Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

5খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৭: আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের এখনো ১৯ মাস বাকি, কিন্তু ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দলকে এখনই তা নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। মঙ্গলবার কানসাসে কংগ্রেসের একটি শূন্য আসনের জন্য অনুষ্ঠিত “বিশেষ নির্বাচনের” ফলাফল থেকে স্পষ্ট তাঁদের এই শীর পীড়ার কারণ। কানসাস বরাবরই রিপাবলিকান প্রভাবাধীন, এই আসনটিও তাঁদের জন্য অত্যন্ত “নিরাপদ”। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই শহরে ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতেছিলেন ২৭ পয়েন্টের ব্যবধানে। কংগ্রেসম্যান মাইক পম্পেও সিআইএ-র পরিচালক নির্বাচিত হওয়ার পর এই আসনটি শূন্য হয়। রিপাবলিকান দল স্বাভাবিকভাবেই আশা করেছিল সহজেই এই আসনটি তাঁদের পক্ষে ধরে রাখা সম্ভব হবে। আসনটি তাঁরা ধরে রেখেছে ঠিকই, তবে মাত্র সাত পয়েন্টের ব্যবধানে। অর্থাৎ এই কয়েক মাসে রিপাবলিকান সমর্থন ২০ পয়েন্ট কমে এসেছে।

অধিকাংশই একমত, এই ভূমিধসের প্রধান কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই মুহূর্তে জাতীয় পর্যায়ে তাঁর সমর্থনের পরিমাণ মাত্র ৩৫ শতাংশ। রিপাবলিকানদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা এখনো অটুট থাকলেও অদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে তাঁদের অনেকেই ট্রাম্পের পক্ষে ভোট দেওয়ার কারণে নিজেদের হাত কামড়াচ্ছে। ক্ষুব্ধ ডেমোক্র্যাট ও অসন্তুষ্ট রিপাবলিকানদের সমর্থনে এই নিরাপদটি আসনটি রিপাবলিকানরা প্রায় হারাতে বসেছিল। একপর্যায়ে এমন অবস্থা দাঁড়ায় যে দুই দলের প্রার্থীর মধ্যে ব্যবধান মাত্র এক পয়েন্টে নেমে আসে। পরাজয় ঠেকাতে আতঙ্কিত রিপাবলিকান নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় তহবিল থেকে কয়েক লাখ ডলার টিভি বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে। ট্রাম্প নিজে রিপাবলিকান প্রার্থী রন এস্টেসের পক্ষসমর্থন করে রেকর্ড করা টেলিফোন বার্তা পাঠান।
সমস্যা শুধু এক কানসাসে নয়। আগামী দুই মাসে রিপাবলিকানদের আরও দুটি “নিরাপদ” আসনে প্রতিপক্ষ ডেমোক্র্যাটদের মুখোমুখি হতে হবে। এর একটি জর্জিয়ায়, অন্যটি মন্টানায়। উভয় আসনেই অপ্রত্যাশিত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রিপাবলিকানদের। জর্জিয়ায় মাত্র ৩০ বছর বয়স্ক জন অসফ তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত প্রচারণার জন্য ইতিমধ্যে জাতীয় নেতৃত্বের নজরে এসেছেন। এই রাজ্যের বাইরে থেকে বিভিন্ন উদারনৈতিক গ্রুপ অসফের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ব্যাপক প্রচারণা চালিয়েছেন তার ফলে এই রাজনৈতিক নবিশ ইতিমধ্যে ৮০ লাখ ডলারের এক নির্বাচনী তহবিল গড়ে তুলেছেন। আগাম ভোট থেকে যে হিসাবে মিলেছে তাতে আসফের খুশি হওয়ার কারণ আছে। উদ্বিগ্ন রিপাবলিকান নেতৃত্ব এখানেও শেষ মুহূর্তে বিপদ এড়াতে বাড়তি রসদ পাঠিয়েছেন। ডেমোক্র্যাটরা এখন পর্যন্ত বিশ্বাস করে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২০১৮-এর মধ্যবর্তী নির্বাচনে যে জোয়ার তাঁরা আশা করছেন, তার শুরু হবে জর্জিয়ার এই বিশেষ নির্বাচন থেকে। আগামী মঙ্গলবার যে ভোট হচ্ছে তাতে প্রার্থী রয়েছেন মোট ১৮ জন। যদি কোনো প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পায় তাহলে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন এমন দুই প্রার্থীর মধ্যে আবার ভোটগ্রহণ হবে।

