খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৭: মাংশপেশী ও অপটিক্যাল নার্ভের জটিলতায় আক্রান্ত নাটোরের একই পরিবারের তিন সদস্য। চিকিৎসার অভাবে প্রায় মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়া নাটোর সদর উপজেলার লালমণিপুর গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক মফিজুদ্দিনের স্ত্রী জোছনা বেগম ও দুই ছেলের চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছেন স্বয়ং জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম। গঠন করেছেন তার নেতৃত্বে দুইজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে সাথে নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড। তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবুল কালাম আজাদ। আট বছরের অবহেলায় শরীরে ক্রমশ বিস্তার লাভ করা ‘অজ্ঞাত রোগটির’ ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা বলছেন এটি নিউরোলজিক্যাল সমস্যা। তাদের ধারণা, তিনজনই ‘নিউরোলজিকাল’বা ‘¯œায়ুবিক জটিলতায়’ ভুগছে।। নাটোরে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড।
এমন অবস্থায় শনিবার শারীরিক ও মানসিক ভারসাম্য ও হারানো জোছনা বেগম(৫১), প্রায় দৃষ্টিশক্তি হারানো বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম(২৪) ও বাকশক্তি হারানো ছোট ছেলে রকিবুলের(২২) রক্তসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা করেন চিকিৎসকরা। পরীক্ষা শেষে পৃথকভাবে আক্রান্ত মা ও দুই সন্তানের বর্তমান অবস্থায় উদ্বেগ জানিয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ডা. আনিসুজ্জামান জানান, আক্রান্ত তিনজনের শরীরের মাংসপেশী শুকিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। এছাড়া শরীরের হাড়গুলোর সন্ধিস্থল শক্ত হয়ে গেছে। এখন প্রয়োজন উচ্চতর চিকিৎসা।
এদিকে দৃষ্টিশক্তি হারানো বড় ছেলে জহুরুল ইসলামের ব্যাপারে চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. ফ্লোরা সালমিন সাত্তার জানান, জহুরুলের মতো তার মা ও অপর ভাইয়ের অপটিক্যাল নার্ভগুলো দূর্বল হয়ে পড়েছে যা তাদের চিরস্থায়ী অন্ধত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত তিনজনকেই অতিদ্রুত এমআরআই করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ও জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুল ইসলাম জানান, বোর্ডের পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত বিষয়গুলোর বিবেচনায় আক্রান্তদের যতদ্রুত সম্ভব রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নিউরোলজি বিভাগে ভর্তি হবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রবিবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে রোগীদের সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।
মেডিক্যাল বোর্ডের সমন্বয়ক ও নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান, ‘রোগীদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাবার প্রস্ততি নিতে বলা হয়েছে। আমরা সাধ্যমত তিনজনের সু-চিকিৎসার ব্যাপারে চেষ্টা করব। ’
শনিবার মফিজুদ্দিনের বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা অসুস্থ থাকলেও কেউ খবর নেয়নি এতদিন। দুইদিন আগে ডাক্তাররা গাড়িতে করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমাদের চিকিৎসা শুরু করে। আমারা বাঁচতে চাই’।
স্ত্রী-সন্তানদের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আকুতি জানিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে মফিজুদ্দিন বলেন, ‘চিকিৎসা করানোর মত টাকা আমার নাই। বউ-ছেলেদের এই কষ্ট আর সহ্য করতে পারছি না। আপনারা যেভাবেই হোক ওদের বাঁচান’।
তবে ইতোমধ্যে আক্রান্ত পরিবারকে ঘর নির্মাণের জন্য টিন, টিউবয়েল ও প্রতিবন্ধী দুই ভাইকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়েছে জানিয়ে নাটোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, দরিদ্র্য পরিবারটির আক্রান্ত আরেক সদস্যের জন্য খুব দ্রুত প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রায় আট বছর আগে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হন নাটোর সদর উপজেলার লালমনিপুর গ্রামের মফিজুদ্দিনের স্ত্রী জোছনা বেগম। অর্থাভাবে ঠিকমত চিকিৎসা করতে না পারায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি। এর কিছুদিন না যেতেই একই সমস্যা দেখা দেয় তার ছোট ছেলে রকিবুলের। মানসিক ভারসাম্য হারানোর পাশাপাশি তার কথাবার্তাও বন্ধ হতে থাকে। এরপর বড় ছেলে জহুরুলও একইভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই সাথে হারায় দৃষ্টিশক্তি। দারিদ্র্য আর সীমাহীন যন্ত্রণা নিয়ে দিনাতিপাত করা পরিবারটির তিন সদস্যের অসুস্থ হওয়া নিয়ে সম্প্রতি একটি সংবাদ কয়েকটি গণমাধ্যমে পরিবেশিত হয় যার সূত্রধরে পরিবারটির পাশে এগিয়ে আসে সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে চিকিৎসকগণ।