।’
পে-স্কেল করে আর বেতন বাড়ানো হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রেণি-ট্রেনি এখন আর আমরা বলি না। যার পে-স্কেল যেখানে আছে, সেই মর্দাই সে পাবে। সেটাই আমরা এখন নির্দেশ দিয়ে দিয়েছি। আরেকটা পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি, পে-কমিশন করে এত বছর পরে বেতন বাড়ানো, সেটা না। প্রতি বছর হিসেব করা হবে আমাদের মূল্যস্ফীতি কত বাড়ালো। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই প্রতিবছর সবার বেতনটা যেন বৃদ্ধি পায়, সে ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।’