আগামী মাসে মন্টানায় কংগ্রেসের শূন্য আসনের জন্য যে বিশেষ নির্বাচন হবে, তাতেও এই মুহূর্তে ভালো অবস্থায় রয়েছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী রব কুইস্ট। ঠিক প্রথামাফিক কোনো রাজনীতিবিদ নন কুইস্ট। তাঁর প্রধান পরিচয় তিনি একজন গায়ক ও ব্যাঞ্জো বাদক। বিভিন্ন প্রগতিশীল প্রশ্নে তিনি ট্রাম্প-বিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত। রক্ষণশীল কংগ্রেসম্যান রায়ান জিঙ্কে, যিনি এখন ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্য, তাঁর শূন্য স্থানে ডেমোক্রেটিক পার্টি প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।

কিস্টের প্রার্থিতা ডেমোক্র্যাটদের কতটা অনুপ্রাণিত করেছে তার প্রমাণ মেলে এই দলের তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠিত অবস্থান থেকে। মন্টানা কট্টর রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত, এখানে অনেক জেলা পর্যায়ে ডেমোক্র্যাটদের কোনো কার্যালয় নেই। কিন্তু কিস্টের প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার পর জেলে পর্যায়ে অনেকগুলো নতুন দপ্তর খোলা হয়েছে। দলের সদস্যপদ গ্রহণেরও আগ্রহ বেড়েছে।

তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনো মনে করে না মন্টানায় তাঁদের পক্ষে জেতা খুব সহজ হবে। এখানকার অধিকাংশ ভোটারই গর্ভপাত বিরোধী, আগ্নেয়াস্ত্র বহনের পক্ষে ও ভূমি ব্যবহারে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপক্ষে। এসবই রিপাবলিকানদের নিজস্ব এজেন্ডার অন্তর্গত। ডেমোক্র্যাটদের জন্য একমাত্র আশার কথা, উদারনৈতিক ডেমোক্রেটিক সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এখানে এখনো জনপ্রিয়, তাঁর সমর্থকেরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন, চাঁদাও তুলছেন তাঁরা। কিস্ট সবার জন্য সম-ভিত্তিতে স্বাস্থ্যবিমার সমর্থক, দরিদ্র এই রাজ্যের অনেক রিপাবলিকান ভোটারদের কাছেও তাঁর এই প্রস্তাব জনপ্রিয় হয়েছে।

বলাই বাহুল্য, ডেমোক্র্যাটরা এখনো কোনো “বিশেষ নির্বাচনে” জেতেনি। কানসাসে তাঁদের সামান্য ব্যবধানে হার হয়েছে, জর্জিয়া বা মন্টানায় তাঁদের জয় হবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারপরেও এই বিশেষ নির্বাচনের সূত্র ধরে ডেমোক্র্যাটরা সংগঠিত হওয়ার একটি সুযোগ পেয়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনে এমনিতেই ক্ষমতাসীন দল অধিকাংশ সময় ভোট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। ডেমোক্র্যাটরা আশা করছে, জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের প্রতি ক্রমবর্ধমান বিরুদ্ধ মনোভাবকে ব্যবহার করে তাঁরা আগামী নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভালো ফল অর্জনে সক্ষম হবে।

তবে কাজটা খুব সহজ হবে না। প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে হলে ডেমোক্র্যাটদের দরকার কমপক্ষে ২৪টি নতুন আসন। অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে অধিকাংশ রিপাবলিকানদের কর্তৃত্ব থাকায় তারা ইতিমধ্যে কংগ্রেসের নির্বাচনী মানচিত্র এভাবে এঁকে রেখেছে যে বড় ধরনের ভোটার বিদ্রোহ না হলে এই সব আসনে হাত বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। ডেমোক্র্যাটদের একমাত্র আশা, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা যেভাবে নিম্নগামী হচ্ছে ও স্বাস্থ্যবিমা ও সোশ্যাল সিকিউরিটির মতো প্রশ্নে রিপাবলিকান দলে যে রকম বিতর্কিত আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে, তার ফলে যে ট্রাম্প-বিরোধী জোয়ার উঠবে, তাতেই কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ তারা ছিনিয়ে নিতে পারবে। ইতিমধ্যে দলের নতুন নেতৃত্ব ক্ষমতা গ্রহণ করেছে। চাঁদা সংগ্রহ ও যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারেও দল উদ্যোগী হয়ে উঠেছে। ডেমোক্রেটিক জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান টম পেরেজ বলেছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পরাজয়ের প্রধান কারণ এই দল দেশের গ্রামীণ নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে দলের লক্ষ্য হবে সেই ভুলের সংশোধন।