Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

d571a44afccfd84f6114967607796391-58ff656cef529খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৭: আজ মঙ্গলবার নিকলী উপজেলার সদর, গুরুই, দামপাড়াসহ কয়েকটি এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টির কারণে পানি থেকে কেটে আনা ধান রোদের অভাবে শুকাতে না পারায় মাঠেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একেকটি ধানের স্তূপে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি ধানে প্রায় এক ইঞ্চি পরিমাণ লম্বা চারা গজানো। যে ধান তাঁদের কোনো কাজেই আসছে না। কৃষকেরা আফসোস করে বলেন, জমির ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যেত সেটাই ভালো ছিল। কিন্তু সে ধান পানিতে ডুবিয়ে পরিশ্রমের বিনিময়ে অনেক টাকা মজুরি দিয়ে কেটে এনে আরও বিপাকে পড়তে হলো। এ ধান মানুষ তো দূরের কথা কোনো হাঁস-মুরগিরও খাওয়ার উপযোগী নয়।
আজ দুপুরে নিকলী উপজেলার সদর কলেজমাঠ ও দামপাড়া কামালপুর সেতুর গোড়ায় মাঠে গিয়ে সারি সারি ধানের স্তূপ দেখতে পাওয়া যায়। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে এগুলো ধানের স্তূপ। প্রতিটা স্তূপে চারা গজিয়ে সবুজ ঘাসের স্তূপের মতো দেখা যায়, কাছে যেতেই কামালপুর এলাকার জাহেরা আক্তার এগিয়ে এসে বলেন, ‘আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। পানি আসতে দেখে দুই একর জমির প্রায় দেড় শ মণ ধান একেকটা শ্রমিককে এক হাজার টাকা করে দিয়ে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে ধান কেটে এনেছিলাম। কিন্তু গত ১৩ দিন ধরে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখা ধান চারা গজিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।’
দামপাড়া মোহরকোনা গ্রামের মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি ৪০০ মণ ধান কেটে এনে ছয় জায়গায় স্তূপ করে রাখি। কিন্তু টানা ১২ দিন বৃষ্টি থাকায় ৪০০ মণের মধ্যে মনে হয় একটা ধানও গোলায় ওঠাতে পারব না। উল্টো শ্রমিক খরচ দিয়ে সব আমার নদীতে ফেলতে হবে।’ একই কথা বললেন, নগরগ্রাম এলাকার কৃষক হারুন অল কাইয়ুম, দামপাড়ার চান্দু মিয়া, মোহরকোনার সুন্দরবানু, শাহাবুদ্দিনসহ অন্তত ২০ জন কৃষক।
নিকলী কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় এবার ১৫ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে ধান আবাদ হয়। এর মধ্যে ইতিমধ্যে ৭ হাজার ৫১৫ হেক্টর পানিতে তলিয়ে গেছে। আর কিছু ধান পানির নিচ থেকে ডুবিয়ে ও ডুবু অবস্থা থেকে কেটে আনা হয়। কিন্তু সেগুলোও রোদ না থাকায় নষ্ট হয়ে যায়। উপজেলার ১৮ হাজার ৯৭৩ জন কৃষকের প্রায় ৯৮ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলার সদর, সিংপুর, ভাটি বরাটিয়া, কারপাশা, দামপাড়া, ছাতিরচর ও গুরুই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৩০টির মতো ছোট-বড় হাওর পানিতে তলিয়ে যায়। উঁচু এলাকার কিছু জমি এখনো ভেসে থাকলেও সেগুলো ডুবু ডুবু অবস্থায় রয়েছে। বৃষ্টি না থামলে সেগুলোও দু-এক দিনের মধ্যে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

গত সোমবার উজানের পানির ঢলে ও অতিবৃষ্টির কারণে দামপাড়া এলাকার সাতালিয়ার বিল তলিয়ে ৩০০ হেক্টর জমির ধান তলিয়ে যায়।

নিকলী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ হারুন-অর রশিদ বলেন, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে কিছু জমি কৃষকেরা কেটে আনতে পারলেও চারা গজিয়ে সব ধান নষ্ট হয়ে গেছে। যদি এখন রোদও ওঠে, তবু এসব ধানের চালের পুষ্টিগুণ তো থাকবেই না বরং তেতো লাগবে। অবস্থা যদি এ রকম থাকে তাহলে বাকি ধান কৃষকের গোলায় ওঠা সম্ভব না-ও হতে পারে।