খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭: রমেল চাকমার মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাঙ্গামাটি-খাগড়াছড়ি সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে স্থানীয় বিক্ষুব্দ জনতা। এতে ওই সময়ে সড়ক দিয়ে যাবতীয় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এ ছাড়াও রমেলের মৃত্যু নির্যাতনের কারণে ঘটেছে দাবি করে রোববার রাঙ্গামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধসহ তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ইউপিডিএফ সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও স্থানীয় জনতা।
ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রাঙ্গামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরাধ ছাড়াও ২৫ এপ্রিল রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ধর্মঘট এবং ২৬ এপ্রিল নানিয়ারচরবাজার বয়কটের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে দেয়া এক বিবৃতিতে পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির দফতর সম্পাদক রোনাল চাকমা জানান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও রমেল হত্যা প্রতিবাদ কমিটি তিনদিনের এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে ঘটনাটিকে ঘিরে পাহাড়ি এলাকায় বিরাজ করছে আতংক ও উত্তেজনা। আতংকে তার আত্মীয়-স্বজনসহ গ্রামের লোকজন অনেকে নিরাপদে পালিয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে রমেল চাকমার লাশ রাঙ্গামাটির নানিয়ারচরে নেয়া হলেও ওইদিন পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়নি। শুক্রবার লাশের সৎকার নিয়ে সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতির অবমাননার অভিযোগ করে তার
উল্লেখ্য, ট্রাক পোড়ানো ও বাস লুটের অভিযোগে ৫ এপ্রিল রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর সদর থেকে রমেলকে আটক করে নিরাপত্তাবাহিনী। পরে তাকে অসুস্থ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে ভর্তি করা হয়। ১৯ এপ্রিল (বুধবার) সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রমেল চাকমা ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্্রন্ট (ইউপিডিএফ) সমর্থনপুষ্ট ছাত্র সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নানিয়ারচর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি বুড়িঘাট ইউনিয়নের হাতিমরা গ্রামের বাসিন্দা কান্তি চাকমার ছেলে।
এদিকে ঘটনার জন্য আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় জনগণসহ বিভিন্ন মহলে বিক্ষোভ ও উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। শোকে আহাজারিতে ফেটে পড়েন স্বজনরা। রমেলের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করেছে ইউপিডিএফ। তাদের দাবি রমেল মারা গেছেন শারিরীক ও অমানুষিক নির্যাতনে।
ইউপিডিএফের কেন্দ্রীয় নেতা সচিব চাকমা দাবি করে বলেন, ৫ এপ্রিল আটকের পর নির্যাতনে রমেল চাকমা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এতে আহত অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কঠোর নজরদারি ও পুলিশের প্রহরায় দুই সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন থাকার পর শেষে রমেল চাকমা মারা যায়।
এদিকে শুক্রবার দুপুরে নিজ গ্রামে রমেল চাকমার লাশ সৎকার করা হয় বলে জানা গেছে। তবে রমেল চাকমার বাবা কান্তি চাকমাসহ স্বজনরা দাবি করে বলেছেন, স্বজনদের অনুপস্থিতিতে ধর্মীয় রীতিনীতি উপেক্ষা করে লাশ পোড়ানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার এসআই এনামুল রমেল চাকমার লাশ নানিয়ারচর নিয়ে যান। সেখানে তার চাচা ও মামার কাছে রমেলের লাশ হস্তান্তর করেছেন তিনি। তারা লাশের সৎকার করেছেন। আর সুরতহাল রিপোর্টও তৈরি করেছেন এসআই এনামুল। তবে কণ্টাক্ট নম্বর সংগ্রহে না থাকায় এসআই এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নানিয়ারচর থানায় রমেল চাকমার বিরুদ্ধে ট্রাক পোড়ানো ও বাস লুটের কোনো মামলা ছিল কিনা জানতে চাইলে ওসি আবদুল লতিফ বলেন, তার বিরুদ্ধে ওই থানায় কোনো মামলা নেই। তা ছাড়া আটকের পর রমেল চাকমাকে নানিয়ারচর থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়নি।