Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

unnamed (1)

খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭: আজ ২৪ এপ্রিল ঐতিহাসিক খাপড়া ওয়ার্ড শহীদ দিবস। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন ও খাপড়াওয়ার্ডের বিপ্লবী বীর শহীদদের স্মরণ করতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ঢাকা কমিটির উদ্যোগে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় মুক্তিভবনের প্রগতি সম্মেলন কক্ষে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) ঢাকা কমিটির সভাপতি কমরেড মোসলেহ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কমরেড মানবেন্দ্র দেব এর সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রিটিশ বিরোধী কমরেড প্রসাদ রায় চৌধুরীর কন্যা কমরেড বৃত্বা রায় দীপা। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিম-লীর সদস্য কমরেড শাহ আলম, কমরেড অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড খান আহ্সান হাবীব লাভলু, ঢাকা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডা. সাজেদুল হক রুবেল, খাপড়াওয়ার্ডের আহত বিপ্লবী আব্দুস শহীদের কন্যা জয়া শহীদ, বিপ্লবীদের কথা’র সম্পাদক শেখ রফিক প্রমুখ।
বক্তারা আলোচনা সভায় বলেন, খাপড়াওয়ার্ডের বীর শহীদেরা তরুণ প্রজন্মের বিপ্লবীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ করার জন্য আগামীর সংগ্রামে অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। রাষ্ট্রকে গণবিরোধী চরিত্র থেকে শোষণ বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে মানবিক, সমাজতান্ত্রিক সমাজ রাষ্ট্র বিনির্মানের লড়াই সংগ্রামকে বেগবান করতে বর্তমান প্রজন্মের বিপ্লবীদের আগামীর সংগ্রামে চেতনার উৎস হয়ে থাকবেন।
উল্লেখ্য, ১৯৫০ সালের এই দিনে রাজশাহী জেলের খাপড়া ওয়ার্ডে কমিউনিস্ট রাজবন্দীদের ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের রক্তের হোলি খেলায় ঝরে যায় ৭টি বিপ্লবী প্রাণ। বন্দী অবস্থায় পুলিশের গুলিতে শহীদ হন কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী সুধীন ধর, বিজন সেন, হানিফ শেখ, সুখেন্দু ভট্টাচার্য, দেলোয়ার হোসেন, কম্পরাম সিং ও আনোয়ার হোসেন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতন বাড়তে থাকে। কমিউনিস্ট বন্দীদের দ্বারা ভরে যায় পূর্ববাংলার কারাগারগুলো। অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে জেলের মধ্যেই আন্দোলন শুরু করেন কমিউনিস্ট বন্দীরা। উত্তেজিত ও বেসামাল হয়ে সরকার কমিউনিস্ট বন্দীদের ওপর দমন-পীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলে কমিউনিস্ট বন্দীরা অনশন করতে থাকেন।
১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে রাজশাহী জেলে সাধারণ কয়েদীরা অনশন শুরু করলে, কমিউনিস্ট বন্দীরাও যোগ দেন। ঘানি টানানো হবে না, ভালো খাবার দেওয়া হবে- এই আশ্বাসের ভিত্তিতে ১৪ এপ্রিল অনশন প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু এরপর থেকে কমিউনিস্ট বন্দীদের ওপর জুলুম বাড়তে থাকে। ২১ এপ্রিল রাজবন্দীদের ধমক দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়, শাস্তি হিসেবে ১০ জন বন্দীকে কনডেমনড্ সেলে (ফাঁসীর আসামী যে সেলে রাখা হতো) স্থানান্তর করা হবে। কমিউনিস্ট কর্মীরা কনডেমন্ড সেলে যেতে অস্বীকৃতি জানান।
২৪ এপ্রিল সোমবার আনুমানিক সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে, সাম্প্রদায়িক মুসলিম লীগ সরকারের বিশ্বস্ত তাঁবেদার রাজশাহী জেল সুপারিন্টেনডেন্ট এডওয়ার্ড বিল দলবল নিয়ে হঠাৎ করেই খাপড়া ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েন। এক পর্যায়ে ‘কমিউনিস্টরা ক্রিমিনাল’ বলে গালি দিতে দিতে বিল ওয়ার্ড থেকে বের হন এবং বের হয়েই দরজা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। বিল বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গেই পাগলা ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। বিলের নির্দেশে সিপাহীরা বাঁশ দিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙে, জানালার ফাঁকের মধ্যে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে গুলি করতে থাকে। রক্তে ভেসে যায় খাপড়া ওয়ার্ড। দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে সিপাহী ও কয়েদী পাহারা মেটরা, আহত-নিহত নির্বিশেষে সবাইকে পেটাতে শুরু করে। এরপর বিলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ওয়ার্ডে ঢুকে আবার লাঠিপেটা শুরু করে। রক্তস্নাত খাপড়া ওয়ার্ডে ঘটনাস্থলেই ৫ জন কমরেড শহীদ হন। রাতে মৃত্যুবরণ করেন কমরেড কম্পরাম সিং আর কমরেড বিজন সেন। তাঁদেরকে হয়তো বাঁচানো যেত, কিন্তু আহতদের কোনো চিকিৎসাই হয়নি। নিরস্ত্র ৩৬ জন (সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে) বন্দীর ওপর ১৮০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল সেদিন। খাপড়া ওয়ার্ডের জীবিত প্রত্যেক বন্দীই গুলি ও লাঠিচার্জে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন।