Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

------26খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৭: টাকার বিপরীতে হু হু করে বাড়ছে ডলারের দাম। পণ্য আমদানির জন্য গতকাল গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ডলার কিনতে ব্যয় হয়েছে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৩০ পয়সা। যদিও আন্তঃব্যাংক ব্যাংকে এ দর ছিল ৭৯ টাকা ৯০ পয়সা। গ্রাহক পর্যায়ে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে কমতে তলানিতে নামছে। কমে যাচ্ছে রফতানি আয়। কিন্তু আমদানি ব্যয় কমছে না। একই সাথে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ করা হয়েছিল তার মেয়াদ শেষে পরিশোধ শুরু হয়েছে। সব মিলে বাজারে ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানি পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে বাজারে ডলার ছাড়তে হবে, অন্যথায় আমদানি ব্যয় বেড়ে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করছেন। জানা গেছে, মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। আমদানি দায় পরিশোধ করতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কেনেন গ্রাহকেরা। সাধারণত আন্তঃব্যাংকের সাথে গ্রাহক পর্যায়ে ডলারের দামের পার্থক্য এক টাকার ওপরে হওয়ার কথা নয়। কিন্তু গতকাল গ্রাহক পর্যায়ের সাথে আন্তঃব্যাংকের ডলারের দামের পার্থক্য চার টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গতকাল দু’টি বিদেশী ব্যাংক গ্রাহক পর্যায়ে অর্থাৎ আমদানিকারকদের কাছে ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ৮৩ টাকা ৩০ পয়সা দরে। আর স্থানীয় ব্যাংকগুলো আমদানি পর্যায়ে ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ৮২ টাকা ৯০ পয়সা দরে। অথচ এক বছর আগে তা ছিল ৭৯ টাকা। কেন ডলারের সঙ্কট : ব্যাংকাররা জানিয়েছেন অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দেদারচ্ছে আসছে বিদেশী ঋণ। আগে শুধু রফতানিকারকরাই এ ঋণের সুবিধা পেতেন। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতিমালা আরো শিথিল করে। এখন রফতানিকারকদের বাইরেও সার আমদানি, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অফশোর ব্যাংকিংয়ের সুবিধা নিচ্ছে। আমদানিকারকরা যখন বৈদেশিক ঋণ নিয়ে পণ্য আমদানি করছে, তখন ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করত তা বাজারে উদ্বৃত্ত ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো ইচ্ছামাফিক নিজেদের কাছে বৈদেশিক মুদ্রা ধরে রাখতে পারে না। এ জন্য নির্ধারিত সীমা বেঁধে দেয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। নীতিমালা অনুযায়ী একটি ব্যাংক দিন শেষে তার মোট মূলধনের ১৫ শতাংশ সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করতে পারে। দিনশেষে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ডলার থাকলে বাজারে বিক্রি করছে হবে। বাজারে বিক্রি করতে না পারলে ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে জরিমানা গুনতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের মান ধরে রাখার জন্য গত কয়েক বছরে বাজার থেকে উদ্বৃত্ত ডলার কিনে রিজার্ভের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু এখন রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে দেড় শ’ কোটি ডলার আসত এখন তা ১০০ কোটি ডলারের নিচে নেমে গেছে। অন্য দিকে রফতানি আয়ও কমে গেছে। এ দিকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ নেয়া হয় সর্বোচ্চ ছয় মাস মেয়াদে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ৯০০ কোটি ডলারের ঋণ রয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। এ ঋণও ধারাবাহিকভাবে মেয়াদ শেষে পরিশোধ শুরু হয়েছে। সব মিলে এক দিকে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ না বেড়ে বরং কমে গেছে। ফলে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সঙ্কট মেটানোর উপায় : ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণ এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) প্রেসিডেন্ট, ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং মেঘনা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও এমডি মোহাম্মদ নূরুল আমিন গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, আমাদের রেমিট্যান্স কমে গেছে। রফতানি আয়ও কমে যাচ্ছে। কিন্তু আমদানি ব্যয় কমছে না। ফলে এর প্রভাব পড়েছে মুদ্রাবাজারে। তিনি মনে করেন, এ পরিস্থিতি সাময়িক। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন রয়েছে। বাজার বেশি খারাপ হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করেই হোক আর যেকোনো পদ্ধতি অবলম্বন করেই হোক তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে হস্তক্ষেপ করে থাকে। বাজারে যখন উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তখন তা কিনে নিয়ে বাজারকে স্বাভাবিক রাখে। এখন ডলারের সঙ্কট। কিন্তু এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে ডলার ছাড়ছে না। তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ না করলে অর্থাৎ বাজারে ডলার না ছাড়লে আমদানি পণ্যের দাম আরো বেড়ে যাবে। এতে মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দেবে বলে তিনি মনে করেন।