খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২৩ এপ্রিল ২০১৭: ঠাকুরগাঁওয়ে সদর উপজেলা জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা দিবস পালিত হয়েছে। রবিবার (২৩ এপ্রিল) জাঠিভাঙ্গা গণহত্যা কল্যান ট্রাস্ট ও শুখানপুকুরী ইউনিয়ন পরিষদের আয়োজনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমিন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাহাবুব হোসেন খোকন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল মান্নান, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, মন্টু দাস, সুবত রায়, শুখানপুকুরী ইউপি চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডারেরর সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন প্রমুখ। এ সময় শহীদ বিধবাদের মাঝে উপহার সামগ্রী তুলে দেন উপজেলা প্রশাসন। উল্লেখ্য, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শুখানপুখুরি ইউনিয়নের জাটিভাঙ্গা গ্রাম। একাত্তরের ২৩ এপ্রিল ভারতে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে স্ত্রী সন্তান সহায়-সম্বল নিয়ে রওয়ানা হয়। ভোরের দিকে স্থানীয় রাজাকার তাদের পথরোধ করে টাকা পয়সা সোনা গয়না লুট করে নেয়। এরপর তাদের সবাইকে ঐ গ্রামে আটক করে রাখে। পরে রাজাকারেরা পাকসেনাদের খবর দেয়। পাকবাহিনী এসে বেলা ১০টার দিকে ৫ শতাধিক লোককে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাস ফায়ার করে পাখির মতো হত্যা করে। আশপাশের লোকজন দিয়ে লাশ নদীর পাড়ে স্তূপ করে মাটি চাপা দেয়। পরে তাদের যুবতী স্ত্রীদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালায়। যারা সহজে রাজি হয়নি তাদের অনেককে গুলি করে। ওই একই সাথে বিধবা হয় প্রায় ৩শ জন নারী। ওই সকল শহীদদের বিধবারা ৪৬ বছর ধরে কাঁদছে। কিন্তু তারা পায়নি তাদের স্বামী হত্যার বিচার ও স্বীকৃতি। এই কান্না বুকের মধ্যে চেপে রেখে টেনে নিয়ে যাচ্ছে জীবনের দুঃসহ বোঝাকে। একদিকে স্বামী হারানোর বেদনা আর অন্যদিকে জীবন যাপনের যন্ত্রণা-এ নিয়ে করুন কষ্টে তারা পার করছে দীর্ঘ ৪৬টি বছর। এদের মধ্যে অনেক বিধবা চিকিত্সার অভাবে পরলোক গমন করেছেন। আর বাকী শহীদের স্ত্রী বর্তমানে দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছেন অর্ধাহারে অনাহারে। কর্মক্ষমতা হারিয়ে সেই সব বিধবাদের অনেকেই অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। যারা বেঁচে আছেন তারা কেউ ভিক্ষে করে, কেউ বা দিনমজুরের কাজ করে নিজের জীবনটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মৃত্যু পথযাত্রী কান্দরি বেওয়া বলেন, “স্বামী হারিয়ে সন্তান নিয়ে সহ্য করেছি অনেক কষ্ট। দুই চোখে জল ঝরতে ঝরতে আজ অন্ধ হয়ে গেছি। খেয়ে না খেয়ে কোনো মতে দিন পার করছি। তবু সেই রাজাকারদের বিচার চাই। দুই চোখে দেখতে না পারলেও রাজাকারদের বিচার হলে শান্তি পাব।” জগন্নাথপুরের আশামনি বেওয়া ও জাঠিভাঙ্গা বুড়াশিব গ্রামের ভুটরী বেওয়া অভিযোগ করে বলেন, “একটি বিধবা ভাতার কার্ডে তিন মাস পরপর মাত্র ৯শ টাকা পাই। এ দিয়ে কি সংসার চলে? আর শীতের মৌসুম এলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাই একটি কম্বল। সারা বছর আর কেউ কোনো খবর রাখে না।” আমরা শেষ বয়সে একটু সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে মরেও শান্তি পাবো। ঠাকুরগাঁও ভারপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বদিউদ্দৌজা বদর জানান, গণহত্যায় শহীদদের বিধবাদের স্বীকৃতির জন্য অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও সরকার বিষয়টি নজরে নেননি। আমরা সকলে চাই ওই সকল বিধবাদের স্বীকৃতি ও তাদের স্বামী হত্যার বিচার। এই পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সব সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান উল ফেরদৌস নম্র চৌধুরী। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় জাঠিভাঙা গণহত্যার শহীদের পরিবারগুলোর স্বীকৃতি ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবো।