খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭: ঢাকার সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধসের ঘটনার চার বছর আজ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ধসে পড়ে পুরো ভবনটি। এতে ভবনের নিচে চাপা পড়ে মারা যান এক হাজার ১৭৫ জন নারী-পুরুষ।আহত হন দুই হাজারেরও বেশী মানুষ। আহতদের মধ্য কেউ হাত, কেউ পা হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়ে কোনরকমে বেচেঁ আছেন। ওই ঘটনায় নিখোজ হন অনেকে। এরমধ্য শুধূ গাইবান্ধা জেলারই ১২জন নিখোঁজ হন। এসব নিখোঁজদের পরিবারগুলোকে চারবছরেও পূণর্বাসন করা হয়নি। ফলে তাদের পরিবারের সদস্যরা দুঃখ-কষ্টকে সাথি করে বেঁচে আছেন।
জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কার্যালয় সুত্র জানায় , রানা প্লাজা ভবন ধসে গাইবান্ধার ৪৯ জন নিহত ও ১২ জন নিখোঁজ হন। আহত হন আরও অনেকে। সেসময় বিভিন্ন সেচ্ছাসেবি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েকজনকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এরপর গত চারবছরে আর কোনো আর্থিক সহায়তা তাদের কপালে জোটেনি।
ভবন ধসের ওই ঘটনায় জেলার নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে গাইবান্ধা সদর উপজেলায় তিনজন, পলাশবাড়ীতে তিনজন, সাদুল্লাপুরে পাঁচজন ও সাঘাটা উপজেলায় একজন। এখনো তাদের কোন খোঁজ মেলেনি।প্রতিবছরের ২৪ এপ্রিল আসলেই ওই পরিবারগুলোর কান্নায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন, সাদুল্লাপুর উপজেলার দক্ষিণ ভাঙ্গামোড় গ্রামের আবদুল বারী আকন্দের মেয়ে বিথী খাতুন,একই উপজেলার দামোদরপুর গ্রামের তাজুল ইসলামের স্ত্রী বুলবুলি বেগম, পূর্বদামোদরপুর গ্রামের আনিছুর রহমানের মেয়ে রাশেদা বেগম, উত্তর দামোদরপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী নুরবানু আক্তার আশা ও কিশামত দশলিয়া গ্রামের সোনা মিয়ার স্ত্রী কামনা বেগম ও সাঘাটা উপজেলার ধোপারভিটা গ্রামের মুছা মিয়ার স্ত্রী বিলকিস বেগম।গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের চাপাদহ বুড়ির খামার গ্রামের রমজান আলীর মেয়ে হালিমা খাতুন ওরফে রেশমা, একই উপজেলার ধাকুরাকুটি গ্রামের ইউনুস আলীর মেয়ে রিনা বেগম, বোয়ালি ইউনিয়নের মধ্য ফলিয়া গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের মেয়ে মুক্তা বেগম, পলাশবাড়ী উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের শফিকুল ইসলামের মেয়ে শ্যামলী খাতুন,একই উপজেলার আব্দুল কাইয়ুম ওরফে জলিল ব্যাপারীর মেয়ে নুরুন্নাহার আক্তার শিল্পী ও সাতারপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলাম বাটুর ছেলে জিল্লুর রহমান ওরফে রাফিউল ইসলাম।
সাদুল্লাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আহসান হাবীব বলেন, রানা প্লাজা ধ্বসে এই উপজেলার ২৪জন ব্যক্তি নিখোঁজ হন। এর মধ্যে ১৬জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ডিএনএ টেষ্ট রিপোর্টের মাধ্যমে আরও ৩জনের লাশ শনাক্ত হয়। এখনো পাঁচজন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।নিয়মিত স্বজনহারা পরিবারগুলোর খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
নিখোঁজ এসব ব্যক্তিদের মধ্য কয়েকটি পরিবারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিখোঁজ এসব ব্যক্তিদের বেতনের টাকায় চলতো অনেকের পরিবার। রানা প্লাজা ধসে তাদেরকে হারিয়ে সেসব পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। আর কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি বেঁচে নিয়েছেন।
বিথী খাতুনের মা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, দুই বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে বিথী সবার বড়। সংসারে অভাবের কারণে দুইমেয়ে রানা প্লাজার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতো। ভবন ধসে ছোট মেয়ে ফাহিমা প্রানে বেঁচে গেলেও বড় মেয়ে নিখোঁজ হয়। চারবছরেও তার কোনো সন্ধান পেলাম না। কোন ধরনের আর্থিক সহায়তাও পাইনি। ভবন ধ্বসের পর থেকে সে শ্বশুর বাড়ীর এলাকায় অন্যের বাসা বাড়ীতে ঝিয়ের কাজ করে জিবিকা নির্বাহ করছে।
হালিমা খাতুন ওরফে রেশমার বাবা রমজান আলী রোববার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার বয়স ৬০বছর পেরিয়ে গেছে। কর্ম করতে পারিনা। পাঁচভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট রেশমা।অন্যান্য ছেলে-মেয়েদের ভালঘরে বিয়ে দিতে পারিনাই।তারা সিলেটে পরিবার নিয়ে থাকে।খোজঁ খবরও নিতোনা। রেশমার বেতনের টাকায় সংসার চলতো। রানা প্লাজা ধসের দুইমাস আগে মেয়েটা ্ওই ভবনের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। ঘটনার কয়েকদিন আগে ফোনে বলেছিল বাবা আমি সামনের মাসের বেতন নিয়ে বাড়িতে যাব।আমার সেই মেয়েটি আর বাড়ীতে ফিরে আসেনি। সে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। এখন মেয়েটা নেই। খুব কষ্টে দিন কাটছে। কারো কাছে থেকে কোনো সহযোগিতাও পাইনি।
হালিমা খাতুন ও বিলকিছ বেগমের পরিবারের মত নিখোঁজ অন্যান্য পরিবারের সদস্যরাও কোনো আর্থিক সহায়তা পাননি।