Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৭: 29বিদেশ থেকে নৌপথে বাংলাদেশে অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনার পরিকল্পনা করছিল নব্য জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপ। হাতিয়াসহ উপকূলীয় অঞ্চলে এজন্য তাদের বেশ কিছু ট্রলার রয়েছে এবং জাহাজগুলোতেও তারা নিজেদের লোক রিক্রুট করার চেষ্টা করছিল। বৃহস্পতিবার রাতে সাভারে একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্যই পেয়েছেন র‌্যাব সদস্যরা।

তদন্ত করতে গিয়ে র‌্যাব জানতে পারে গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলার কয়েকবছর আগে থেকেই নিহত জঙ্গিনেতা তামিম চৌধুরীর সঙ্গে একজন ধর্মান্তরিত মুসলামানের নিয়মিত যোগাযোগ হতো। তারা এক সঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করে নাশকতার পরিকল্পনাও করেছিলেন।
পরে র‌্যাব নিশ্চিত হয় ওই ব্যক্তির নাম তামিম দ্বারী ওরফে আব্দুল্লাহ আল হাসান ওরফে আজিজুর রহমান ওরফে আব্দুল্লাহ আল জাফরী ওরফে আমির হামজা ওরফে আল হুজাইফা। ধর্মান্তরিত হওয়ার আগে তার নাম ছিল গৌরাঙ্গ কুমার মন্ডল। এসব তথ্যের ভিত্তিতেই তামিম দ্বারীকে ধরতে তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব-৪।

গোপন তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে সাভারে একটি বাসে তল্লাসী চালিয়ে তামিম দ্বারীকে (৩২) দুই সহযোগীসহ আটক করে র‌্যাব-৪। আটক অন্য দুই সদস্যরা হলেন— কামরুল হাসান ওরফে কাজল ওরফে নুরুদ্দিন (২৬) ও মোস্তফা মজুমদার ওরফে শিহাব ওরফে হামজা (৩২)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি, ২টি ম্যাগজিন, প্রায় এক কেজি প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভসহ আইইডি তৈরির সরঞ্জামাদি, ৩টি চাকু, ১টি চাপাতি, ১টি ল্যাপটপসহ বিভিন্ন বৈদেশিক মূদ্রা উদ্ধার করা হয়।

শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এসব তথ্য জানান।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, গ্রেফতাররা তামিম-সারোয়ার গ্রুপের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছে। হলি আর্টিসানে হামলা পরবর্তী বেশ কিছু অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ অনেকেই মারা যায়। নেতৃত্বশূন্য দলকে পুনরায় সংগঠিত করতে চেষ্টা করছিল এই তামিম দ্বারী। সে যে কোনো সময় রাজধানীতে প্রবেশ করতে পারে এমন তথ্যের ভিত্তিতে সম্ভাব্য সকল স্থানে নজরদারী বৃদ্ধি করে র‌্যাব। পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সাভারে ঝিটকা-গাবতলীগামী ভিলেজ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাসী চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়।

তিনি আরো জানান, গত বছরের ৮ অক্টোবর র‌্যাবের অভিযানে পালানোর সময় নিহত হন জঙ্গিনেতা সারোয়ার। পরে তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। সেসব নথিপত্র বিশ্লেষণ করে এ পর্যন্ত সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ২৫ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের মধ্যে ১৪ জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেসব নথিপত্রেই তামিম চৌধুরীর বিশ্বস্ত তামিম দ্বারীর নাম পাওয়া যায়। সে জঙ্গিবাদে আগ্রহী যুবকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ তামিম চৌধুরীকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন নাশকতার পরামর্শ দিতো।

র‌্যাব জানায়, তামিম দ্বারী মেরিন একাডেমিতে পড়াশোনার পর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বাংলার কাকলীসহ বিভিন্ন জাহাজে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। একই জাহাজে কর্মরত আবু বক্করের মাধ্যমে তিনি জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং তামিম চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে, তামিম দ্বারীর বিদেশ থেকে নৌপথে অস্ত্র-গোলাবারুদ আনার পরিকল্পনা ছিল। এজন্য ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে বিভিন্ন জাহাজে তাদের লোক রিক্রুটের চেষ্টা করেন তিনি। এ বিষয়ে নিহত তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মধ্যে বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়।

গ্রেফতার মোস্তফা মজুমদার কুমিল্লা পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানি বাংলাদেশে উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। কর্মজীবনে এসে একই মনোভাবাপন্নদের সংস্পর্শে এসে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

আর গ্রেফতার কামরুল হাসানের বাবা বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত। ২০০৬ সালে কুমিল্লার একটি মাদ্রাসায় অধ্যায়নকালে তিনি জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট হন। ২০১৪ সালে তামিম চৌধুরী ও তামিম দ্বারীর মাধ্যমে জিহাদে উদ্বুদ্ধ হন। ২০১৬ সালের নভেম্বরে তিনি হিজরতের জন্য গৃহত্যাগ করেন।