খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭: জেসিকা চাকমা, রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলার দুর্গম ইউনিয়ন সাজেক ইউনিয়নে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। আয়-উপার্জন ও কর্মস্থানের অভাবে এ সংকট বলে জানা গেছে। প্রায় দু’য়েক মাস আগেই সেখানে খাদ্য অভাব দেখা দেয়। এখন চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারা জানান, সেখানকার খাদ্য সংকট মোকাবেলায় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অভাবগ্রস্তদের মাঝে চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। বর্তমানে সাজেক ইউনিয়নের প্রায় ৫০টি গ্রামের দুই হাজারের অধিক লোকজন খাদ্যাভাবে ভূগছেন। তাদের বেশিরভাগ মানুষ পাহাড়ি জঙ্গলের আলু ও কলাগাছ খেয়ে অর্ধাহারে অনাহারে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। তা ছাড়া বাঘাইছড়ি সদর ও খাগড়াছড়ি থেকে চাল নিয়ে সেখানে প্রতি কেজি চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৬০-৯০ টাকায়।
স্থানীয়রা জানান, ওই ইউনিয়নের উদোলছড়ি, নতুন জৌপুই, পুরান জৌপুই, নিউথাংমাং, নিউলংকর, ব্যাটলিংপাড়া, ব্যাটলিং তারুংপাড়া, কমলাপুর, লংত্যাং, অরুণপাড়া, কাছ্যাপাড়া, শিয়ালদাই, গন্ডাছড়া, থলছড়া, এগাজ্যাছড়ি, মোন আদাম, ধাব আদাম, কলকপাড়া, বাদলছড়ি, নিমুইপাড়া, হাগড়াকেজিং, দুলুছড়ি, দুলবন্যাসহ প্রভৃতি গ্রামে চরম খাদ্য সংকট চলছে।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে সাজেকে প্রতি কেজি চালের দাম ৬০-৯০ টাকা। এত টাকায় চাল কিনে খাওয়ার মতো কারও কোনো সামর্থ্য নেই তাদের। নেই কোনো আয়-উপার্জন। ফলে পাহাড়ি জঙ্গলের আলু ও কলাগাছ খেয়ে থাকতে হচ্ছে অনাহারে অর্ধাহারে।
সাজেকে খাদ্য সংকটের কথা স্বীকার করে বাঘাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা বলেছেন, তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারেন, সেখানে গত প্রায় দুইমাস ধরে খাদ্য সংকট চলছে। খবর পেয়ে এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখেন, ওইসব লোকজন ভূগছেন অর্ধাহারে অনাহারে। এতে অভাবগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য সহায়তার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি দফতরে আবেদন দেয়া হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত ইতিবাচক কোনো সাড়া মেলেনি। শেষে আমরা উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে যৌথভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অভাবগ্রস্ত পরিবারদের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ শুরু করেছি।
তিনি বলেন, শনিবার-রোববার এলাকায় গিয়ে চাল বিতরণ করা হয়। ওই সময় সাজেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নেলসন চাকমাসহ বাঘাইছড়ি উপজেলাধীন ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান দীপ্তিমান চাকমা ও ইউপি মেম্বাররা উপস্থিত ছিলেন। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৫শ’ পরিবারের মাঝে চাল বিতরণ করেছি নিজস্ব উদ্যোগে।
সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নেলসন চাকমা জানান, গত প্রায় দুইমাস আগে সাজেক এলাকাজুড়ে খাদ্য অভাব দেখা দিয়েছে। সংকট মোকাবেলায় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ এবং সাজেকসহ স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিজস্ব উদ্যোগে রোববার পর্যন্ত ৪১০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তা ছাড়া বর্তমানে সাজেকে চাল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০-৯০ টাকায়। সাজেকের খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ৬শ’ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে দূর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে লিখিত দরখাস্ত পাঠানো হয়েছে বলে জানান, সাজেক ইউপি চেয়ারম্যান।