Mon. Jun 16th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

43খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০১৭:  আজকাল সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকে নাকি হ্যাংআউট, চেক-ইন, ছবি শেয়ার না দিলে ভালোবাসা জমে না। ভালোবাসা কতটুকু জমেছে, তা নাকি বোঝা যায় ফেসবুকের প্রোফাইল থেকে। আসলেই কি তাই?
‘বড্ড এক অদ্ভুত সময়ে বাস করছি আমরা। দাম্পত্য জীবনের ছবি ফেসবুকে শেয়ার না করলে, সবাই ভাবেন আমাদের মধ্যে কি না কি ঝামেলা চলছে।’ এভাবেই আক্ষেপ করে বাস্তবতা নিয়ে কথা বলছিলেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা তাসনিম ফারহা (ছদ্মনাম)। প্রেম করে বিয়ে করেছেন তিনি; দাম্পত্য জীবনের বয়সটাও চার পেরিয়ে পাঁচে পড়বে এই বৈশাখে। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়ে তেমন আগ্রহ না থাকলেও বন্ধু-সহকর্মীদের ফেসবুক নিয়ে মাতামাতিতে বিরক্ত বোধ করেন তাসনিম। তাঁর প্রশ্ন, ফেসবুকে ছবি কিংবা চেক-ইন দেওয়াই কি দাম্পত্য আর ভালোবাসার মাপকাঠি?

সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রেম দেখানোই কি আসল প্রেম? ‘কেন তুমি ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামে ছবি শেয়ার দাও না? কী ঝামেলা চলছে? মান-অভিমান চলছে কি?—এমনসব প্রশ্ন অনেককে শুনতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অলব্রাইট কলেজের গবেষকেরা বলছেন, প্রেমের সম্পর্কের কথা ফেসবুক কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করলেই যে আপনি সুখী, তা প্রমাণিত হয় না। উল্টো গবেষকেরা দেখেছেন, যাঁরা খুব সুখী, তাঁরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে মোটেও পরোয়া করে না। ভালোবাসা নিজেদের মধ্যেই রাখতে পছন্দ করেন সুখী প্রেমিক-প্রেমিকা আর দম্পতিরা।
অবিশ্বাস আর অনিরাপত্তাই কি অস্বস্তি?
নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লিডিয়া এমেরি কানাডার ১০৮টি দম্পতির ওপরে পরীক্ষা চালিয়ে দারুণ একটি তথ্য পেয়েছেন। লিডিয়া বলেন, ফেসবুকে যাঁরা ‘ইন অ্যা রিলেশনশিপ’ ক্যাটাগরিতে থাকেন, তাঁরাই মূলত প্রেম আর সম্পর্ক নিয়ে বেশি বেশি হতাশায় ভোগেন। ভালোবাসা হারানোর অনিরাপত্তাবোধে ভোগেন। এমনকি প্রেম আর ভালোবাসা-সম্পর্কিত ছবি আর পোস্ট বেশি শেয়ার করেন।
ভালোবাসার দাঁড়িপাল্লা কি ফেসবুক?
ফিনল্যান্ডের আল্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, দম্পতি কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকাদের ফেসবুকে উপস্থিতি দেখেই বন্ধুবান্ধবেরা পরিমাপ করেন—কেমন তাঁদের সম্পর্ক। গবেষকেরা ৪০০ দম্পতি আর প্রেমিক-প্রেমিকার কাছের বন্ধুদের প্রশ্ন করে দেখেছেন, সবাই ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রামের একান্ত মুহূর্তের ছবি আর ভালোবাসা-সম্পর্কিত পোস্ট দেখেই মেপে নেন কতটা সুখী তাঁরা। পারসোনালিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকোলজি বুলেটিন জানাচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে দম্পতি আর প্রেমিক-প্রেমিকাদের ছবি দেখে ভালোবাসা পরিমাপ করা নেতিবাচক মনোভাবেরআ বহিঃপ্রকাশ। সুইডেনের চালমার্স স্কুল অব টেকনোলজির বায়োইনফরমেটিকস ও সিস্টেম বায়োলজির গবেষক সুমাইয়া সাঈদ বলেন, আপনি কতটুকু সুখী, তা আপনার ফেসবুকের পাতা থেকে বোঝা সম্ভব নয়; বোঝানো সম্ভবও না। যাঁরা এমনটা ভাবেন, তাঁরা আসলে ভুল ভাবেন। নিজেদের সম্পর্কের মধ্যে ফেসবুক কিংবা ইনস্টাগ্রামের উপস্থিতি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করা ঠিক না। ছবিতে লাইকের সংখ্যা কখনো ভালোবাসার মাপকাঠি হতে পারে না।
ফেসবুকের দেয়ালই কি সব?
সম্পর্কের মধ্যে কোনো সংকট কিংবা ঝামেলা সৃষ্টি হলেই আমরা হুট করে ফেসবুকের নীল দেয়ালে হতাশার মহাকাব্য লিখে ফেলি। কিংবা একান্ত মুহূর্তের আবেগটাই তুলে ধরি ফেসবুকের দেয়ালে। মনোবিদেরা বলছেন, নিজের মনের সব কথা ফেসবুকে তুলে ধরাটা যেমন নেতিবাচক, তেমনি এতে সঙ্গীর সঙ্গে দূরত্ব তৈরির আশঙ্কা থাকে।
খেয়াল রাখুন
* অন্যের ফেসবুক প্রোফাইল দেখে তার প্রেম কিংবা দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়ে কখনোই প্রশ্ন করবেন না।
* অন্যের ‘প্রাইভেসি’ বিষয়টি সম্পর্কে খেয়াল রাখুন।
* কিশোর বয়সের কেউ প্রেমের সম্পর্কে থাকলে, তাদের ফেসবুকের আচরণ বিষয়ে ইতিবাচক পরামর্শ দিন।
* নিজের ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে সময় কাটানোর সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ ভাববেন না।
* সম্পর্কে জটিলতা দেখা দিলে তা নিয়ে ফেসবুকে হতাশা প্রকাশ না করাই বিচক্ষণ ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ।
* অন্যের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে বন্ধুদের আড্ডায় গল্প করবেন না, কিংবা অন্যদের উৎসাহ দেবেন না।