খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ১০ এপ্রিল ২০১৭: গাইবান্ধা সদর সাব-রেজিষ্ট্রারের স্বাক্ষর জাল করে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখায় পৌঁনে পাঁচ লাখ টাকার চারটি পে-অর্ডার ভাঙাতে গেলে জনগণের চাপের মুখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পে-অর্ডারগুলো জব্দ করে।
ওইসব পে-অর্ডার গত ৬ এপ্রিল সোনালী ব্যাংক থেকে ইস্যু করা হয় এবং ওই দিন পে-অর্ডারের বিপরীতে জমির দলিলও সম্পাদন হয়। পরবর্তীতে সাব-রেজিষ্টারের স্বাক্ষরিত চালান মুলে সরকারের কোষাগারে জমা হওয়ার কথা থাকলেও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি রেজিষ্ট্রি অফিস ও ব্যাংকের একটি চক্রের যোগসাজসে ভাঙ্গানোর চেষ্টা কালে তা ধরা পড়ে।
গাইবান্ধা সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে স্থায়ী সাব-রেজিষ্টার না থাকায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাব রেজিষ্টার মর্তুজা রেজা গাইবান্ধা সদর সাব-রেজিষ্টারের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনের জন্য গাইবান্ধা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে দলিল সম্পাদন করে থাকেন।
সাব-রেজিষ্টার মর্তুজা রেজা মুঠোফোনে জানান, গত ৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ওইসব পে-অর্ডারে জমির দলিল কার্য সম্পাদন করা হয়। দলিল সম্পাদনের পর দলিলসহ পে-অর্ডার গুলো রেজিষ্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী নুরুল ইসলামের হেফাজতে থাকার কথা। কিন্তু দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কিভাবে হাতে পেলেন তা জানতে অফিসের কর্মচারিদের সাথে কথা বলেছি। তিনি আরও বলেন, আমি ওই পে-অর্ডার ভাঙ্গানোর জন্য কোথাও স্বাক্ষর দেইনি। এমনকি কোন চালানও ব্যাংকে পাঠাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনালী ব্যাংকের কয়েকজন গ্রাহক জানান, রোববার বিকেলে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ১০০ টাকার চারটি পে-অর্ডার ভাঙ্গাতে আসেন দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুর-এ হাবিব টিটন। ভারপ্রাপ্ত ব্যাংক ম্যানেজার আব্দুর রায়হান একটি পে-অর্ডার পাশ করেন। তিনি অপর তিনটি পে-অর্ডার পাশ করার চেষ্টা কালে ব্যাংকে আগত গ্রাহকরা হৈ চৈ শুরু করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি টিটনকে নিয়ে ব্যাংক থেকে সটকে পড়েন ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার আব্দুর রায়হান।
সন্ধায় ঘটনাটি শহরে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাংকে ছুটে যান সংবাদকর্মীরা।তারা ব্যাংকে গিয়ে ম্যানেজারকে না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম আব্দুর রউফ আকন্দের সাথে কথা বলেন।ডিজিএম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ব্যাংক ব্যবস্থাপক আব্দুর রায়হানকে মোবাইল ফোনে ব্যাংকে ডেকে পাঠান এবং সংবাদকর্মীদের তথ্য দিতে বলেন।
প্রায় এক ঘন্টা পর ম্যানেজার ব্যাংকে আসেন। তিনি বলেন, ১লাখ ২৮ হাজার ৮০০,৮৬ হাজার ৩০০,১ লাখ ২৯ হাজারের দুইটিসহ মোট চারটি পে-ওর্ডার ভাঙ্গাতে আসেন সভাপতি টিটন।তবে এর বেশি কিছু জানাতে রাজি হননি তিনি
গাইবান্ধা সদর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের একটি সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন থেকে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুর-এ হাবিব টিটন সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখার কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজসে দলিল সম্পাদনের পর সরকারী কোষাগারে জমা হওয়া সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সংরক্ষিত বিভিন্ন অংকের পে-অর্ডার ভাঙ্গিয়ে সভাপতি টিটন কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।
তিনি নামে বেনামে গাইবান্ধা শহর ছাড়াও রংপুর ও ঢাকায় আলিশান বাড়ী করেছেন। সুত্র মতে এই চারটি পে-অর্ডার ভাঙ্গানোর চেষ্টার সুষ্ঠ তদন্ত হলে পূর্বের কোটি কোটি টাকার পে-অর্ডার ভাঙ্গানোর তথ্য বেড়িয়ে আসবে।
সূত্র আরও জানায়, শুধু সরকারি পে-অর্ডার ভাঙ্গানোই নয়, দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নুর-এ হাবিব টিটনের বিরুদ্ধে জাল দলিল সম্পাদন, দাতা-গ্রহিতার ছবি পরিবর্তন, বালাম বইয়ের পাতা ছেড়া ও পরিবর্তন করা, জাল-খারিজ পর্চা এবং ডিসিআর তৈরি করা সহ নানা অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। গত ১২ মার্চ এসব অভিযোগের তদন্ত করেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ মনিরুজ্জামান।