খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ১৯ এপ্রিল ২০১৭: রাজনৈতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতা ও অর্থনীতির প্রত্যেকটি খাতে ইতিবাচক প্রবণতা থাকলেও টানা নিম্নমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বিমা কোম্পানিগুলোর সিংহভাগের ডিভিডেন্ড ঘোষণা শেষ হওয়ায় লেনদেন মন্দা দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও বাজারের সাথে সম্পৃক্ত বিনিয়োগকারীরা প্রিফিট টেকিং মুডে থাকায় লেনদেনে মন্থরতা এসেছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, সূচক ও লেনদেনের টানা উত্থানে ৪ এপ্রিল রেকর্ড গড়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক। ওইদিন ডিএসই’র সার্বিক মূল্য সূচক ৫৭৭৭.১১ পয়েন্ট স্থিতি পায়। যা ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি সূচকটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সর্বোচ্চ।
এছাড়াও ৪ এপ্রিল ডিএসই’র বাজার মূলধন ৩ লাখ ৮৪ হাজার ৭৪৯ কোটি ২৮ লাখ টাকা অতিক্রম করে। যা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার পর সর্বোচ্চ।
কিন্তু ৪ এপ্রিলের পর বিগত ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ৯ কার্যদিবসেই দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক কমেছে। এ সময় বাজারের সার্বিক মূল্য সূচক কমেছে ২০৫.৫৯ পয়েন্ট।
ডিএসই’র তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ৫ এপ্রিল বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭০৮ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সর্বশেষ কার্যদিবসে (১৮ মার্চ ২০১৭) তা ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৫৮৮ কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় নেমে এসেছে। সে হিসেবে মাত্র ৯ কার্যদিবসের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে, গত ৯ কার্যদিবসের ব্যবধানে বাজারে লেনদেন কমেছে ৪০০ কোটি টাকারও টাকা বেশি। অর্থাৎ গত ৫ এপ্রিল বাজারে ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার লেনদেন হলেও সর্বশেষ গতকাল তা ৭০৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। সে হিসেবে ৯ কার্যদিবসে প্রায় ৪১০ কোটি টাকা লেনদেন কমেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ারহোল্ডার পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, সম্প্রতিক সময়ে সূচক ও লেনদেনের পতন স্বাভাবিক। এতে করে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় তাদের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ কমছে।
তিনি বলেন, সূচকের উত্থান পতন পুঁজিবাজারের ধর্ম। কিছুদিন আগেও পুঁজিবাজার ধারাবাহিক ভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে প্রফিট টেকিং করছে।
ডিএসই’র সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান শেয়ারহোল্ডার পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক মার্কেটে ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে-এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের উন্নত পুঁজিবাজারগুলোর ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বড় সমস্যা হচ্ছে, এ দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই ডে-ট্রেডার।
শুধু সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই নয়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও এখন ডে-ট্রেডিং করছে। কারণ তারা স্বল্প সময়ে সামান্য লাভে শেয়ার ছেড়ে দিতে পারছেন। এতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ থাকায় লাভের পরিমাণটাও বেশি হচ্ছে। যা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা বড় মূলধনী বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লোকসান সত্বেও এক শেয়ার ছেড়ে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করেন।
এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিনিয়োগকারীদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। তা না হয় বাজার পরিস্থিতির উন্নয়ন হবে না বলে তিনি মনে করছেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী বলেন, মূলত প্রফিট টেকিং ও পোস্ট ডিভিডেন্ড এ্যাডজাস্টমেন্টের কারণে বাজারের লেনদেনে মন্থরতা এসেছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।
তিনি বলেন, বড় ও প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা কোনো কোম্পানির শেয়ার বিক্রয় করার পর পরবর্তী বিনিয়োগের জন্য কিছু সময় নেয়। অর্থাৎ নতুন বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত সময় ছাড়া তারা বিনিয়োগ করে না। তাই লেনদেনে সামান্য মন্থরতা দেখা দিয়েছে।
এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব এইচ মজুমদার বলেন, ব্যাংকিং খাতসহ আর্থিক খাতের
কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ট মৌসুম শেষ হওয়ায় বাজারের বিনিয়োগকারীদের সামান্য নিষ্ক্রিয় দেখা দিয়েছে।