Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

45খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১২ এপ্রিল ২০১৭:  বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসার সাথে জড়িত নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন যাতে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সম পর্যায়ের স্বীকৃতি দেয়া হয়।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে স্বীকৃতি দিয়েছে সরকার। যদিও কোন শর্তে সেটি হয়েছে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
কারণ, কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম এবং পরীক্ষা তারা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে সরকারের কোন ভূমিকা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক মজিবুর মনে করেন, স্বীকৃতির বিষয়টি ইতিবাচক হতে পারে যদি কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রম কিছুটা পরিবর্তন করা হয়।
কওমি মাদ্রাসা বোর্ডগুলো বিভক্ত। তাদের সিলেবাস আলাদা-আলাদা করে।
মি. রহমান বলেন, ‘তারা যদি ইসলামিক বিষয়গুলো পড়ায়, শুধুমাত্র কোরআন, হাদিস, ফার্সি, উর্দু পড়ায় – তাহলে আমি মনে করি তাদের ডিগ্রি দেয়া ঠিক হবেনা। অন্যান্য মাস্টার্স ডিগ্রি পেতে যে ধরনের বিষয়গুলো ফুলফিল (পূরণ) করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রেও সেটা করা উচিত।’
তিনি মনে করেন, কওমি মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমে সামাজিক বিজ্ঞান, অর্থনীতি, বাংলা এবং ইংরেজির মতো বিষয়গুলো যতটা সম্ভব অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
২০১৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, দেশে কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৪০০০ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ।
দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেবার জন্য সরকারের সাথে বেশ কয়েকটি বৈঠকও হয়েছে। বিভিন্ন সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে।
কওমি মাদ্রাসা যারা পরিচালনা করেন তাদের অনেকই বিভিন্ন ইসলামপন্থী দল বা সংগঠনের সাথে জড়িত। যাদের মধ্যে হেফাজতে ইসলামী অন্যতম।
কওমি মাদ্রাসাগুলোর সংগঠনের অন্যতম নেতা এবং হেফাজতে ইসলামীর অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ জানিয়েছেন, কওমি মাদ্রাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে স্বীকৃতি দেবার দাবি জানানো হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে অনেকটা একমত হয়েছে বলে তিনি ইংগিত দেন।
মি. ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘কওমি মাদ্রাসা থেকে যারা লেখাপড়া করে তারা আমাদের দেশে শিক্ষিতের হারের মধ্যে গণ্য হয় না। মানের স্বীকৃতি দেয়া হলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কওমি মাদ্রাসা যেভাবে আছে সেভাবেই চলবে। তাদের স্বাতন্ত্র্য এবং স্বকীয়তা বজায় থাকবে।’
কওমি মাদ্রাসার নেতারা মনে করেন, তাদের পরিচালিত মাদ্রাসাগুলো শুধুই ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত। এখানে অন্য কোন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করাকে তারা ‘অপ্রয়োজনীয়’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ মনে করেন।
ইসলামী শিক্ষা গ্রহণ করার জন্যই অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের কওমি মাদ্রাসায় পাঠায় বলে নেতারা মনে করেন।
তবে পাঠ্যক্রমে পরিবর্তন না আনলে শুধু স্বীকৃতি তেমন একটা কাজে লাগবে না বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক মজিবুর রহমান।
মি. রহমান বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বা ফার্সি বিভাগে বাংলা, ইংরেজি এবং অন্যান্য বিষয়গুলো সাপ্লিমেন্টারী কোর্স হিসেবে থাকে। আমি বলছি না তাদের (কওমি মাদ্রাসা) মেইন ফিলসফি থেকে সরে যেতে। থাকুক সেই ফিলসফি। কিন্তু বেসিক লেভেলে নলেজগুলো থাকা দরকার।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে বিভিন্ন পক্ষের আলোচনা হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি শেষ পর্যন্ত নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওপর।
সূত্র: বিবিসি