খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ১ মে, ২০১৭: ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামে আল রাজি মোস্তাকিম রাজু দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়া প্রেমে জড়িত। কিছুদিন যাবত ওই নারী রাজুকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু হঠাৎ বিয়ে করতে গেলে টাকার প্রয়োজন। এছাড়া অনেক টাকা দেনার মধ্যে ছিলেন রাজু।
তাই মোটা অঙ্কের টাকা কীভাবে পাওয়া যাবে সে জন্য পরিকল্পনা শুরু করেন রাজু। সেই অনুযায়ী প্রতিবেশী মাসুদ রানার ছেলে আব্দুল কাফি তুষারকে (৩) অপহরণ করে মুক্তিপণের চিন্তা করেন তিনি। কিন্তু রাজুর পক্ষে একাই অপহরণ করা সম্ভব হবে না বলে পারিবারিক কোলহের জেরকে কাজে লাগিয়ে ও টাকার লোভ দেখিয়ে তুষারের মামা সেতু, চাচাতো ভাই শান্তকে ম্যানেজ করেন রাজু।
রাজুর পরিকল্পনা অনুয়ায়ী গত ২৬ এপ্রিল বুধবার মাসুদ রানার ছেলে তুষারকে অপহরণ করা হয়। সেই অপহরণের বিষয়টি প্রতিবেশী চাচা সিরাজুল ইসলাম টের পেলে রাজুর কাজে ফায়দা নেয়ার জন্য তুষারকে জিনে নিয়ে গেছে বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালায়। দুই দিনের মধ্যে তুষার বাড়িতে ফেরত আসবে বলে তুষারের বাবা মাসুদ রানাকে জানান সিরাজুল।
অপহরণের আগে শিশু তুষারের মামা তার মায়ের মোবাইল চুরি করেন মুক্তিপণ দাবির জন্য। অপহরণের দিন সকালে প্রতিবেশী চাচা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতে গিয়েছিল তুষার। ওই বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তুষারকে সিরাজুল ইসলামের ছেলে শান্তর (১৫) কোলে দেখা যায়। সেদিনই তুষারকে অপহরণ করা হয়।
নিখোঁজের ঘণ্টা ছয়েক পর ওই চুরি হওয়া মুঠোফোন দিয়ে তুষারের বাবার কাছে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন রাজু। পরে তুষারের বাবা মাসুদ রানা রানীংশকৈল থানায় অপহরণ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। বিষয়টি টের পেয়ে অপহৃতরা শিশু তুষারকে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে একটি বস্তায় ভরে হত্যার উদ্দেশ্যে অন্যস্থানে নিয়ে যায়। পরে একটি ঘরে রাজু, সেতু, শান্ত ও রিপনসহ গলা ও হাতের রগ কেটে হত্যা করে শিশু তুষারকে।
গতকাল রোববার ঠাকুরগাঁও নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতের বিচারক ফারহানা আক্তার খানের কাছে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে এভাবেই জবানবন্দি দিয়েছেন তুষারের মামা সেতু। পরে আদালত হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক ৯ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
গত ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার মুনিষগাঁও গ্রামে শিশুটির মরদেহ বাড়ির পাশের একটি খড়ের গাদা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকা সন্দেহে মূলহোতাসহ ৯ জনকে আটক করে।
সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার ফারহাত আহমেদ শিশু তুষার হত্যায় ৯ জনকে আটক করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেওয়ান লালন আহম্মেদ, রানীশংকৈল থানা পুলিশের সার্কেল এসপি মো. হাসিব, সদর থানা পুলিশের ওসি মশিউর রহমান, ওসি-তদন্ত মান্নান প্রমুখ।